ডেলাওয়্যার সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ইলন মাস্কের সম্পদ ৭৪৯ বিলিয়ন ডলারে, শীর্ষ ধনীর অবস্থান আরও সুদৃঢ়

ডেলাওয়্যার সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ইলন মাস্কের সম্পদ ৭৪৯ বিলিয়ন ডলারে, শীর্ষ ধনীর অবস্থান আরও সুদৃঢ়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ডেলাওয়্যার সুপ্রিম কোর্ট টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্কের শেয়ার অপশন পুনর্বহালের নির্দেশ দেওয়ার পর তার ব্যক্তিগত সম্পদের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফোর্বসের বিলিয়নেয়ার সূচক অনুযায়ী, শুক্রবার রাতে মাস্কের মোট সম্পদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে আনুমানিক ৭৪৯ বিলিয়ন ডলারে। আদালতের এ রায়ের ফলে আগে বাতিল হওয়া প্রায় ১৩৯ বিলিয়ন ডলার মূল্যের শেয়ার অপশন আবার কার্যকর হওয়ায় তার সম্পদে এই বড় উল্লম্ফন ঘটে।

২০১৮ সালে টেসলার পরিচালনা পর্ষদ ইলন মাস্কের জন্য যে বেতন-ভাতা ও শেয়ার অপশনভিত্তিক পারিশ্রমিক প্যাকেজ অনুমোদন করেছিল, সেটি করপোরেট ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত চুক্তিগুলোর একটি হিসেবে পরিচিত। সে সময় এ প্যাকেজের আনুমানিক মূল্য ধরা হয়েছিল ৫৬ বিলিয়ন ডলার। প্যাকেজটির মূল বৈশিষ্ট্য ছিল, টেসলার বাজারমূল্য, রাজস্ব ও পরিচালন মুনাফা নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করলে মাস্ক ধাপে ধাপে শেয়ার অপশন পাবেন।

তবে প্রায় দুই বছর আগে ডেলাওয়্যারের একটি নিম্ন আদালত ওই প্যাকেজকে ‘অকল্পনীয়’ ও করপোরেট শাসনব্যবস্থার নীতির পরিপন্থী উল্লেখ করে তা বাতিল করে দেয়। আদালত তখন মত দেন, টেসলার পরিচালনা পর্ষদ ও শেয়ারহোল্ডারদের সঙ্গে চুক্তি প্রণয়নের প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার ঘাটতি ছিল এবং মাস্কের প্রভাব অস্বাভাবিকভাবে বেশি ছিল। এ রায়ের ফলে মাস্কের পারিশ্রমিক প্যাকেজ স্থগিত হয়ে যায় এবং বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ আইনি লড়াই শুরু হয়।

চলতি বছরের ২০২৪ সালে দেওয়া সেই রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলের শুনানি শেষে শুক্রবার ডেলাওয়্যার সুপ্রিম কোর্ট ভিন্ন অবস্থান নেয়। সর্বোচ্চ আদালত রায়ে বলেন, প্যাকেজ বাতিলের সিদ্ধান্ত মাস্কের প্রতি ‘অনুচিত ও অন্যায়’ ছিল। আদালতের মতে, টেসলার শেয়ারহোল্ডাররা জেনে-বুঝেই এই পারিশ্রমিক কাঠামো অনুমোদন করেছিলেন এবং কোম্পানির দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধির সঙ্গে এটি যুক্ত ছিল। এ সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে মাস্কের শেয়ার অপশন পুনর্বহালের আইনি পথ সুগম হয়।

এই রায়ের প্রভাব তাৎক্ষণিকভাবে মাস্কের সম্পদের হিসাবে প্রতিফলিত হয়েছে। ফোর্বসের তথ্য অনুযায়ী, পুনর্বহাল হওয়া শেয়ার অপশনের বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ১৩৯ বিলিয়ন ডলার, যা সরাসরি তার মোট সম্পদের পরিমাণ বাড়িয়েছে। এর আগে চলতি সপ্তাহেই ইলন মাস্ক ইতিহাসে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে ৬০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি সম্পদের মালিক হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।

মাস্কের সম্পদ বৃদ্ধির পেছনে তার অন্যান্য ব্যবসায়িক উদ্যোগও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বিশেষ করে মহাকাশ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের সম্ভাব্য শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির খবর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করে। স্পেসএক্সের মূল্যায়ন সংক্রান্ত বিভিন্ন পূর্বাভাস প্রকাশের পর মাস্কের মালিকানাধীন শেয়ারের আনুমানিক মূল্য উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়, যা তার মোট সম্পদের হিসাবকে আরও ঊর্ধ্বমুখী করে।

এদিকে গত নভেম্বরে টেসলার শেয়ারহোল্ডাররা মাস্কের জন্য একটি নতুন ও সংশোধিত বেতন-ভাতা পরিকল্পনায় অনুমোদন দেন, যার মোট সম্ভাব্য মূল্য এক ট্রিলিয়ন ডলার পর্যন্ত হতে পারে। করপোরেট ইতিহাসে এটিকে সবচেয়ে বড় পারিশ্রমিক কাঠামো হিসেবে দেখা হচ্ছে। শেয়ারহোল্ডারদের এ সিদ্ধান্ত টেসলাকে কেবল বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে নয়, বরং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, স্বচালিত প্রযুক্তি ও রোবটিক্সভিত্তিক একটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের মাস্কের কৌশলের প্রতি আস্থার প্রতিফলন বলে বিবেচিত হচ্ছে।

ফোর্বসের সর্বশেষ তালিকা অনুযায়ী, ইলন মাস্কের বর্তমান সম্পদ গুগলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজের তুলনায় প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ডলার বেশি। এ ব্যবধান তাকে বিশ্বের শীর্ষ ধনীর অবস্থানে আরও সুদৃঢ় করেছে। আদালতের রায়, শেয়ারহোল্ডারদের সমর্থন এবং তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বাজারমূল্য বৃদ্ধির সম্মিলিত প্রভাবে আগামী দিনগুলোতে মাস্কের সম্পদ ও প্রভাব বৈশ্বিক অর্থনীতিতে আরও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক শীর্ষ সংবাদ