নিজস্ব প্রতিবেদক
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও জুলাই জাতীয় সনদ বিষয়ে গণভোটকে সামনে রেখে সারা দেশে জনসচেতনতা ও প্রচারণার লক্ষ্যে দশটি ভোটের গাড়ির বহর ‘সুপার ক্যারাভান’-এর যাত্রা শুরু হয়েছে। সোমবার জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে এই কর্মসূচি শুরু হয়। সংশ্লিষ্টদের মতে, নির্বাচনের আগে ভোটাধিকার ও গণভোটের বিষয়গুলো সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ভোটাধিকার কোনো ব্যক্তির দয়া বা অনুকম্পার বিষয় নয়; এটি নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। এই অধিকার প্রয়োগের মাধ্যমেই জনগণ তাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে। তিনি আরও বলেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করা শুধু সরকারের একক দায়িত্ব নয়, বরং রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের সম্মিলিত দায়িত্ব।
প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে গণভোটের বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এবারের নির্বাচনে ভোটাররা সংসদ সদস্য নির্বাচনের পাশাপাশি জুলাই জাতীয় সনদের ওপরও ভোট দেবেন। তার ভাষ্য অনুযায়ী, দীর্ঘ প্রায় নয় মাস ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনার মাধ্যমে এই সনদটি প্রণয়ন করা হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, জনগণ যদি এই সনদকে সমর্থন জানায়, তাহলে তা দেশের দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক স্থিতিশীলতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তিনি গণভোটে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান এবং সনদের পক্ষে সমর্থন জানাতে চাইলে ‘হ্যাঁ’ ভোট দেওয়ার কথা বলেন।
নির্বাচনী পরিবেশ প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, সরকার এমন একটি নির্বাচন চায়, যেখানে ভয় বা প্রতিবন্ধকতা থাকবে না এবং জনগণ স্বাধীন ও নির্ভীকভাবে তাদের মত প্রকাশ করতে পারবে। তিনি জানান, এই ধরনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। একই সঙ্গে তিনি ভোটারদের উদ্দেশে বলেন, দেশের মালিক জনগণ নিজেই। আগামী পাঁচ বছরে কে দেশ পরিচালনা করবে, সে সিদ্ধান্ত ভোটারদের হাতেই রয়েছে। তিনি ভোটারদের চিন্তাভাবনা করে সৎ ও যোগ্য প্রার্থী নির্বাচনের আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে সরাসরি উপস্থিত থেকে ফিতা কেটে সুপার ক্যারাভানের উদ্বোধন করেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম। তাঁদের উপস্থিতিতে উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সুপার ক্যারাভানের আওতায় থাকা ভোটের গাড়িগুলো দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় পর্যায়ক্রমে সফর করবে। এসব গাড়ির মাধ্যমে ভোটারদের কাছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের প্রক্রিয়া, সময়সূচি এবং গুরুত্ব সম্পর্কে তথ্য তুলে ধরা হবে। বিশেষ করে জুলাই জাতীয় সনদের মূল বিষয়বস্তু, উদ্দেশ্য এবং সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে অবহিত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করছেন, একই দিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট আয়োজন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক উদ্যোগ। এ কারণে ভোটারদের প্রস্তুত করা এবং তাদের কাছে পরিষ্কার ও নির্ভুল তথ্য পৌঁছানো জরুরি। সুপার ক্যারাভান কর্মসূচিকে সেই প্রস্তুতির একটি অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গণভোটের মাধ্যমে জাতীয় সনদের বিষয়ে সরাসরি জনগণের মতামত নেওয়া হলে ভবিষ্যৎ নীতিনির্ধারণে তা গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। একই সঙ্গে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোটার উপস্থিতি ও অংশগ্রহণ বাড়ানোর ক্ষেত্রেও এই ধরনের প্রচারণা ভূমিকা রাখতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সামগ্রিকভাবে, সুপার ক্যারাভানের যাত্রা শুরু হওয়ার মধ্য দিয়ে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও জুলাই জাতীয় সনদ বিষয়ে গণভোটকে কেন্দ্র করে মাঠপর্যায়ের প্রচারণা কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো। সামনে এই কর্মসূচির মাধ্যমে কতটা কার্যকরভাবে জনগণের কাছে তথ্য পৌঁছানো যায়, সেটিই এখন সংশ্লিষ্টদের প্রধান বিবেচ্য বিষয়।


