জামায়াত–এনসিপির আসন সমঝোতা চূড়ান্ত পর্যায়ে, শিগগিরই জোট ঘোষণা

জামায়াত–এনসিপির আসন সমঝোতা চূড়ান্ত পর্যায়ে, শিগগিরই জোট ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মধ্যে জোট ও আসন সমঝোতার বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। রোববার অথবা সোমবারের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে জোট ঘোষণা আসতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানায়, জামায়াতের সঙ্গে এনসিপি এবং আট দলের একটি বৃহত্তর জোটের আসন সমঝোতা প্রায় সম্পন্ন হয়েছে।

সূত্র অনুযায়ী, এনসিপিকে ৩০টি আসনে প্রার্থী দেওয়ার সুযোগ দিচ্ছে জামায়াত। পাশাপাশি আট দলসহ অন্যান্য শরিকদের জন্য মোট ১১০টি আসন ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে জামায়াতের সঙ্গে আসন সমঝোতার প্রশ্নে এনসিপির ভেতরে মতবিরোধ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে। দলটির একটি অংশের দাবি ছিল আরও বেশি আসন পাওয়ার, যা চূড়ান্ত সমঝোতায় পূরণ হয়নি।

দলীয় সূত্র জানায়, শুক্রবার রাতেই জামায়াত ও এনসিপির শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে মূল সিদ্ধান্তে পৌঁছানো হয়। এনসিপি শুরুতে ৫৬টি আসন দাবি করলেও শেষ পর্যন্ত ৩০টি আসনে সমঝোতা হয়েছে। এনসিপির সঙ্গে থাকা এবি পার্টিকে ৩টি আসন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। দলটি আগে ১২টি আসনের দাবি করেছিল বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, তাদের সমঝোতা সরাসরি জামায়াতের সঙ্গে নয়; বরং আট দলের জোটের সঙ্গেই আলোচনা হয়েছে। এবি পার্টির প্রাপ্ত আসনের বিষয়ে তিনি বলেন, জোটের পক্ষ থেকে যিনি সমন্বয়ের দায়িত্বে আছেন, তিনিই বিষয়টি দেখছেন।

বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, ৩০০ আসনের সংসদে জামায়াত শরিক দলগুলোর জন্য তুলনামূলকভাবে বড় পরিসরে আসন ছাড় দিচ্ছে। এনসিপির সঙ্গে সমঝোতার পাশাপাশি আট দলের মধ্যে আসন বণ্টন নিয়েও আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। তবে এ জোটের ভেতর সবচেয়ে বেশি দরকষাকষি করছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন দলটিকে প্রাথমিকভাবে ৩৫টি আসন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও দলটি এখন সেই প্রস্তাবে সম্মতি দেয়নি। তাদের দাবি ১২০টি আসন।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রচার সম্পাদক শেখ ফজলুল করিম মারুফ বলেন, ন্যূনতম ৫০টি আসন না পেলে সমঝোতা কঠিন হতে পারে। তবে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, দ্রুতই বিষয়টির সমাধান হবে বলে তারা আশা করছেন।

জামায়াত যে ১১০টি আসন ছাড়ছে বলে আলোচনা হচ্ছে, তার মধ্যে বিভিন্ন দলের মধ্যে বণ্টনের একটি খসড়া তালিকাও আলোচনায় এসেছে। সেই অনুযায়ী খেলাফত মজলিস ১৫টি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ১০টি, এলডিপি ৩টি, লেবার পার্টি ৩টি, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি (বিডিপি) ২টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) ৩টি, খেলাফত আন্দোলন ৪টি এবং নেজামে ইসলাম পার্টি ২টি আসনে প্রার্থী দিতে পারে।

এ বিষয়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব যোবায়ের বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত অনেক তথ্য সঠিক নয়। তবে তিনি স্বীকার করেন যে আট দলের জোট এবং এনসিপিসহ আরও কয়েকটি দলের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা চলছে এবং তা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। তিনি জানান, শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে বিস্তারিত জানানো হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই সমঝোতা চূড়ান্ত হলে আসন্ন নির্বাচনে জোট রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি হতে পারে। তবে বিভিন্ন দলের অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ ও দাবিদাওয়া কীভাবে সমাধান হয়, সেটির ওপরই নির্ভর করবে জোটের স্থায়িত্ব ও নির্বাচনী কৌশল।

রাজনীতি শীর্ষ সংবাদ