সংবাদপত্রে হামলাকে গণতন্ত্রের ওপর আঘাত হিসেবে আখ্যা বিএনপি মহাসচিবের

সংবাদপত্রে হামলাকে গণতন্ত্রের ওপর আঘাত হিসেবে আখ্যা বিএনপি মহাসচিবের

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের ওপর হামলা সরাসরি গণতন্ত্রের মৌলিক ভিত্তির ওপর আঘাত এবং জনগণের অর্জিত রাজনৈতিক সংগ্রামকে দুর্বল করার শামিল। তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনায় কেবল উদ্বেগ বা নিন্দা জানানো যথেষ্ট নয়; গণতন্ত্রবিরোধী তৎপরতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার সময় এসেছে।

রাজধানীর একটি হোটেলে সম্পাদক পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত সংঘবদ্ধ সহিংসতাবিরোধী এক প্রতিবাদ সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য ছিল সাম্প্রতিক সময়ে গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের ওপর সংঘটিত সহিংসতা ও হুমকির ঘটনাগুলোর প্রতিবাদ জানানো এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষার দাবি তোলা।

বর্তমান জাতীয় পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যে স্বাধীন ও সার্বভৌম গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের স্বপ্ন লালন করা হয়েছিল, বাস্তবতায় তা ক্রমেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ছে। তিনি বলেন, দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশ এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে গণতান্ত্রিক অধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিরাপত্তাহীন হয়ে উঠছে।

বিএনপি মহাসচিব তার বক্তব্যে সাম্প্রতিক সময়ে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনার উল্লেখ করে বলেন, এসব ঘটনা কোনো একটি প্রতিষ্ঠানের ওপর আক্রমণ হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। বরং এর মাধ্যমে নাগরিকদের স্বাধীনভাবে চিন্তা করার অধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। তিনি বলেন, সংবাদপত্রে হামলা মানে জনগণের জানার অধিকার সংকুচিত করা এবং রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে দুর্বল করা।

তিনি আরও বলেন, দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যে ঐতিহাসিক রাজনৈতিক আন্দোলন ও সংগ্রাম হয়েছে, সাম্প্রতিক সহিংসতা ও হামলার ঘটনাগুলো সেই অর্জনের বিরুদ্ধেই অবস্থান নিয়েছে। এ ধরনের তৎপরতা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে গণতন্ত্র চর্চার পরিসর আরও সংকুচিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রাজনৈতিক বিভাজনের ঊর্ধ্বে উঠে সব গণতন্ত্রকামী মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এটি কোনো একটি রাজনৈতিক দলের একক লড়াই নয়; বরং যারা স্বাধীন মতপ্রকাশ, আইনের শাসন এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় বিশ্বাস করেন, তাদের সম্মিলিত দায়িত্ব গণতন্ত্রকে রক্ষা করা। রাজনৈতিক পরিচয় নির্বিশেষে সবাইকে একত্রিত হয়ে গণতন্ত্রবিরোধী শক্তির মোকাবিলা করার প্রয়োজনীয়তার কথা তিনি তুলে ধরেন।

সভায় উপস্থিত বক্তারা বলেন, গণমাধ্যম একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অন্যতম স্তম্ভ। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে এবং সংবাদপত্র স্বাধীনভাবে কাজ করতে না পারলে রাষ্ট্রের জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তারা সাংবাদিকদের ওপর সহিংসতা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং দায়ীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।

বক্তারা আরও বলেন, সংঘবদ্ধ সহিংসতা ও উগ্রতার প্রবণতা গণতান্ত্রিক সহাবস্থানের জন্য হুমকি। এসব ঘটনায় নীরবতা বা উদাসীনতা ভবিষ্যতে আরও বড় সংকট তৈরি করতে পারে। তাই রাষ্ট্র, রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ এবং গণমাধ্যম—সব পক্ষকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।

প্রতিবাদ সভা থেকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, সাংবাদিকদের নিরাপত্তা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের আহ্বান জানানো হয়। বক্তারা বলেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষার লড়াই চলমান এবং এই লড়াইয়ে সচেতনতার পাশাপাশি সক্রিয় অংশগ্রহণ অপরিহার্য।

রাজনীতি শীর্ষ সংবাদ