বেলুচিস্তানের কোহলু জেলায় সেনা অভিযানে পাঁচ সন্ত্রাসী নিহত: আইএসপিআর

বেলুচিস্তানের কোহলু জেলায় সেনা অভিযানে পাঁচ সন্ত্রাসী নিহত: আইএসপিআর


আন্তর্জাতিক ডেস্ক
পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের কোহলু জেলায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পরিচালিত এক অভিযানে পাঁচজন সন্ত্রাসী নিহত হয়েছেন। শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণসংযোগ শাখা আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এ তথ্য নিশ্চিত করে। সংস্থাটি জানায়, অভিযানের সময় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সন্ত্রাসীদের তীব্র গোলাগুলি হয় এবং ঘটনাস্থল থেকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে।

আইএসপিআরের বিবৃতিতে বলা হয়, কোহলু জেলার একটি প্রত্যন্ত এলাকায় সন্ত্রাসী তৎপরতার বিষয়ে নির্ভরযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য পাওয়ার পর সেখানে অভিযান চালানো হয়। অভিযানের সময় সন্ত্রাসীরা নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে, যার জবাবে পাল্টা ব্যবস্থা নেয় সেনারা। সংঘর্ষে পাঁচজন সন্ত্রাসী নিহত হয়। পরিস্থিতি বিবেচনায় ওই এলাকায় আরও সন্ত্রাসী লুকিয়ে থাকতে পারে এমন আশঙ্কায় অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

পাকিস্তান সেনাবাহিনী দাবি করছে, নিহত সন্ত্রাসীরা ‘ফিতনা-ই-হিন্দুস্তান’ নামে পরিচিত একটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্য। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এই গোষ্ঠীকে ভারতের মদদপুষ্ট বলে অভিযোগ করা হয়। তবে এ বিষয়ে ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এসব অভিযোগ নিয়ে ভিন্নমত ও কূটনৈতিক সংবেদনশীলতা বিদ্যমান।

আইএসপিআরের তথ্য অনুযায়ী, কোহলুতে পরিচালিত অভিযানের স্থান থেকে বিভিন্ন ধরনের বিস্ফোরক, ডিটোনেটর ও অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে, যা ভবিষ্যতে নাশকতা চালানোর জন্য ব্যবহৃত হতে পারত বলে ধারণা করা হচ্ছে। উদ্ধারকৃত আলামত পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার বেলুচিস্তানের কালাত বিভাগেও পৃথক একটি অভিযানের কথা জানায় আইএসপিআর। ওই অভিযানে আটজন সন্ত্রাসী নিহত হওয়ার দাবি করে সংস্থাটি। একই দিনে খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের দেরা ইসমাইল খান জেলার কুলাচি এলাকায় আরেকটি অভিযানে দুই সন্ত্রাসী নিহত হন। নিহতদের মধ্যে একজন ছিলেন দলনেতা দিলাওয়ার, যিনি পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকাভুক্ত ছিলেন বলে জানানো হয়। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল এবং তার মাথার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল।

পাকিস্তান সেনাবাহিনী জানায়, কুলাচি অভিযানের সময়ও বিপুল অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়। এসব অভিযানের লক্ষ্য ছিল সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সাংগঠনিক সক্ষমতা দুর্বল করা এবং ভবিষ্যৎ হামলার ঝুঁকি কমানো।

বেলুচিস্তান ও খাইবার পাখতুনখাওয়া—এই দুই প্রদেশ দীর্ঘদিন ধরেই নিরাপত্তাজনিত চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। বেলুচিস্তানে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ নিয়ে অসন্তোষ, এবং সীমান্তবর্তী অঞ্চলে সশস্ত্র তৎপরতা দেশটির অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে। অন্যদিকে আফগানিস্তান সীমান্তঘেঁষা খাইবার পাখতুনখাওয়ায় বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠীর উপস্থিতি নিয়ে পাকিস্তান বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে।

পাকিস্তান সরকার ও সেনাবাহিনী দাবি করছে, সাম্প্রতিক অভিযানগুলো দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা জোরদার করার অংশ এবং সন্ত্রাসবিরোধী কৌশলের ধারাবাহিকতা। তারা বলছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

বিশ্লেষকদের মতে, টানা সামরিক অভিযানে স্বল্পমেয়াদে সশস্ত্র গোষ্ঠীর কার্যক্রমে চাপ তৈরি হলেও দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক সংলাপ, উন্নয়নমূলক উদ্যোগ এবং আঞ্চলিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া প্রয়োজন। বেলুচিস্তানের মতো সংবেদনশীল অঞ্চলে নিরাপত্তা ও উন্নয়নের সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া টেকসই সমাধান কঠিন হতে পারে বলেও তারা মত দেন।

বর্তমান পরিস্থিতিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে নজরদারি জোরদার করেছে এবং যেকোনো সম্ভাব্য হুমকি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে বলে আইএসপিআর জানিয়েছে।

আন্তর্জাতিক শীর্ষ সংবাদ