উত্তর ওয়াজিরিস্তানে সেনা ক্যাম্পে আত্মঘাতী হামলা, চার পাকিস্তানি সেনা নিহত

উত্তর ওয়াজিরিস্তানে সেনা ক্যাম্পে আত্মঘাতী হামলা, চার পাকিস্তানি সেনা নিহত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের উত্তর ওয়াজিরিস্তানে একটি সেনা স্থাপনায় আত্মঘাতী ও সশস্ত্র হামলায় চারজন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছেন। এ ঘটনার পর কূটনৈতিক পদক্ষেপ হিসেবে ইসলামাবাদে নিযুক্ত আফগানিস্তানের উপ-রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) উত্তর ওয়াজিরিস্তানের একটি সামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী ও কয়েকজন সশস্ত্র হামলাকারী সমন্বিত আক্রমণের চেষ্টা চালায়। নিরাপত্তা সূত্র অনুযায়ী, হামলাকারীরা সেনা ক্যাম্পে প্রবেশের চেষ্টা করলে সেখানে দায়িত্বরত সেনারা তা প্রতিহত করেন। এ সময় সন্ত্রাসীদের বিস্ফোরণ ও গুলির আঘাতে চারজন সেনা সদস্য প্রাণ হারান। এরপর ঘটনাস্থলে উভয় পক্ষের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি শুরু হয়, যা কয়েক ঘণ্টা ধরে চলে। নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে পাঁচজন হামলাকারী নিহত হন বলে জানানো হয়েছে।

ঘটনার পরদিন শনিবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, উত্তর ওয়াজিরিস্তানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি ক্যাম্পে সন্ত্রাসী সংগঠন ‘খারিজি গুল বাহাদুর গ্রুপ’-এর হামলার তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, হামলায় চারজন পাকিস্তানি সেনা সদস্য নিহত হওয়ায় সরকার গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে এবং পাকিস্তানের অবস্থান স্পষ্ট করতে আফগান কূটনৈতিক মিশনের উপ-প্রধানকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়েছে।

পাকিস্তানের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, দেশটির সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে সক্রিয় বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আফগান ভূখণ্ড ব্যবহার করে পাকিস্তানে হামলা চালিয়ে আসছে। ইসলামাবাদ দীর্ঘদিন ধরেই দাবি করে আসছে, আফগানিস্তানে আশ্রয় নেওয়া এসব সশস্ত্র গোষ্ঠী পাকিস্তানের নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি তৈরি করছে। সাম্প্রতিক এই হামলার ঘটনাও সেই উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে বলে মনে করছে দেশটির নীতিনির্ধারক মহল।

উত্তর ওয়াজিরিস্তানসহ আফগান সীমান্তবর্তী খাইবার পাখতুনখাওয়া ও বেলুচিস্তানের বিভিন্ন এলাকায় সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পাকিস্তানি সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রায় প্রতি সপ্তাহেই এসব এলাকায় সন্ত্রাসী হামলায় হতাহতের ঘটনা ঘটছে। এসব হামলার লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে সেনা টহল, চেকপোস্ট ও সামরিক স্থাপনা।

এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ধারাবাহিকভাবে অভিযান জোরদার করেছে। সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীদের অবস্থান চিহ্নিত করে বিভিন্ন এলাকায় গোয়েন্দা তথ্যভিত্তিক অভিযান চালানো হচ্ছে। নিরাপত্তা বাহিনীর দাবি, এসব অভিযানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সন্ত্রাসী নিহত বা গ্রেপ্তার হয়েছে এবং তাদের অবকাঠামো ধ্বংস করা সম্ভব হয়েছে। তবে হামলার ধারাবাহিকতা পুরোপুরি বন্ধ না হওয়ায় নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যকার সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, সন্ত্রাসবাদ দমন এবং পারস্পরিক আস্থার ঘাটতি এই সংকটকে আরও জটিল করে তুলছে। দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক যোগাযোগ থাকা সত্ত্বেও নিরাপত্তা ইস্যুতে পারস্পরিক অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সাম্প্রতিক হামলার পর আফগান কূটনীতিককে তলব করার ঘটনা এই উত্তেজনার নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

পাকিস্তান সরকার বলছে, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে প্রতিবেশী দেশগুলোর সহযোগিতা অপরিহার্য। একই সঙ্গে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী সীমান্তবর্তী এলাকায় সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে। উত্তর ওয়াজিরিস্তানের সর্বশেষ হামলার প্রেক্ষাপটে ভবিষ্যতে কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা পর্যায়ে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়, সেদিকে নজর রাখছেন সংশ্লিষ্টরা।

আন্তর্জাতিক শীর্ষ সংবাদ