এফডিসির দীর্ঘদিনের স্থবিরতা ও নির্মাণ বিলম্ব

এফডিসির দীর্ঘদিনের স্থবিরতা ও নির্মাণ বিলম্ব

বিনোদন ডেস্ক

ঢাকা: বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) বা এফডিসির কার্যক্রম দীর্ঘদিন ধরে স্থবির অবস্থায় রয়েছে। শুটিং, ডাবিং এবং অন্যান্য চলচ্চিত্র নির্মাণ কার্যক্রম উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। ২০২২ সালে শুরু হওয়া বিএফডিসি কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজও নির্ধারিত সময়ের পরেও শেষ হয়নি, ফলে নতুন ভবনের উদ্বোধনের কোনো সময়সূচি নেই। এ কারণে প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে চলচ্চিত্রকার ও কর্মকর্তাদের মধ্যে ‘ভূতুড়ে ভবন’ হিসেবে উল্লেখযোগ্য পরিচিতি পেয়েছে।

১৯৫৭ সালে যাত্রা শুরু করা এফডিসি দেশীয় চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নের জন্য কাজ করলেও বিগত কয়েক দশকে এটি ধীরে ধীরে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে রূপ নিয়েছে। সমিতি, সভা, রাজনীতি ও অন্যান্য সামাজিক কার্যক্রমের জন্য অধিক ব্যবহৃত হওয়ায় চলচ্চিত্র নির্মাণ কার্যক্রম পিছিয়ে পড়েছে। ২০১৮ সালে একনেকের সভায় অনুমোদিত ১২ তলা ‘বিএফডিসি কমপ্লেক্স’ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ ২০২২ সালে শুরু হলেও, বর্তমান পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ৪০ শতাংশ। মূল প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩২৩ কোটি টাকা, যা পরবর্তীতে ৩৬৫ কোটি টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। নির্মাণকাজের সম্পূর্ণ সময়সীমা সংশোধিতভাবে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের প্রতিবেদন অনুসারে, নির্মাণ অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়। এফডিসি পরিচালনা ও আয়ের অবস্থা দীর্ঘ সময় ধরে হ্রাস পাচ্ছে। ২০১৬ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত সরকারের কাছ থেকে প্রাপ্ত অনুদান ও ঋণের মোট পরিমাণ প্রায় ৮০ কোটি টাকা। চলতি ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে সংস্থা ১১৮ কোটি টাকার অনুদান চেয়েছে।

সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুমা রহমান তানি জানান, এফডিসির আধুনিকায়নে গত ১৬ বছরে কোনো বিনিয়োগ করা হয়নি। পুরনো স্টুডিও, অপ্রতুল যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির অভাবে প্রতিষ্ঠানটি দিন দিন সোনালি অতীতের গৌরব হারাচ্ছে। বর্তমানে সংস্থার শুটিং ও ডাবিং ফ্লোরে আধুনিক ক্যামেরা বা প্রযুক্তি না থাকায় নির্মাতারা বাইরের প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান থেকে যন্ত্রপাতি ভাড়া নিয়ে কাজ করছেন। উদাহরণস্বরূপ, বর্তমানে প্রাগৈতিহাসিক মানের আটটি ক্যামেরা আছে, যার মধ্যে সচল মাত্র তিনটি।

সংস্থার ভৌত অবকাঠামোও দুরবস্থা বর্ণনা করছে। তেজগাঁওয়ে ৭.৫ একর জায়গায় প্রতিষ্ঠিত এফডিসিতে আগে নয়টি শুটিং ফ্লোর ছিল, যা বর্তমানে পাঁচটিতে সীমিত। এর মধ্যে একটিকে বেসরকারি টিভি চ্যানেল ভাড়া নিয়েছে। ফ্লোরের ছাদ থেকে পানি পড়া, এসি নষ্ট থাকা, এডিটিং শাখার যন্ত্রপাতি অকেজো থাকা, এবং ৫.১ ও ৭.১ সারাউন্ডিং সাউন্ড সিস্টেম না থাকা সমস্যাগুলো প্রতিষ্ঠানকে আধুনিক চলচ্চিত্র নির্মাণে অযোগ্য করে তুলেছে।

হিসাব শাখার তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পরিচালন ও সেবা খাত থেকে আয়ের পরিমাণ ৬ কোটি ২৪ লাখ ৭৪ হাজার ৫৫৭ টাকা, কিন্তু খরচ হয়েছে ২৩ কোটি ৯৯ লাখ ৬৪ হাজার ৭৬৩ টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আয়ের পরিমাণ আরও কমে ৩ কোটি ৫৭ লাখ ৩৩ হাজার ৭৭৫ টাকা, খরচ হয়েছে ২৪ কোটি ৪৮ লাখ ৬৮ হাজার ৪০২ টাকা। এতে দেখা যাচ্ছে, প্রতিষ্ঠানটি ধারাবাহিকভাবে লোকসানে রয়েছে এবং সরকারি অনুদানের ওপর নির্ভরশীল। ২০১৫-১৬ থেকে ২০২৪-২৫ পর্যন্ত কর্মীদের বেতন ও অন্যান্য সুবিধা মিলিয়ে সরকারী অনুদান ও ঋণের মোট পরিমাণ ৮০ কোটি ১৩ লাখ টাকা।

সংস্থার এমডি মাসুমা রহমান তানি আশা প্রকাশ করেছেন, আধুনিক সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি সংযোজন, সঠিক মূল্যে শুটিং স্পট ভাড়া এবং কার্যকর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এফডিসিকে আবারও লাভজনক অবস্থায় আনা সম্ভব। ২০২৫ সালের আগস্টে পরিচালন আয় ২৪ লাখ ৭১ হাজার ২৩২ টাকা অর্জিত হয়েছে, যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি। এই তথ্য প্রমাণ করে যে, কার্যকরী নীতি ও যথাযথ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এফডিসিকে পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব।

বর্তমানে চলচ্চিত্র নির্মাণকারীরা এফডিসির শুটিং ও ডাবিং ফ্লোরে কাজ করতে সীমিত সুবিধা পেয়ে থাকলেও, অনেক কার্যক্রমই প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান থেকে পরিচালিত হচ্ছে। গবেষণালব্ধ তথ্য ও আধুনিক প্রযুক্তির অভাবের কারণে প্রতিষ্ঠানটি চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য যে মূল ভূমিকা পালন করত, তা আজও পুনরায় প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়ায় রয়েছে।

বিনোদন শীর্ষ সংবাদ