অর্থনীতি ডেস্ক
আন্তর্জাতিক বাজারে টানা ঊর্ধ্বগতির পর স্বর্ণ, রুপা ও প্লাটিনামের দামে সাময়িক স্থিতি দেখা দিয়েছে। বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) বিনিয়োগকারীরা লাভ তুলে নেওয়ায় স্বর্ণের দামে সামান্য সংশোধন ঘটে। দিনের শুরুর দিকে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ৪ হাজার ৫০০ ডলার অতিক্রম করে ইতিহাসের নতুন রেকর্ড গড়লেও পরবর্তী সময়ে তা কিছুটা কমে আসে। একই দিনে দীর্ঘ উত্থানের পর রুপা, প্লাটিনাম ও প্যালাডিয়ামেও দাম কমার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে।
আন্তর্জাতিক স্পট মার্কেটে স্বর্ণের দাম ০.২ শতাংশ কমে প্রতি আউন্স ৪ হাজার ৪৭৯.৩৮ ডলারে লেনদেন হয়। সেশনের একপর্যায়ে স্বর্ণের দাম ৪ হাজার ৫২৫.১৮ ডলারে উঠে যায়, যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। তবে বিনিয়োগকারীদের মুনাফা তোলার চাপ বাড়লে দাম কিছুটা নেমে আসে। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেব্রুয়ারি ডেলিভারির স্বর্ণ ফিউচারের দাম ০.১ শতাংশ কমে দাঁড়ায় প্রতি আউন্স ৪ হাজার ৫০২.৮ ডলারে।
বিশ্লেষকদের মতে, রেকর্ড উচ্চতার পর বাজারে স্বাভাবিক সংশোধন বা সংহতি একটি প্রত্যাশিত প্রক্রিয়া। দীর্ঘ সময় ধরে মূল্যবৃদ্ধির পর বিনিয়োগকারীরা সাধারণত লাভ নিশ্চিত করতে বিক্রির দিকে ঝুঁকেন, যা স্বল্পমেয়াদে দামে চাপ সৃষ্টি করে। তবে সামগ্রিকভাবে স্বর্ণের মৌলিক চাহিদা এখনো শক্ত অবস্থানে রয়েছে বলে মত বাজার বিশ্লেষকদের।
বিশ্ব অর্থনীতিতে নিম্ন সুদের হার ও ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তা স্বর্ণের চাহিদাকে সমর্থন জোগাচ্ছে। নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে স্বর্ণের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে, বিশেষ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর নীতিগত অবস্থান বিনিয়োগকারীদের সিদ্ধান্তে বড় ভূমিকা রাখছে। মার্কিন অর্থনীতিতে সুদ কমানোর প্রত্যাশাও স্বর্ণবাজারের জন্য ইতিবাচক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। চলতি বছরে যুক্তরাষ্ট্র একাধিকবার সুদের হার কমিয়েছে এবং বাজার বিশ্লেষকদের ধারণা, আগামী বছরেও এই ধারা অব্যাহত থাকতে পারে।
এদিকে রুপার বাজারেও উল্লেখযোগ্য অস্থিরতা দেখা গেছে। সেশনের একপর্যায়ে রুপার দাম প্রতি আউন্স ৭২.৭০ ডলারে পৌঁছালেও পরে কিছুটা কমে আসে। দিন শেষে রুপার দাম ০.৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৭১.৯৪ ডলারে। বিশ্লেষকদের মতে, শিল্পখাতে চাহিদা ও বিনিয়োগ প্রবাহ অব্যাহত থাকলে বছরের শেষ নাগাদ রুপার দাম আরও বাড়তে পারে। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত রুপার দাম বেড়েছে প্রায় ১৪৯ শতাংশ, যা স্বর্ণের তুলনায় অনেক বেশি।
প্লাটিনামের ক্ষেত্রেও একই ধরনের প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। সেশনের শুরুতে প্লাটিনামের দাম প্রতি আউন্স ২ হাজার ৩৭৭.৫০ ডলারে উঠলেও পরে মুনাফা তোলার কারণে তা ২.৪ শতাংশ কমে ২ হাজার ২২০.৪৪ ডলারে নেমে আসে। অন্যদিকে প্যালাডিয়াম তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানোর পর বড় ধরনের সংশোধনের মুখে পড়ে। এক পর্যায়ে প্যালাডিয়ামের দাম ৯ শতাংশের বেশি কমে প্রতি আউন্স ১ হাজার ৬৮৩.৫৮ ডলারে দাঁড়ায়।
আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব দেশীয় বাজারেও পড়েছে। বাংলাদেশে নতুন করে স্বর্ণের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। বর্তমানে প্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ২২ হাজার ৮৩ টাকা। ২১ ক্যারেট স্বর্ণের প্রতি ভরি দাম ২ লাখ ১১ হাজার ৯৯৩ টাকা, ১৮ ক্যারেটের দাম ১ লাখ ৮১ হাজার ৭২৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি ভরি ১ লাখ ৫১ হাজার ৩৯৯ টাকা।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, স্বল্পমেয়াদে দামে ওঠানামা থাকলেও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, মুদ্রানীতির শিথিলতা এবং বিনিয়োগকারীদের নিরাপদ সম্পদের প্রতি ঝোঁক দীর্ঘমেয়াদে স্বর্ণসহ মূল্যবান ধাতুর বাজারকে সমর্থন দিয়ে যাবে। ফলে সাময়িক সংশোধনের পর আবারও বাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।


