নিজস্ব প্রতিবেদক
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় নিজ বাড়িতে যৌনকর্মীদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে কুয়াকাটা পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতে ইসলামীর সভাপতি আব্দুল হালিমকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সোমবার (২২ ডিসেম্বর) কলাপাড়া উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে আয়োজিত বিশেষ রোকন বৈঠকে অভিযোগ পর্যালোচনা শেষে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
বহিষ্কৃত আব্দুল হালিম কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপলী ইউনিয়নের মুসুল্লিয়াবাদ গ্রামের বাসিন্দা। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, অভিযোগের গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে উপজেলা ও পৌর জামায়াতের শীর্ষ নেতারা বৈঠকে উপস্থিত থেকে বিষয়টি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেন। বৈঠকে উত্থাপিত তথ্য ও অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
সন্ধ্যায় কুয়াকাটায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কুয়াকাটা পৌর জামায়াতের আমির মো. শহীদুল ইসলাম এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তথ্য জানান। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, দলের শৃঙ্খলা ও আদর্শ রক্ষার স্বার্থে অভিযোগটি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়েছে। অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা ও সংগঠনের ভাবমূর্তির ওপর সম্ভাব্য প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে বিশেষ রোকন বৈঠক ডাকা হয় এবং সেখানেই বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
বৈঠকে কলাপাড়া উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা মোহাম্মদ আব্দুল কাইয়ুম, কুয়াকাটা পৌর জামায়াতের আমির মো. শহীদুল ইসলাম, কুয়াকাটা পৌরসভার সাবেক আমির মাওলানা মাঈনুল ইসলাম মান্নানসহ উপজেলা ও পৌর পর্যায়ের বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের আলোচনায় অভিযোগের ধরন, সামাজিক প্রভাব এবং সাংগঠনিক নীতিমালার বিষয়গুলো গুরুত্ব পায়।
দলীয় ও স্থানীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ অনুযায়ী, আব্দুল হালিম নিজ বাড়িতে ‘ফ্যামিলি বাসা’ ভাড়ার আড়ালে অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িতদের আশ্রয় দিয়ে আসছিলেন। এ ধরনের কর্মকাণ্ড স্থানীয়ভাবে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে এবং রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নীতিগত অবস্থানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে করা হয়। অভিযোগকারীদের দাবি, এ ধরনের কার্যক্রম দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে পারে এবং সামাজিক শৃঙ্খলার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
জানা গেছে, আব্দুল হালিম পূর্বে নিজেকে একটি ভিন্ন রাজনৈতিক পরিচয়ের সঙ্গে যুক্ত বলে দাবি করলেও গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে সক্রিয়ভাবে জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক কার্যক্রমে যুক্ত হন। পরে তাঁকে কুয়াকাটা পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড শাখার সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। দায়িত্ব পালনের সময় তাঁর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ দলীয় পর্যায়ে আলোচনার সূত্রপাত করে।
অভিযোগের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে আব্দুল হালিম বলেন, তাঁর বাড়িতে মোট ছয়টি ফ্যামিলি বাসা ভাড়া দেওয়া আছে। এর মধ্যে একটি বাসায় মা-মেয়ে পরিচয়ে চারজন নারী প্রায় দুই মাস আগে বাসা ভাড়া নেন। তিনি দাবি করেন, ভাড়াটিয়ারা কী পেশায় যুক্ত বা কী ধরনের কার্যক্রমে জড়িত, সে বিষয়ে তিনি অবগত নন। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, বিষয়টি নিয়ে তাঁর সঙ্গে আলোচনা না করেই দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা তিনি ন্যায়সংগত মনে করেন না।
এ বিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা মোহাম্মদ আব্দুল কাইয়ুম বলেন, একটি গুরুতর অভিযোগের ভিত্তিতে সাংগঠনিক নিয়ম অনুসরণ করে বিশেষ রোকন বৈঠক আহ্বান করা হয়। বৈঠকে উপস্থিত নেতাদের আলোচনার পরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকতে হলে সংগঠনের নীতিমালা, শৃঙ্খলা ও আদর্শ মেনে চলা বাধ্যতামূলক। এসব নীতির ব্যত্যয় ঘটলে সংগঠন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে।
দলীয় সিদ্ধান্তের ফলে স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এ সিদ্ধান্ত সংগঠনের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা জোরদার এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের অভিযোগের ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত হিসেবে কাজ করতে পারে।


