চিকিৎসাধীন মায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে তারেক রহমান এভারকেয়ার হাসপাতালে

চিকিৎসাধীন মায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে তারেক রহমান এভারকেয়ার হাসপাতালে

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫ — বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান চিকিৎসাধীন মায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে গেছেন। বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটের দিকে গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানের মঞ্চ ত্যাগ করার পর তিনি সরাসরি হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা দেন এবং সন্ধ্যা ৫টা ৫০ মিনিটে হাসপাতালে পৌঁছান।

তারেক রহমানের আগমনকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই এভারকেয়ার হাসপাতালের প্রধান ফটকে বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন। হাসপাতাল চত্বরে তারেক রহমানকে বহনকারী গাড়ি প্রবেশের সময় নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা যায়। দলীয় পতাকা, ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে কর্মী-সমর্থকরা স্লোগান দিতে থাকেন। যদিও দলের পক্ষ থেকে হাসপাতাল এলাকায় স্লোগান ও মিছিল না করার জন্য আগেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, তারপরও কর্মী-সমর্থকদের উচ্ছ্বাস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়নি।

এর আগে, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে একটি বিশেষ বাসে করে তারেক রহমান ৩০০ ফিট সড়কসংলগ্ন সংবর্ধনা মঞ্চের উদ্দেশে রওনা দেন। রাস্তার দুই পাশে সারিবদ্ধ নেতাকর্মীরা হাত নেড়ে তাকে স্বাগত জানান। প্রায় ৩ ঘণ্টা ১৫ মিনিটের যাত্রা শেষে বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটের দিকে তিনি সংবর্ধনা মঞ্চে পৌঁছান। সংবর্ধনা মঞ্চে ওঠার আগেই বিমানবন্দর থেকে শুরু করে ৩০০ ফিট সড়ক পর্যন্ত তার আগমন পরিণত হয় এক জনসমাবেশের দৃশ্যে।

বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা ৪৫ মিনিটে তারেক রহমানকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এর মধ্য দিয়ে ১৭ বছরের নির্বাসন-জীবনের অবসান ঘটিয়ে তিনি দেশে ফেরেন। বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর ভিআইপি লাউঞ্জে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ফুল দিয়ে তাকে প্রথম স্বাগত জানান। পরবর্তী সময়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ শীর্ষ নেতারা তার সঙ্গে আলিঙ্গন করেন এবং কুশল বিনিময় করেন।

তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে বিএনপি’র রাজনৈতিক অঙ্গনে গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই প্রস্তুতি চলছিল। বিমানবন্দর থেকে সংবর্ধনা মঞ্চ পর্যন্ত যাত্রাপথে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী, সমর্থক এবং সহযোগী সংগঠনের সদস্যরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন। তার দেশে ফেরাকে বিএনপি সমর্থকরা রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে দেখছেন। তবে বিএনপি’র শীর্ষ নেতৃত্ব বারবার আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন, জনউচ্ছ্বাস যেন শৃঙ্খলার সীমা অতিক্রম না করে এবং কোনোভাবেই জনভোগান্তি সৃষ্টি না হয়।

এভারকেয়ার হাসপাতালের নিরাপত্তা-ব্যবস্থা তার আগমনের সময় বাড়ানো হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা হাসপাতালের প্রবেশমুখ, প্রধান ফটক এবং অভ্যন্তরীণ সড়কে নিরাপত্তা-ব্যবস্থা নিশ্চিত করেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে তার আগমন সম্পর্কে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য না দেওয়া হলেও প্রশাসনিক সমন্বয়ের মাধ্যমে পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ রাখার চেষ্টা করা হয়।

বিএনপি’র দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, তারেক রহমানের মা বেশ কিছুদিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তারেক রহমান দেশে ফিরেই দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিলেও পারিবারিক দায়িত্বকে অগ্রাধিকার দিয়ে চিকিৎসাধীন মায়ের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য দ্রুত হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা দেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দীর্ঘ সময় দেশের বাইরে থাকার পর তারেক রহমানের দেশে ফেরার ঘটনাটি বাংলাদেশের সমসাময়িক রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। তার ফেরাকে ঘিরে বিএনপি সমর্থকদের আবেগ-উচ্ছ্বাস যেমন লক্ষ্য করা গেছে, তেমনি দলের শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে শৃঙ্খলা ও রাজনৈতিক আচরণে সংযম বজায় রাখার বার্তাও স্পষ্ট ছিল। বিশেষত হাসপাতাল এলাকায় স্লোগান না দেওয়ার নির্দেশনা, জনসমাগম নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা এবং প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে নিরাপত্তা-ব্যবস্থা নিশ্চিত করার পদক্ষেপগুলো দলীয় কৌশলের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বিএনপি’র পক্ষ থেকে পূর্বঘোষিত নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও হাসপাতাল চত্বরে স্লোগান দেওয়ার ঘটনা দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষার চ্যালেঞ্জকেও সামনে এনেছে। এ ধরনের পরিস্থিতি রাজনৈতিক কর্মসূচি পরিচালনায় ভবিষ্যতে আরও সুসংগঠিত ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ করে।

তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনের পরপরই তার মঞ্চ ত্যাগ এবং হাসপাতালে গমনের ঘটনাটি রাজনৈতিক কর্মসূচির পাশাপাশি ব্যক্তিগত ও পারিবারিক দায়বদ্ধতার মানবিক দিকটিকেও তুলে ধরে। দীর্ঘ ১৭ বছরের ব্যবধান শেষে দেশে ফিরে প্রথম দিনেই তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে দেখা করেছেন, আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনায় অংশ নিয়েছেন এবং দিনের শেষ ভাগে অসুস্থ মায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেছেন—যা তার দিনব্যাপী কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায়।

বিএনপি নেতৃত্বের বক্তব্য অনুযায়ী, তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনের পর দলীয় রাজনীতি নতুন এক পর্যায়ে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। তবে এ প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে যে জনউচ্ছ্বাস দেখা গেছে, তা যেন আইনি কাঠামো, শৃঙ্খলা এবং জনস্বার্থ রক্ষার নীতিকে অগ্রাধিকার দিয়েই পরিচালিত হয়—এমন প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকরা।

রাজনীতি শীর্ষ সংবাদ