আগামী বছর ই-রিটার্ন ব্যবস্থায় যুক্ত হচ্ছে করদাতাদের ব্যাংকিং তথ্য

আগামী বছর ই-রিটার্ন ব্যবস্থায় যুক্ত হচ্ছে করদাতাদের ব্যাংকিং তথ্য

অর্থনীতি ডেস্ক

আগামী বছর থেকে আয়কর রিটার্ন দাখিলের ইলেকট্রনিক বা ই-রিটার্ন ব্যবস্থায় করদাতাদের ব্যাংকিং তথ্য সংযুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান। রিটার্ন দাখিল প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ, সহজ ও তথ্যভিত্তিক করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে রিটার্ন দাখিলের ব্যবস্থাও চালুর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন তিনি।

রবিবার (২১ ডিসেম্বর) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়কর রিটার্ন দাখিল সাপোর্টিং বুথের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এনবিআর চেয়ারম্যান এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, ডিজিটাল ব্যবস্থার সম্প্রসারণের মাধ্যমে কর ব্যবস্থাপনাকে আধুনিক করা সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। এর অংশ হিসেবে ই-রিটার্ন ব্যবস্থায় ব্যাংকিং তথ্য যুক্ত করা হলে করদাতাদের আয় ও লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য আরও নির্ভুলভাবে যাচাই করা সম্ভব হবে। এতে কর ফাঁকি ও তথ্যের কারচুপি কমবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

এনবিআর চেয়ারম্যানের ভাষ্য অনুযায়ী, ব্যাংকিং তথ্য যুক্ত হলেও করদাতাদের ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। তথ্য সুরক্ষা ও গোপনীয়তা রক্ষায় প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। করদাতাদের আস্থা অর্জন ছাড়া ডিজিটাল কর ব্যবস্থার সাফল্য সম্ভব নয়—এ বিষয়টি মাথায় রেখেই নতুন উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হবে বলে উল্লেখ করেন এনবিআর চেয়ারম্যান।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বর্তমানে আয়কর ও ভ্যাট ব্যবস্থায় তথ্যের অসামঞ্জস্য ও কারচুপি রাজস্ব আহরণের একটি বড় বাধা। এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আয়কর ও ভ্যাট আদায়ের পুরো প্রক্রিয়া যদি সম্পূর্ণভাবে অনলাইনে আনা যায়, তাহলে কর আদায় ও অডিট—উভয় ক্ষেত্রেই স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বাড়বে। অনলাইন ব্যবস্থায় করদাতাদের সরাসরি অংশগ্রহণ নিশ্চিত হলে সরকারের রাজস্ব আয়ও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

তিনি আরও জানান, এনবিআর ইতোমধ্যে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে আয়কর রিটার্ন দাখিলের সম্ভাব্যতা যাচাই ও কারিগরি প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছে। আগামী বছর করদাতাদের জন্য একটি নির্ধারিত অ্যাপ চালু করার লক্ষ্য রয়েছে। এই অ্যাপের মাধ্যমে রিটার্ন দাখিল, কর পরিশোধের তথ্য যাচাই এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা পাওয়ার সুযোগ থাকবে। এতে বিশেষ করে নতুন ও তরুণ করদাতাদের জন্য রিটার্ন দাখিল প্রক্রিয়া সহজ হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

চলতি ২০২৫–২৬ করবর্ষে অনলাইন রিটার্ন দাখিলের অগ্রগতির তথ্য তুলে ধরে এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, এ পর্যন্ত প্রায় ২৬ লাখ করদাতা অনলাইনে রিটার্ন জমা দিয়েছেন। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫০ হাজার করদাতা ই-রিটার্ন দাখিল করছেন। এই প্রবণতা ডিজিটাল কর ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আগ্রহ ও আস্থার প্রতিফলন বলে মনে করছেন তিনি।

রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘদিন ধরে ম্যানুয়াল প্রক্রিয়া, সীমিত তথ্যভান্ডার এবং জনবলনির্ভর অডিট ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ব্যাংকিং তথ্য সংযুক্তির মাধ্যমে করদাতাদের প্রকৃত আয় নির্ধারণ সহজ হবে এবং ঝুঁকিভিত্তিক অডিট ব্যবস্থার কার্যকারিতা বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর ফলে কর প্রশাসনের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং করজালের আওতা সম্প্রসারণে ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ই-রিটার্ন ব্যবস্থায় ব্যাংকিং তথ্য সংযোজন ও অ্যাপভিত্তিক সেবা চালু হলে কর ব্যবস্থাপনায় ডিজিটাল রূপান্তর আরও গভীর হবে। তবে এর সফল বাস্তবায়নের জন্য তথ্য সুরক্ষা, প্রযুক্তিগত অবকাঠামো এবং করদাতাদের প্রশিক্ষণের বিষয়গুলো সমান গুরুত্ব দিয়ে দেখার প্রয়োজন রয়েছে। এনবিআরের ঘোষিত উদ্যোগগুলো বাস্তবায়িত হলে ভবিষ্যতে দেশের রাজস্ব আহরণ ব্যবস্থায় কাঠামোগত পরিবর্তনের সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।

অর্থ বাণিজ্য শীর্ষ সংবাদ