খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক অবদানস্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা : বার্গম্যান

খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক অবদানস্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা : বার্গম্যান

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বাংলাদেশের রাজনৈতিক জীবনে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। জার্মান ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভ্যালেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবন, লড়াই ও অর্জন নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছেন।

সাক্ষাৎকারে বার্গম্যান বলেন, খালেদা জিয়াকে সবচেয়ে প্রথমে স্মরণ করা হবে ১৯৮০-এর দশকে কর্তৃত্ববাদী সরকারের বিরুদ্ধে তার নেতৃত্বে সংগঠিত আন্দোলনের জন্য। তিনি উল্লেখ করেন, তখনকার রাষ্ট্রপতি এরশাদ সরকারের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে খালেদা জিয়া এবং বিএনপি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ওই আন্দোলনের ফলে এরশাদের পতন ঘটে এবং বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়। পরবর্তীতে স্বৈরাচার পরবর্তী প্রথম নির্বাচনে বিএনপি জোটের অংশ হিসেবে জয়ী হন খালেদা জিয়া। বার্গম্যান বলেন, এটি ছিল রাজনৈতিকভাবে বিস্ময়কর, কারণ তখন সাধারণভাবে ধারণা করা হচ্ছিল যে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জয়ী হবে।

সাক্ষাৎকারে খালেদা জিয়ার আওয়ামী লীগ ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়টিও গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরা হয়। বার্গম্যান বলেন, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং নারী অধিকার রক্ষায় তার অবদান প্রশংসনীয়। তবে তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে (২০০১–২০০৬) ক্ষমতায় থাকার সময় কিছু দুর্নীতি অভিযোগের বিষয়ও উল্লেখ করেন। সাক্ষাৎকারে বার্গম্যান বলেন, “সেসময় দুর্নীতি বেড়ে গেলেও খালেদা জিয়া তাৎপর্যপূর্ণভাবে সেই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তার বিরুদ্ধে দায়ের করা দুর্নীতি মামলা ছিল খুবই দুর্বল এবং অযৌক্তিক। তদুপরি, খালেদা জিয়ার নামে কোনো উল্লেখযোগ্য সম্পদের তথ্য কখনো পাওয়া যায়নি।”

খালেদা জিয়ার বিএনপিতে প্রভাব সংক্রান্ত প্রশ্নে বার্গম্যান বলেন, অসুস্থ্যতার কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তার প্রভাব আগেই কমে গিয়েছিল। তবুও তিনি উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক ভূমিকা রেখেছেন, বিশেষ করে লন্ডনে বসবাসরত তার ছেলে তারেক রহমান দলের কার্যক্রমে তার প্রভাব বাড়াতে ভূমিকা রেখেছেন। তবে অসুস্থতার কারণে বিএনপির ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনায় তার সরাসরি ভূমিকা সীমিত ছিল।

বার্গম্যান আরও মন্তব্য করেন, খালেদা জিয়ার উত্তরাধিকার ও তারেক রহমানের উপর প্রভাব নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। তিনি মনে করেন, বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে খালেদা জিয়ার সামনে যথেষ্ট বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। তার রাজনৈতিক জীবনের অবদান, স্বৈরাচার বিরোধী নেতৃত্ব, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং নারী ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে তার ভুমিকা বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

এই সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবন ও অর্জন নিয়ে আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটেও বিশ্লেষণ পাওয়া গেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, তার নেতৃত্ব এবং সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রভাব বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও দলের কাঠামোকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ