শহীদ শরিফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুতে নেতৃত্ব সংকট ও কর্মসূচি ঘোষণা নিয়ে আলোচনায় ইনকিলাব মঞ্চ

শহীদ শরিফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুতে নেতৃত্ব সংকট ও কর্মসূচি ঘোষণা নিয়ে আলোচনায় ইনকিলাব মঞ্চ

নিজস্ব প্রতিবেদক
ইনকিলাব মঞ্চের প্রতিষ্ঠাতা ও আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুর পর সংগঠনটির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব ও সাংগঠনিক কর্মসূচি নিয়ে নতুন করে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে সংগঠনটির কার্যক্রম, শোকসভা ও সমাবেশের মধ্য দিয়ে বিষয়টি রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে গুরুত্ব পাচ্ছে। হাদির দাফন ও পরবর্তী কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সংগঠনটির নেতারা জানিয়েছেন, আপাতত সাংগঠনিক কার্যক্রম অব্যাহত থাকলেও আহ্বায়ক পদে নতুন নেতৃত্ব নির্ধারণের বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।

রোববার সংগঠনটির একাধিক শীর্ষ নেতা জানান, প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়কের মৃত্যুতে তারা শোকাহত এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে সংগঠনের অভ্যন্তরীণ ঐক্য ও ধারাবাহিকতা রক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, সংগঠনটি হাদির নির্ধারিত আদর্শ ও কাঠামোর আলোকে পরিচালিত হবে এবং ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্ত সম্মিলিতভাবে গ্রহণ করা হবে।

ইনকিলাব মঞ্চের শীর্ষ নেত্রী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক ফাতিমা তাসনিম জুমা বলেন, সংগঠনটি বর্তমানে শোকাবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আহ্বায়ক পদে কে দায়িত্ব নেবেন, সে বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো আলোচনা করা হয়নি। তিনি জানান, সাংগঠনিক কার্যক্রম চলমান রয়েছে এবং প্রয়োজনীয় বিষয়ে সংগঠনের অভ্যন্তরে আলোচনা শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।

তিনি আরও জানান, হাদির মৃত্যুর পর সাময়িকভাবে বন্ধ থাকা ‘ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার’ পুনরায় চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী এক থেকে দুই দিনের মধ্যে কেন্দ্রটির কার্যক্রম শুরু হবে। উল্লেখ্য, হাদির গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনার পর নিরাপত্তাজনিত কারণে কেন্দ্রটির সব কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছিল।

সংগঠনটির প্রকাশনা সম্পাদক ফাহিম আবদুল্লাহ জানান, বর্তমানে নেতৃত্ব পরিবর্তন বা নতুন কমিটি গঠনের বিষয়ে কোনো বৈঠক হয়নি। তিনি বলেন, সংগঠনের নেতাকর্মীরা শোকাহত থাকলেও সাংগঠনিক প্রস্তুতি ও ভবিষ্যৎ কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। তার মতে, শিগগিরই সংগঠন থেকে ধারাবাহিক কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

হাদির দাফন সম্পন্ন হওয়ার পর শনিবার শাহবাগ এলাকায় ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে হাদির হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়। এ সময় সংগঠনটির নেতারা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) খোদা বখস চৌধুরীর কাছে তদন্ত ও গ্রেপ্তারের অগ্রগতির বিষয়ে ২৪ ঘণ্টার সময়সীমা নির্ধারণ করেন।

সমাবেশে ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আবদুল্লাহ আল জাবের বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অগ্রগতি না হলে সংশ্লিষ্টদের পদত্যাগের দাবি জানানো হবে। সমাবেশ শেষে নেতারা জানান, দাবি বাস্তবায়নে প্রশাসনের কাছ থেকে সুস্পষ্ট পদক্ষেপ প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

রোববার ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে আরও কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়। সংগঠনটির ফেসবুক পেজে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, খুনি, পরিকল্পনাকারী, সহায়তাকারী, পলায়নে সহযোগী এবং আশ্রয়দাতাসহ পুরো চক্রকে শনাক্ত করে আইনগত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।

এ ছাড়া বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়, সিভিল ও মিলিটারি গোয়েন্দা কাঠামোর মধ্যে থেকে যদি কেউ এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকে, তবে তাদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করতে হবে। সংগঠনটির দাবি অনুযায়ী, বিচারিক প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও দ্রুততা নিশ্চিত করা না হলে তারা আরও কর্মসূচি ঘোষণা করবে।

রোববার রাত ৯টায় সংগঠনটির ফেসবুক পেজে জানানো হয়, সোমবার বেলা ১২টায় শাহবাগের শহীদ হাদি চত্বরে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দাবির বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য বা ব্যাখ্যা দেননি।

এই পরিস্থিতিতে ইনকিলাব মঞ্চের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব, সাংগঠনিক কাঠামো এবং কর্মসূচি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। সংগঠনটির নেতারা জানিয়েছেন, শোক কাটিয়ে উঠে তারা সংগঠনের পরবর্তী দিকনির্দেশনা নির্ধারণ করবেন এবং তা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে।

রাজনীতি শীর্ষ সংবাদ