নিজস্ব প্রতিবেদক
দীর্ঘ দেড় দশকের বেশি সময় বিদেশে অবস্থানের পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগামী ২৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করতে যাচ্ছেন। লন্ডন থেকে ঢাকায় তার আগমনকে কেন্দ্র করে দলীয় কর্মসূচি, গণসংবর্ধনা, নিরাপত্তা প্রস্তুতি এবং নেতাকর্মীদের ঢাকামুখী যাত্রা ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে উল্লেখযোগ্য তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, তারেক রহমানের দেশে ফেরা উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় দলীয় পর্যায়ে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে সদস্য সচিব করে একটি সংবর্ধনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো পৃথকভাবে প্রস্তুতি কার্যক্রম চালাচ্ছে। ব্যানার, ফেস্টুন, দলীয় প্রতীকসংবলিত টি-শার্ট ও ক্যাপ তৈরি করা হয়েছে।
দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ঢাকার পূর্বাচলের ৩০০ ফিট এলাকায় তারেক রহমানকে আনুষ্ঠানিক গণসংবর্ধনা দেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা জানান, ঢাকা বিমানবন্দর থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে নেতাকর্মীরা অবস্থান নিতে পারেন। এ সংবর্ধনার জন্য প্রশাসনিক অনুমতিও ইতোমধ্যে পাওয়া গেছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ২৪ ডিসেম্বরের মধ্যেই দেশের বিভিন্ন জেলা ও প্রবাস থেকে নেতাকর্মীরা ঢাকায় পৌঁছাতে শুরু করবেন।
তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন নির্বিঘ্ন করতে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ বিষয়ে সতর্ক অবস্থানে থাকবে। একই সঙ্গে বিএনপির পক্ষ থেকেও নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দলীয় সূত্র জানায়, চেয়ারপারসনের সিকিউরিটি ফোর্স (সিএসএফ) পুনর্গঠন ও সদস্যসংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। তারেক রহমান দেশে পৌঁছানোর পর তার নিরাপত্তার দায়িত্ব আনুষ্ঠানিকভাবে সিএসএফ গ্রহণ করবে। সাবেক সামরিক কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এ কে এম শামছুল ইসলামকে প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
বিএনপির নেতাকর্মীদের ঢাকায় যাতায়াত সহজ করতে বাংলাদেশ রেলওয়ে বিশেষ ট্রেন ও অতিরিক্ত কোচ বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বিএনপির চাহিদার ভিত্তিতে ১০টি রুটে বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করা হবে এবং নিয়মিত কয়েকটি ট্রেনে অতিরিক্ত কোচ সংযোজন করা হবে। এর জন্য স্বল্প দূরত্বের তিনটি ট্রেনের এক দিনের যাত্রা সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয়েছে। রেলওয়ের হিসাবে, এই বিশেষ ব্যবস্থাপনা থেকে প্রায় ৩৬ লাখ টাকা রাজস্ব আয় হবে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা প্রতিপালনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনের প্রেক্ষাপটে নির্বাচনসংক্রান্ত বিষয়েও অগ্রগতি হয়েছে। গতকাল আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধি দলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে বিএনপি জানিয়েছে, দেশে ফেরার দুই দিনের মধ্যে অর্থাৎ ২৭ ডিসেম্বর তারেক রহমান ভোটার হিসেবে নিবন্ধনের কার্যক্রম সম্পন্ন করবেন। বিএনপি সূত্রে বলা হয়েছে, তিনি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে তিনি কোন এলাকায় ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হবেন, তা এখনো নির্ধারিত হয়নি।
উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়নের সময় তারেক রহমান বিদেশে অবস্থান করায় ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হননি। সে সময় কারামুক্ত হয়ে তিনি ১১ সেপ্টেম্বর লন্ডনে যান এবং পরবর্তী সময়ে দেশে ফেরেননি। দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকায় তার পাসপোর্টের মেয়াদও শেষ হয়ে যায়। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি সরকারের কাছ থেকে ট্রাভেল পাস সংগ্রহ করেছেন, যার মাধ্যমে দেশে ফেরার প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের পথে এগোচ্ছে। নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে তপশিল ঘোষণা করেছে এবং ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারিত হয়েছে ১২ ফেব্রুয়ারি। ভোটার তালিকা চূড়ান্ত হলেও আইনি বিধান অনুযায়ী, যোগ্য যে কোনো ব্যক্তিকে যে কোনো সময় ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যায়।
তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে দলীয় কর্মসূচিও শুরু হয়েছে। জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন ঢাকায় আনন্দ মিছিল ও সমাবেশ আয়োজন করেছে। এসব কর্মসূচিতে দলীয় নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন এবং শৃঙ্খলা বজায় রাখার আহ্বান জানানো হয়।
সব মিলিয়ে, তারেক রহমানের দেশে ফেরা ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে নিরাপত্তা, প্রশাসনিক প্রস্তুতি, নির্বাচন ও দলীয় কর্মসূচি—সবকিছু মিলিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় পার করছে বিএনপি ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো।


