অনলাইন ডেস্ক
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জামায়াতসহ সমমনা আটটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোটগতভাবে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামীকাল (৩০ ডিসেম্বর) এনসিপির পক্ষ থেকে ৩০০ আসনের জন্য চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হবে।
রোববার (২৮ ডিসেম্বর) রাতে রাজধানীর বাংলামোটরের অস্থায়ী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ ইসলাম বলেন, “নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য এবং বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে আমরা জামায়াতসহ সমমনা আট দলের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেব। আগামীকাল আমরা চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করব।”
নাহিদ ইসলাম জানান, এনসিপি শুরু থেকেই আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনেই এককভাবে প্রার্থী দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে প্রস্তুতি চালিয়ে আসছিল। সে লক্ষ্যে দলটি সারা দেশ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের আবেদন আহ্বান করে এবং প্রাথমিক যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া পরিচালনা করছিল। পরে নির্বাচন-পরবর্তী রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্নে আরও দুইটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে ‘সংস্কার জোট’ গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যার আওতায় তিন দল একত্রে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছিল এনসিপি। তবে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যাকাণ্ডের পর দেশের নির্বাচনি প্রেক্ষাপটে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসে বলে নাহিদ ইসলাম উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, “শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যার ঘটনা দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে এবং নির্বাচনি পরিবেশের সামগ্রিক প্রেক্ষাপট নতুন করে বিবেচনা করার প্রয়োজন তৈরি করেছে। এমন পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু নির্বাচন ও ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা সামনে রেখে আমরা বৃহত্তর জোটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
সংবাদ সম্মেলনে এনসিপি আহ্বায়ক বলেন, নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক করার লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আস্থাভিত্তিক ঐক্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। “আমাদের অবস্থান থেকে আমরা বিশ্বাস করি, বহুদলীয় অংশগ্রহণ ও রাজনৈতিক বোঝাপড়াই নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করে তোলে। আমরা তাই ঐক্যকে অগ্রাধিকার দিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি,” যোগ করেন তিনি।
এনসিপির জোটগত সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনা তৈরি হয়েছে। জামায়াতসহ সমমনা আটটি দলের সঙ্গে এনসিপির ঐক্য নির্বাচনি হিসাব-নিকাশে কী ধরনের প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা নানা মূল্যায়ন দিচ্ছেন। তবে এনসিপি নেতৃত্ব সংবাদ সম্মেলনে স্পষ্টভাবে জানায়, জোটের উদ্দেশ্য নির্বাচনে অংশ নেওয়ার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক সমঝোতা শক্তিশালী করা এবং নির্বাচন-পরবর্তী রাষ্ট্র সংস্কার ও জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যুতে একযোগে কাজ করা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পাশাপাশি আগামীকাল জোটগত সমঝোতার রূপরেখা, নির্বাচনি সমন্বয় প্রক্রিয়া, আসন বণ্টনের নীতিগত কাঠামো এবং প্রচার-কৌশল সম্পর্কেও আনুষ্ঠানিক বক্তব্য আসতে পারে। এনসিপি ইতোমধ্যে সারা দেশে দলীয় সাংগঠনিক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তথ্য যাচাই, ভোটার মনস্তত্ত্ব বিশ্লেষণ এবং নির্বাচনি প্রচার কাঠামো প্রস্তুত করার কাজ এগিয়ে নিয়েছে। নতুন জোটগত সিদ্ধান্তের পর এ কাঠামোকে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে চূড়ান্ত করা হবে।
এ প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, “জোটের দলগুলোর সঙ্গে ইতোমধ্যে নীতিগত আলোচনা শেষ হয়েছে। আমরা সবাই একমত হয়েছি যে, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করা এখন সবচেয়ে বড় জাতীয় অগ্রাধিকার। আমাদের প্রার্থী ঘোষণা হবে সমন্বিত ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায়, যাতে জনগণের আস্থা অটুট থাকে।”
নাহিদ ইসলামের বক্তব্যে হত্যাকাণ্ডের পর উদ্ভূত রাজনৈতিক বাস্তবতায় নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ও পারস্পরিক সহযোগিতার গুরুত্ব বিশেষভাবে উঠে আসে। তবে সংবাদ সম্মেলনে তিনি কোনো পক্ষকে সরাসরি দায়ারোপ বা রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়াতে পারে—এমন মন্তব্য থেকে বিরত থাকেন।
এনসিপি নেতৃত্ব জানায়, জোটগত নির্বাচনি অংশগ্রহণের পাশাপাশি দলটি নিজস্ব নির্বাচনি অঙ্গীকার ও সংস্কার-ভাবনাগুলোও স্বতন্ত্রভাবে জনগণের সামনে তুলে ধরবে। “আমরা ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেব, তবে তা হবে জোটগত সমন্বয়ের মাধ্যমে। এতে আমাদের একক প্রস্তুতির ধারাবাহিকতাও থাকবে, আবার ঐক্যের প্রয়োজনীয়তাও রক্ষা পাবে,” বলেন নাহিদ ইসলাম।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, হত্যাকাণ্ড-পরবর্তী রাজনৈতিক মেরুকরণ, আস্থার সংকট এবং নির্বাচনি নিরাপত্তা পরিবেশের পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে ছোট ও নতুন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বৃহত্তর জোটে যাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এনসিপির এ সিদ্ধান্তও সেই বৃহত্তর প্রবণতার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এদিকে, নির্বাচন কমিশন এখনো নির্বাচনি তফসিল, আচরণবিধি ও নিরাপত্তা সমন্বয় নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। নির্বাচন ঘিরে দলগুলোর ঐক্য ও অংশগ্রহণের ঘোষণাগুলো দেশের নির্বাচনি পরিবেশে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে অনেক বিশ্লেষক মত দেন। তবে জোটের কার্যকর সমন্বয়, প্রার্থী তালিকার গ্রহণযোগ্যতা এবং প্রচার-পরিবেশের স্থিতিশীলতাই এ সিদ্ধান্তের বাস্তব ফলাফল নির্ধারণ করবে।
সংবাদ সম্মেলন শেষে নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমরা নির্বাচনে যাচ্ছি জনগণের আস্থা নিয়ে। ঐক্য ও সংস্কার—দুটো লক্ষ্যই সামনে রেখে আমরা লড়াই করব। প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হবে সময়মতো এবং জনগণ জানতে পারবে কারা কোন আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।”
এনসিপি জোটে অংশ নেওয়া দলগুলোর পূর্ণ নাম ও নেতৃত্ব কাঠামো, আসন বণ্টন ও প্রচার-সমন্বয়ের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আগামীকাল প্রকাশিত হলে নির্বাচনি মাঠে দলটির জোটগত কার্যক্রম দৃশ্যমান রূপ পাবে।


