নিজস্ব প্রতিবেদক
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর বনানী কবরস্থানে নিজের ছোট ভাই, ক্রীড়া সংগঠক ও বিএনপির সাবেক নেতা প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর কবর জিয়ারত করেছেন। কোকোর মৃত্যুর প্রায় এক দশক পর এই প্রথমবারের মতো তার কবর জিয়ারত করলেন তারেক রহমান। এ সময় তাঁর সঙ্গে বিএনপির কেন্দ্রীয় পর্যায়ের একাধিক নেতা উপস্থিত ছিলেন।
দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নিবন্ধনসংক্রান্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করার পর সরাসরি বনানী কবরস্থানে যান তারেক রহমান। সেখানে তিনি কবর জিয়ারত করেন এবং প্রয়াত ভাইয়ের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করেন। কবর জিয়ারতের সময় উপস্থিত নেতারা নীরবে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কবর জিয়ারত শেষে তারেক রহমান ধানমন্ডিতে তাঁর শ্বশুরের বাসা ‘মাহবুব ভবন’-এ যাওয়ার কথা রয়েছে। দিনব্যাপী এই কর্মসূচি ব্যক্তিগত ও প্রশাসনিক—উভয় দিক থেকেই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আরাফাত রহমান কোকো বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠ পুত্র। তিনি ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে পরিচিত ছিলেন এবং বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনসহ বিভিন্ন ক্রীড়া সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। রাজনীতিতে সরাসরি সক্রিয় না থাকলেও বিএনপির সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে তাঁর ভূমিকা ছিল।
২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে আরাফাত রহমান কোকো মারা যান। সে সময় তারেক রহমান যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছিলেন। রাজনৈতিক ও আইনি পরিস্থিতির কারণে তিনি দেশে ফিরতে পারেননি এবং ভাইয়ের জানাজা ও দাফন কার্যক্রমে অংশ নেওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে কোকোর মৃত্যুর পর এই প্রথমবারের মতো তারেক রহমান তাঁর কবর জিয়ারত করলেন।
দলীয় নেতারা বলছেন, এই কবর জিয়ারত তারেক রহমানের জন্য ব্যক্তিগতভাবে আবেগঘন ও গুরুত্বপূর্ণ একটি মুহূর্ত। দীর্ঘ সময় পর দেশে এসে পরিবারের সদস্যদের স্মৃতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হওয়ার সুযোগ পাওয়াকে তাঁরা তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে দেখছেন। একই সঙ্গে এটি বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের বর্তমান অবস্থান ও ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রেক্ষাপটেও আলোচনায় এসেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের এনআইডি নিবন্ধনসহ বিভিন্ন আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনা তৈরি করেছে। এর ধারাবাহিকতায় কোকোর কবর জিয়ারতকে অনেকেই তাঁর দেশে উপস্থিতির একটি প্রতীকী ও মানবিক দিক হিসেবে দেখছেন। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে বিষয়টিকে পুরোপুরি ব্যক্তিগত কর্মসূচি হিসেবেই উল্লেখ করা হয়েছে।
কবর জিয়ারতের সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল এবং কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। বনানী কবরস্থানে স্বল্প সময় অবস্থানের পর তারেক রহমান সেখান থেকে বের হয়ে যান।
উল্লেখ্য, আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যু বিএনপি ও জিয়া পরিবারে গভীর শোকের ছায়া ফেলেছিল। দীর্ঘ সময় পর তারেক রহমানের এই কবর জিয়ারত সেই শোকের স্মৃতিকে নতুন করে সামনে নিয়ে এসেছে। রাজনৈতিক কর্মসূচির বাইরে এটি ছিল একজন ভাইয়ের পক্ষ থেকে প্রয়াত ভাইয়ের প্রতি নীরব শ্রদ্ধা নিবেদনের মুহূর্ত, যা দলীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যেও আলোচনার জন্ম দিয়েছে।


