আন্তর্জাতিক ডেস্ক
সৌদি আরবের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের তাবুক ও হাইল অঞ্চলে বিরল তুষারপাতের ঘটনা ঘটেছে। গত শুক্রবার এসব অঞ্চলের পাহাড়ি এলাকাগুলো হঠাৎ করে তুষারে ঢেকে যায়। সাধারণত মরুপ্রধান ও শুষ্ক আবহাওয়ার জন্য পরিচিত দেশটিতে এই তুষারপাত স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য এক ব্যতিক্রমী ও অস্বাভাবিক শীতকালীন অভিজ্ঞতা তৈরি করেছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, চলতি সপ্তাহে তাপমাত্রা হঠাৎ কমে যাওয়ার পাশাপাশি সক্রিয় শীতকালীন আবহাওয়া ব্যবস্থার প্রভাবে তাবুক ও হাইল অঞ্চলের উঁচু পাহাড়ি এলাকাগুলোতে তুষার জমতে শুরু করে। বিশেষ করে জর্ডান সীমান্তসংলগ্ন জাবাল আল লাওজ এলাকায় পাহাড়ের চূড়াগুলো সম্পূর্ণভাবে তুষারে আচ্ছাদিত হয়ে পড়ে। এই অঞ্চলে তুষারপাত সাধারণত খুবই বিরল এবং কয়েক বছর পরপর সীমিত আকারে দেখা যায়।
তুষারপাতের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর আশপাশের এলাকার মানুষ পরিবার ও বন্ধুদের নিয়ে পাহাড়ি অঞ্চলে জড়ো হতে শুরু করে। অনেকেই তুষারঢাকা পরিবেশ উপভোগ করতে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেন। সেখানে দেখা যায়, মানুষ বরফের ওপর হাঁটছে, ছবি তুলছে এবং শীতকালীন আবহাওয়ায় সময় কাটাচ্ছে। কেউ কেউ ঐতিহ্যবাহী নৃত্য পরিবেশন করেন, যা মরুভূমিপ্রধান অঞ্চলের প্রেক্ষাপটে এক ভিন্ন চিত্র তুলে ধরে।
জাবাল আল লাওজ সৌদি আরবের অন্যতম উঁচু পাহাড়ি শৃঙ্গ হিসেবে পরিচিত। শীতকালে এখানে মাঝে মাঝে তাপমাত্রা শূন্যের কাছাকাছি নেমে আসে। এবারের তুষারপাতের ফলে পাহাড়ের ঢাল ও চূড়ায় সাদা বরফের স্তর জমে যায়। অনেককে তাৎক্ষণিকভাবে তৈরি সরঞ্জাম ব্যবহার করে ঢাল বেয়ে নামতে দেখা যায়, যা ওই অঞ্চলের মানুষের জন্য বিরল অভিজ্ঞতা।
এদিকে হাইল অঞ্চলের বিভিন্ন অংশ এবং এর পশ্চিমাঞ্চলেও তুষারপাতের খবর পাওয়া গেছে। পাহাড়ি ও উঁচু এলাকায় অল্প থেকে মাঝারি মাত্রার তুষার জমেছে বলে জানা গেছে। একই সঙ্গে রাজধানী রিয়াদের উত্তরে আল ঘাত এলাকাতেও হালকা তুষারপাত ও শিলাবৃষ্টির চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। এসব অঞ্চলের বাসিন্দারা জানান, শীতকালীন এই আবহাওয়া সাধারণ সময়ের তুলনায় অনেকটাই ব্যতিক্রমী।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের মতে, মধ্যপ্রাচ্যে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আবহাওয়ার ধরণে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শীত মৌসুমে কখনো কখনো ভূমধ্যসাগরীয় শীতল বায়ুপ্রবাহ ও সক্রিয় নিম্নচাপ সৌদি আরবের উত্তরাঞ্চলে প্রবেশ করলে তাপমাত্রা দ্রুত কমে যায় এবং পাহাড়ি এলাকায় তুষারপাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়। তবে এই ধরনের তুষারপাত কয়েক দশকের মধ্যে খুব কমই দেখা গেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
তুষারপাতের কারণে কোনো বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি বা যোগাযোগব্যবস্থায় বিঘ্নের খবর পাওয়া যায়নি। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ পাহাড়ি এলাকায় ভ্রমণকারীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে এবং আবহাওয়া পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রেখেছে। বিশেষ করে রাতের বেলায় তাপমাত্রা আরও কমে যাওয়ায় রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এই বিরল তুষারপাত সৌদি আরবের জলবায়ু ও আবহাওয়া পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে আলোচনা সৃষ্টি করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভবিষ্যতে এমন অস্বাভাবিক আবহাওয়ার ঘটনা আরও ঘন ঘন ঘটতে পারে। তাই পাহাড়ি ও উত্তরাঞ্চলীয় এলাকাগুলোতে শীতকালীন আবহাওয়ার সম্ভাব্য প্রভাব বিবেচনায় রেখে প্রস্তুতি ও সতর্কতা জোরদার করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।


