লোক বদলালেই দেশ বদলায় না, সিস্টেম বদলাতে হবে: সহিংসতার বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা তথ্য উপদেষ্টার

লোক বদলালেই দেশ বদলায় না, সিস্টেম বদলাতে হবে: সহিংসতার বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা তথ্য উপদেষ্টার


নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, শুধু ব্যক্তি বা লোক বদলে দিলেই দেশের কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আসবে না; পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন পুরো সিস্টেমের সংস্কার। সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ কিংবা ককটেল বিস্ফোরণের মাধ্যমে কোনো রাজনৈতিক বা সামাজিক পরিবর্তন সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ ধরনের সহিংসতায় জড়িতরা রাজনৈতিক পরিচয় যাই হোক না কেন, তারা রাষ্ট্র ও সমাজের অভিন্ন প্রতিপক্ষ।

শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের আয়োজনে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে এসব কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে দেশের গণমাধ্যম পরিস্থিতি, সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনা এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন উপদেষ্টা।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, যারা আগুন লাগায় বা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়, তারা কোনোভাবেই গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বা রাষ্ট্রীয় সংস্কারের পক্ষের শক্তি হতে পারে না। ভিন্নমত থাকতেই পারে, সমালোচনা থাকতেই পারে; কিন্তু সহিংসতার মাধ্যমে সেই ক্ষোভ প্রকাশ করলে তা সমাজকে আরও অস্থিতিশীল করে তোলে। সংযম, যুক্তি ও সমালোচনার মধ্য দিয়েই একটি গণতান্ত্রিক সমাজকে এগিয়ে নিতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

সাম্প্রতিক এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ওই ঘটনায় উদ্ধারকাজ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে—কেন হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হয়নি বা কেন কাঁদানে গ্যাস প্রয়োগ করা হয়নি। তিনি ব্যাখ্যা করেন, ওই সময় পরিস্থিতি এমন ছিল যে হেলিকপ্টার ব্যবহার করলে বাতাসের কারণে আগুন আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা ছিল। একইভাবে কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করলেও আগুনের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারত। সে কারণে একমাত্র লক্ষ্য ছিল সেখানে আটকে পড়া ২৮ জনকে, যার মধ্যে সাংবাদিক ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরাও ছিলেন, কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতি ছাড়া নিরাপদে উদ্ধার করা।

তিনি জানান, ওই ঘটনায় দুই দফায় আগুন দেওয়া হয়েছিল। প্রথম দফায় পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও দ্বিতীয় দফার আগুনে সংশ্লিষ্ট সবাই গভীরভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। শেষ পর্যন্ত ভোর ৪টা ৩৭ মিনিটে ছাদ থেকে আটকে পড়াদের নিরাপদে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়। এই উদ্ধার অভিযানে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সমন্বয় ও পেশাদারিত্বের কথাও তিনি তুলে ধরেন।

গণমাধ্যমের ভূমিকা প্রসঙ্গে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, তিনি নিজেকে নির্লিপ্ত মনে করেন না। তবে কিছু ক্ষেত্রে প্রো-অ্যাকটিভ না হওয়ায় যেমন গণমাধ্যম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তেমনি সরকারও ক্ষতির মুখে পড়েছে। সরকার হিসেবেও এই ক্ষতির বিষয়টি তারা উপলব্ধি করেন এবং পুরো ঘটনাটি তাদের জন্য অত্যন্ত মর্মাহত হওয়ার মতো ছিল বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, কারো মতামত বা রাজনৈতিক অবস্থান পছন্দ না হলে তার জবাব হওয়া উচিত বিকল্প মত তুলে ধরা বা নতুন কোনো পত্রিকা কিংবা প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা। কোনো প্রতিষ্ঠানে আগুন লাগিয়ে বা সহিংসতা চালিয়ে সমস্যার সমাধান করা যায় না। এ ধরনের কর্মকাণ্ড শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্র, সমাজ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য ক্ষতিকর।

গণমাধ্যমের আত্মসমালোচনার প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরেন তথ্য উপদেষ্টা। তিনি বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তিনি লক্ষ্য করেছেন, প্রায় প্রতিটি মানুষ কোনো না কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শের সঙ্গে যুক্ত। অনেক সময় রাজনৈতিক পরিচয় না থাকলেও কাউকে ঘায়েল করতে রাজনৈতিক ট্যাগ লাগিয়ে দেওয়া হয়। নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত রাজনৈতিক মতাদর্শের প্রতিফলন ঘটানো যাবে না বলে তিনি স্পষ্ট করেন।

গণতন্ত্র ও গণমাধ্যমকে একে অপরের পরিপূরক উল্লেখ করে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, গণতন্ত্র থেকে গণমাধ্যমকে বিচ্ছিন্ন করার কোনো সুযোগ নেই। যারা ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে বা সহিংসতায় জড়াচ্ছে, তারা সবাই অভিন্ন প্রতিপক্ষ। নিজের বাসার সামনেও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব ঘটনার পরও পেশাদারিত্বের প্রশ্নে কোনো আপস করা হবে না।

বক্তব্যের শেষাংশে তিনি বলেন, একটি ভেঙে পড়া সিস্টেমের মধ্য দিয়েই বর্তমানে প্রশাসন পরিচালনা করতে হচ্ছে। এই সরকারকে বড় ধরনের ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে। তবে এই পুরো প্রক্রিয়ায় সরকারের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি ছিল না বলেও তিনি দাবি করেন।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ