বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখতে সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত: অর্থ উপদেষ্টা

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখতে সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত: অর্থ উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বর্তমানে স্বাভাবিক রয়েছে এবং রাজনৈতিক সম্পর্কও স্বাভাবিক পর্যায়ে রাখতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। তিনি জানান, দুই দেশের মধ্যে কোনো অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক—এমনটি সরকার চায় না এবং সে লক্ষ্যেই কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

মঙ্গলবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন অর্থ উপদেষ্টা। বৈঠক শেষে সমসাময়িক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের বর্তমান অবস্থা ও সরকারের অবস্থান তুলে ধরেন।

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক নিয়মিত বাণিজ্য, আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম, বিনিয়োগ এবং পারস্পরিক সহযোগিতার মধ্য দিয়ে স্বাভাবিকভাবে চলছে। এ ক্ষেত্রে কোনো বড় ধরনের অচলাবস্থা বা সংকট নেই। তিনি ইঙ্গিত দেন, অর্থনৈতিক সহযোগিতার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং এ বিষয়ে সরকার সচেতনভাবে কাজ করছে।

রাজনৈতিক সম্পর্ক প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সম্পর্ক খুব যে খারাপ হয়ে গেছে, তা নয়। তবে সরকার চায়, এই সম্পর্ক যেন কোনোভাবেই অস্বাভাবিক পর্যায়ে না পৌঁছায়। সে কারণেই বিভিন্ন স্তরে যোগাযোগ ও আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। তাঁর ভাষায়, রাজনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে এবং বিষয়টি সরকার গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে।

অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, ভারতের সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টাও নিজ উদ্যোগে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া, আস্থা এবং কূটনৈতিক সৌহার্দ্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে প্রধান উপদেষ্টার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি উল্লেখ করেন। সরকারের উচ্চপর্যায়ে এ নিয়ে নিয়মিত আলোচনা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির একটি মৌলিক অবস্থান তুলে ধরে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ কোনো প্রতিবেশী দেশের সঙ্গেই তিক্ত সম্পর্ক চায় না। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, পারস্পরিক সম্মান এবং সহযোগিতার ভিত্তিতেই প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। এই নীতির আলোকে ভারতের সঙ্গেও সম্পর্ক পরিচালিত হচ্ছে বলে তিনি জানান।

বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষাপটে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে এবং সীমান্ত, পানি বণ্টন, যোগাযোগ ও নিরাপত্তা—এসব বিষয়েও পারস্পরিক স্বার্থ জড়িত। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা ও কূটনৈতিক যোগাযোগ অব্যাহত থাকায় সম্পর্কের স্বাভাবিকতা বজায় রাখার বিষয়টি আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

সরকারি সূত্রগুলো বলছে, অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থিতিশীল থাকলে রাজনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি হয়। এ কারণে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি রাজনৈতিক যোগাযোগ জোরদার করার কৌশল নিয়েছে সরকার। সচিবালয়ের বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টার বক্তব্য সেই কৌশলেরই প্রতিফলন হিসেবে দেখা হচ্ছে।

সব মিলিয়ে, অর্থ উপদেষ্টার বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে যে বাংলাদেশ সরকার ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্যপূর্ণ ও বাস্তববাদী অবস্থান গ্রহণ করেছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ককে স্বাভাবিক রেখে রাজনৈতিক সম্পর্কেও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বজায় রাখাই সরকারের লক্ষ্য।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ