হিথরো বিমানবন্দরে পৌঁছেছেন তারেক রহমান

হিথরো বিমানবন্দরে পৌঁছেছেন তারেক রহমান

রাজনীতি ডেস্ক

লন্ডনের বাসা থেকে রওনা দিয়ে হিথরো বিমানবন্দরে পৌঁছেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বাংলাদেশ সময় বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) রাতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি। নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, বাংলাদেশ বিমানের নিয়মিত ফ্লাইটে আজ রাত সোয়া ১২টার দিকে তিনি বাংলাদেশের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করবেন। দীর্ঘ ১৭ বছর পর তার এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দেশের রাজনীতিতে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

বুধবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন কমিটির আহ্বায়ক সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, লন্ডন থেকে ছেড়ে আসা বাংলাদেশ বিমানের ওই ফ্লাইটটি বাংলাদেশ সময় মধ্যরাতে হিথরো বিমানবন্দর থেকে যাত্রা শুরু করবে এবং আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকালে সিলেটে যাত্রাবিরতি শেষে সকাল ১১টা ২০ মিনিটে ঢাকায় অবতরণ করার কথা রয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে তিনি অবতরণের সম্ভাব্য সময় উল্লেখ করে বলেন, সিলেটে যাত্রাবিরতির পর ফ্লাইটটি বেলা ১১টা ২০ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকায় পৌঁছানোর পর বিমানবন্দরে তারেক রহমানকে আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা জানাবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। এর মধ্য দিয়ে দলীয়ভাবে তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হবে। বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের উপস্থিতিতে এই অভ্যর্থনা আয়োজন করা হয়েছে।

বিমানবন্দর থেকে তিনি সরাসরি সড়কপথে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে যাবেন। এভারকেয়ার হাসপাতালে বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন তার মা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তারেক রহমানের দেশে ফিরেই মায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পরিকল্পনার বিষয়টি দলীয়ভাবে আগেই জানানো হয়েছিল। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের জন্য হাসপাতালটি বিশেষভাবে প্রস্তুত রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

হাসপাতালে যাওয়ার পথে তারেক রহমান কুড়িল–পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে এলাকায় একটি সংক্ষিপ্ত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। সংবাদ সম্মেলনে সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, সংবর্ধনাটি সংক্ষিপ্ত পরিসরে অনুষ্ঠিত হবে এবং এতে তারেক রহমান দেশবাসীর প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাবেন। তিনি আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করবেন বলেও উল্লেখ করা হয়। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য হলো তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে দেশবাসীর অনুভূতির প্রতিফলন ঘটানো।

সংবর্ধনা শেষে তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে পৌঁছে খালেদা জিয়ার খোঁজখবর নেবেন। হাসপাতাল পরিদর্শনের পর সেখান থেকে তিনি গুলশান এভিনিউয়ের ১৯৬ নম্বর বাসভবনে যাবেন। দলীয়ভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে, এই বাসাতেই তারেক রহমান স্থায়ীভাবে অবস্থান করবেন। বাসভবনে পৌঁছানোর পর আর কোনো আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি থাকছে না বলে বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে।

২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার উদ্দেশে দেশ ছাড়ার পর থেকে লন্ডনে অবস্থান করছিলেন তারেক রহমান। ২০০৭–০৮ সালের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে তিনি যুক্তরাজ্যেই অবস্থান করছিলেন। দীর্ঘ এই সময়জুড়ে দেশে তার প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি ছিল রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। দলীয়ভাবে বিএনপি বিভিন্ন সময়ে তার দেশে ফেরা নিয়ে আশা প্রকাশ করলেও নির্দিষ্ট সময়সূচি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়নি। এবারই প্রথম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন কমিটির পক্ষ থেকে তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে আনুষ্ঠানিক সূচি ঘোষণা করা হয়।

তারেক রহমানের দেশে ফেরাকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে রাজনৈতিক বিশ্লেষক, দলীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ জনগণের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা চলছে। বিএনপির নেতা-কর্মীরা এই প্রত্যাবর্তনকে রাজনৈতিক পুনর্গঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে দেখছেন। অন্যদিকে, বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তারেক রহমানের দেশে ফেরা আগামী দিনের রাজনীতিতে সম্ভাব্য পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করছে। তবে এই প্রতিবেদনে কোনো বিশ্লেষণাত্মক মতামত বা পূর্বাভাস অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি; কেবল ঘোষিত সূচি, প্রত্যাবর্তনের তথ্য ও সংশ্লিষ্ট ঘটনাপ্রবাহ নিরপেক্ষভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, দলীয় শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের উপস্থিতিতে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা আয়োজন সম্পন্ন করা হবে এবং তারেক রহমানের নিরাপত্তা ও আনুষ্ঠানিক যাত্রাপথের সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন রয়েছে। তবে নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।

দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তারেক রহমানের ভূমিকা দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনার বিষয়। বিএনপির সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্বিন্যাস, নীতিনির্ধারণী কৌশল ও রাজনৈতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে তার সক্রিয় ভূমিকার কথা দলীয় নেতা-কর্মীরা নিয়মিতভাবে উল্লেখ করেছেন। এবার তার সরাসরি দেশে উপস্থিতি দলীয় কার্যক্রমে নতুন গতিশীলতা আনবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। তবে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো পরিকল্পনা বা রাজনৈতিক কৌশল প্রকাশ করা হয়নি।

তারেক রহমানের দেশে ফেরা উপলক্ষে দলীয়ভাবে বিভিন্ন স্থানে নেতা-কর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা গেলেও, মূল কর্মসূচিগুলো আনুষ্ঠানিকতা, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও পারিবারিক সাক্ষাতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। সংবর্ধনা, হাসপাতাল পরিদর্শন ও বাসভবনে যাত্রা—এই তিন ধাপেই প্রত্যাবর্তনের আনুষ্ঠানিক সূচি সম্পন্ন হবে বলে নিশ্চিত করেছে বিএনপির স্বদেশ প্রত্যাবর্তন কমিটি।

বাংলাদেশ বিমানের ওই ফ্লাইটটি নিয়মিত বাণিজ্যিক যাত্রীবাহী ফ্লাইট। এই ফ্লাইটে তারেক রহমান পরিবারের সদস্যসহ সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গেই ভ্রমণ করবেন। বিমানবন্দরের কার্যক্রমে যাতে স্বাভাবিকতা বজায় থাকে, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে দীর্ঘ প্রবাসজীবনের অবসান ঘটছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলমান অবস্থায় তার মায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎকে এই প্রত্যাবর্তনের প্রথম ও প্রধান অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

রাজনীতি শীর্ষ সংবাদ