ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি হত্যা মামলার প্রধান আসামির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি হত্যা মামলার প্রধান আসামির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি হত্যা মামলার প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। রোববার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আওলাদ হোসাইন মোহাম্মদ জুনায়েদের আদালত তদন্ত সংস্থার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের প্রসিকিউশন বিভাগের উপকমিশনার মিয়া মোহাম্মদ আশিস বিন হাছান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আদালতে দাখিল করা আবেদনে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা, ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ উল্লেখ করেন, এজাহারনামীয় পলাতক আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ যেকোনো সময় বাংলাদেশ ত্যাগ করে বিদেশে পালিয়ে যেতে পারেন—এমন তথ্য গোয়েন্দা সূত্রে পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় স্থল, নৌ ও বিমানবন্দর ব্যবহার করে তার দেশত্যাগের সম্ভাবনা রয়েছে। মামলার সুষ্ঠু তদন্ত এবং আসামিকে গ্রেপ্তারের স্বার্থে তার বিদেশ গমন রোধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। শুনানি শেষে আদালত আবেদনটি মঞ্জুর করেন।

এই মামলার সূত্রপাত ঘটে গত ১৪ ডিসেম্বর, যখন ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের বাদী হয়ে শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে ভুক্তভোগীর মৃত্যুর পর মামলাটিতে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা সংযোজন করা হয়। সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যমতে, মামলায় এ পর্যন্ত মোট নয়জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রয়েছেন প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদের বাবা মো. হুমায়ুন কবির ও মা মোসা. হাসি বেগম, তার স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমা, শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ সিপু, রেন্ট-এ-কার ব্যবসায়ী মো. নুরুজ্জামান নোমানী ওরফে উজ্জ্বল, সহযোগী মো. কবির এবং ভারতে পালাতে সহায়তাকারী হিসেবে অভিযুক্ত সিবিউন দিউ ও সঞ্জয় চিসিম। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হুমায়ুন কবির ও হাসি বেগম আদালতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। রিমান্ড শেষে নুরুজ্জামান নোমানীকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে এবং অন্যান্য কয়েকজন আসামি বর্তমানে রিমান্ডে রয়েছেন।

মামলার এজাহারে বর্ণিত ঘটনার বিবরণ অনুযায়ী, গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর মতিঝিলে জুমার নামাজ আদায় শেষে নির্বাচনী প্রচারণা কার্যক্রম শেষ করেন শরিফ ওসমান হাদি। পরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে যাওয়ার পথে দুপুর আনুমানিক ২টা ২০ মিনিটে পল্টন মডেল থানাধীন বক্স কালভার্ট এলাকায় পৌঁছালে মোটরসাইকেলে থাকা দুষ্কৃতকারীরা হত্যার উদ্দেশ্যে তার বহনকারী অটোরিকশাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।

চিকিৎসকরা তাৎক্ষণিকভাবে অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। অবস্থার অবনতি হলে ১৫ ডিসেম্বর তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ ডিসেম্বর শরিফ ওসমান হাদি মারা যান। তার মৃত্যুর পর ঘটনাটি রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয় এবং দ্রুত তদন্ত ও দোষীদের বিচারের দাবি ওঠে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে পরিকল্পনা, অস্ত্রের উৎস এবং পালিয়ে যাওয়ার সহায়তাকারীদের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মামলার তদন্ত এখনো চলমান রয়েছে এবং আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ ও আলামত সংগ্রহের মাধ্যমে ঘটনার পূর্ণ চিত্র উদ্ঘাটনের চেষ্টা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করেছেন, প্রধান আসামির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার ফলে তাকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা সহজ হবে এবং মামলার বিচার প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ