ডেসিরে মার্টিন হত্যাকাণ্ড: সোয়াত অভিযানে বন্দুকধারীরও আত্মহত্যা

ডেসিরে মার্টিন হত্যাকাণ্ড: সোয়াত অভিযানে বন্দুকধারীরও আত্মহত্যা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকো অঙ্গরাজ্যের লাস ক্রুসেসে এক মর্মান্তিক বন্দুক হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন জনপ্রিয় গায়িকা ও অভিনেত্রী ডেসিরে মার্টিন। স্থানীয় সময় ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে শহরের বার্কশায়ার কোর্ট এলাকার একটি বাসভবনে এই ঘটনা ঘটে। হামলায় নিহত ডেসিরের বয়স ছিল মাত্র ২৯ বছর

লাস ক্রুসেস পুলিশ বিভাগ এক বিবৃতিতে জানায়, বন্দুক হামলার খবর পাওয়ার পরপরই অভিযুক্ত বন্দুকধারীকে আটক করতে পুলিশের বিশেষ বাহিনী সোয়াত (SWAT), কে-৯ (K-9) এবং কুকুর-সহায়ক ইউনিট মোতায়েন করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারণা ছিল, হামলার পর অভিযুক্ত ব্যক্তি ওই বাসভবনের ভেতরেই অবস্থান করছিলেন। বিশেষ বাহিনী ঘটনাস্থলে ঘিরে ফেলে এবং কয়েক ঘণ্টা ধরে ভেতরে থাকা ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চালায়। তবে দীর্ঘ সময় চেষ্টার পরও তার সাড়া বা যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হয়নি।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং সম্ভাব্য ঝুঁকি কমাতে বিশেষ বাহিনী সতর্ক অবস্থানে থেকে কৌশলগত অভিযান পরিচালনা করে। কয়েক ঘণ্টা পর সোয়াত টিম ভবনে প্রবেশ করলে ভেতর থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত ও ঘটনাস্থলের আলামত বিশ্লেষণে ধারণা করা হচ্ছে, গায়িকাকে গুলি করার পর বন্দুকধারী নিজেও আত্মহত্যা করেছেন। এ ঘটনার পেছনে অন্য কোনো সহযোগী বা তৃতীয় পক্ষের সম্পৃক্ততা ছিল কি না, সেটিও তদন্তের আওতায় রাখা হয়েছে।

পুলিশ আরও জানায়, নিহত ডেসিরে পেশায় একাধারে অভিনেত্রী ও সংগীতশিল্পী ছিলেন। লাস ক্রুসেসের স্থানীয় থিয়েটার ও সংগীতাঙ্গনে তিনি ছিলেন অত্যন্ত পরিচিত ও জনপ্রিয় মুখ। নিয়মিত মঞ্চ নাটক, সংগীত পরিবেশনা এবং সাংস্কৃতিক আয়োজনে অংশ নিয়ে তিনি অল্প বয়সেই নিজস্ব ভক্ত-শ্রেণি তৈরি করেছিলেন। স্থানীয় শিল্পীদের মধ্যেও তিনি ছিলেন অনুপ্রেরণার প্রতীক। থিয়েটার মহলে তার উপস্থিতি ছিল উজ্জ্বল, প্রাণবন্ত এবং সহযোগিতাপূর্ণ। সহকর্মীরা বলছেন, শিল্প-চর্চার প্রতি তার নিবেদন ছিল প্রশ্নাতীত এবং নতুন শিল্পীদের তিনি সবসময় পথ দেখাতেন।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, ঘটনার সময় ডেসিরে ওই বাসভবনে কেয়ারগিভার (সেবিকা) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন মানবিক, পরোপকারী এবং সেবামূলক কাজে উৎসাহী। পরিবারের সদস্যরা জানান, থিয়েটার ও সংগীতের পাশাপাশি তিনি মানুষের সেবা করাকেও নিজের জীবনের লক্ষ্য হিসেবে নিয়েছিলেন। সেই তাগিদ থেকেই তিনি ওই বাড়িতে কেয়ারগিভারের দায়িত্ব পালন করছিলেন।

ডেসিরের বাবা এক আবেগঘন প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “সে সবসময় মানুষকে সাহায্য করতে চাইত। কখনো কারও বিপদ দেখলে এগিয়ে যেত। অন্যকে সেবা করেই সে শান্তি পেত।” তিনি আরও জানান, সেবামূলক কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখাই ছিল ডেসিরের নিত্যদিনের জীবনদর্শন। এ কারণেই পেশাদার অভিনয় ও সংগীতের ব্যস্ততার মাঝেও তিনি কেয়ারগিভারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন।

হামলার ঘটনায় স্থানীয় কমিউনিটি, থিয়েটার মহল ও সংস্কৃতিকর্মীদের মাঝে গভীর শোক ও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। শহরের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন, থিয়েটার গ্রুপ ও শিল্পী-সমাজ ডেসিরের মৃত্যুতে শোকবার্তা দিয়েছে এবং সহিংসতার বিরুদ্ধে সোচ্চার অবস্থান নিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনও ঘটনার নিরপেক্ষ, পূর্ণাঙ্গ ও স্বচ্ছ তদন্ত নিশ্চিত করার আশ্বাস দিয়েছে।

এই হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক সহিংসতা, মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ঝুঁকিপূর্ণ গৃহপরিবেশে সেবাকর্মীদের নিরাপত্তা এবং কমিউনিটি-ভিত্তিক সুরক্ষা ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্থানীয় পর্যায়ে শিল্পী ও সেবাকর্মীদের জন্য ঝুঁকি-নিরূপণ, সুরক্ষা প্রোটোকল, আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা, দ্রুত-প্রতিক্রিয়া টিম এবং সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামো জোরদার করা জরুরি।

ডেসিরে মার্টিনের এই অকাল মৃত্যু শুধু তার পরিবারের জন্যই নয়, বরং লাস ক্রুসেসের সংস্কৃতি-জগতের জন্যও এক অপূরণীয় ক্ষতি। তার স্মৃতি, শিল্প-অবদান এবং মানবিক কাজের আদর্শ স্থানীয় শিল্পী-সমাজ ও সেবাকর্মীদের মাঝে দীর্ঘদিন অনুরণন হয়ে থাকবে।

বিনোদন শীর্ষ সংবাদ