নিজস্ব প্রতিবেদক
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, অতীতের মতো ভবিষ্যতেও দেশকে ধ্বংসের কিনারা থেকে রক্ষার দায়িত্ব বিএনপি নেবে। তবে সামনে চ্যালেঞ্জপূর্ণ সময় আসতে পারে উল্লেখ করে তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। দেশকে নতুন করে গড়ে তুলতে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, জনগণের অধিকার এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ থাকার প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরেন তিনি।
রবিবার (২১ ডিসেম্বর) বিকেলে বগুড়া শহরের শহীদ টিটু মিলনায়তনে জেলা বিএনপির উদ্যোগে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে নির্মিত ডিজিটাল স্মৃতিস্তম্ভের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তারেক রহমান। অনুষ্ঠানে তিনি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান এবং তাঁদের আত্মত্যাগকে দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে উল্লেখ করেন।
বক্তব্যের শুরুতে শহীদ ওসমান হাদির স্মৃতিচারণা করে তারেক রহমান বলেন, তিনি ছিলেন গণতন্ত্রের প্রতি অবিচল বিশ্বাসী একজন মানুষ। ভোটের রাজনীতিতে আস্থা রেখেই তিনি নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। তারেক রহমানের মতে, এ ধরনের রাজনৈতিক চর্চা ও অংশগ্রহণই একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার ভিত্তি শক্তিশালী করে। তিনি জুলাই আন্দোলনের অন্যান্য শহীদ ও আহত যোদ্ধাদের অবদানও স্মরণ করেন এবং তাঁদের আত্মত্যাগকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য প্রেরণার উৎস হিসেবে উল্লেখ করেন।
তারেক রহমান বলেন, দেশ বর্তমানে স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা থেকে মুক্ত হয়েছে। এই মুক্তিকে অর্থবহ করতে হলে কেবল রাজনৈতিক পরিবর্তন যথেষ্ট নয়, বরং ধ্বংসস্তূপ থেকে রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক কাঠামোকে নতুনভাবে গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, গণতন্ত্র, আইনের শাসন এবং মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়েই এই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব। এ কাজে রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন এবং সাধারণ জনগণের সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে নির্মিত ডিজিটাল স্মৃতিস্তম্ভের আওতায় বগুড়া শহরের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি স্থানে প্রাথমিকভাবে বিনামূল্যের ইন্টারনেট সুবিধা চালু করা হয়েছে। শহরের কেন্দ্রবিন্দু সাতমাথা, সরকারি আজিজুল হক কলেজসহ মোট ২০টি জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে সর্বসাধারণের জন্য এই সেবা উন্মুক্ত করা হয়েছে। আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পর্যায়ক্রমে জেলার আরও অন্তত ৪০টি স্থানে এই সুবিধা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে।
আয়োজকদের মতে, ডিজিটাল স্মৃতিস্তম্ভের মাধ্যমে শহীদদের আত্মত্যাগের ইতিহাস সংরক্ষণ এবং সাধারণ মানুষের কাছে তা সহজে পৌঁছে দেওয়াই এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য। ইন্টারনেট সুবিধার মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম শহীদদের জীবন ও সংগ্রামের তথ্য জানতে পারবে এবং ইতিহাস সম্পর্কে সচেতন হবে। একই সঙ্গে এটি তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে ডিজিটাল ব্যবস্থার সঙ্গে সাধারণ মানুষকে যুক্ত করার একটি প্রয়াস হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে জেলা বিএনপির বর্তমান ও সাবেক শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সদস্য, আহত যোদ্ধা এবং বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও এতে অংশ নেন। বক্তারা তাঁদের বক্তব্যে শহীদদের আত্মত্যাগকে সম্মান জানিয়ে বলেন, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগ্রামে এই আত্মত্যাগ জাতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা বহন করে।
স্মৃতিস্তম্ভ উদ্বোধন শেষে জেলা বিএনপির নেতারা জানান, এই ডিজিটাল উদ্যোগের মাধ্যমে শহীদদের স্মৃতি সংরক্ষণ করা হবে এবং তরুণ প্রজন্মকে গণতান্ত্রিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ করা সম্ভব হবে। তাঁদের মতে, ইতিহাস জানার সুযোগ তৈরি হলে ভবিষ্যতে গণতন্ত্র ও অধিকার রক্ষার সংগ্রাম আরও সুসংগঠিত হবে।


