জাতীয় ডেস্ক
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎ করেছেন নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বালা নন্দা শর্মা এবং ভুটানের পররাষ্ট্র ও বৈদেশিক বাণিজ্য মন্ত্রী লিয়নপো ডি. এন. ধুংগেল। বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনে এই সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে তাঁরা বিএনপির চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে তাঁদের দেশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক শোকবার্তা হস্তান্তর করেন।
বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) ভোরে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুতে দেশে-বিদেশে গভীর শোকের ছায়া নেমে আসে। দক্ষিণ এশিয়ার দুই ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী দেশ নেপাল ও ভুটানের শীর্ষ কূটনীতিকেরা বিশেষ সফরে ঢাকায় আসেন মূলত খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে তাঁদের দেশের শোক ও সহমর্মিতা জানাতে। সফরের অংশ হিসেবেই তাঁরা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং নিজ নিজ রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে পাঠানো শোকবার্তা আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর হাতে তুলে দেন।
সাক্ষাৎটি ছিল সংক্ষিপ্ত কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ। জাতীয় সংসদ ভবনের নির্ধারিত কূটনৈতিক লাউঞ্জে উভয় দেশের মন্ত্রীরা তারেক রহমানের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করেন এবং খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবন, বাংলাদেশ–নেপাল ও বাংলাদেশ–ভুটান সম্পর্ক উন্নয়নে তাঁর অবদানের কথা স্মরণ করেন। শোকবার্তায় তাঁরা খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর দুঃখ প্রকাশের পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে তাঁদের দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অব্যাহত রাখার প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেন।
বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, শোকবার্তা হস্তান্তরের সময় তারেক রহমান উভয় দেশের মন্ত্রীদের ধন্যবাদ জানান এবং খালেদা জিয়ার প্রতি তাঁদের দেশের সম্মান ও সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার জনগণের পারস্পরিক বন্ধন কেবল রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা জনগণ-থেকে-জনগণের সম্পর্কেও গভীরভাবে প্রোথিত।
খালেদা জিয়ার মৃত্যু বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সমাপ্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ১৯৯১ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে তিনি সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব দেন। এরপর ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনি বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক রাজনীতির বিকাশে বড় ভূমিকা পালন করেন। তাঁর নেতৃত্বে বিএনপি দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সহযোগিতা, বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে সক্রিয় অবস্থান নেয়, যার ধারাবাহিক প্রভাব নেপাল ও ভুটানের সঙ্গেও বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে পড়েছে।
নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বালা নন্দা শর্মা তাঁর শোকবার্তায় বলেন, খালেদা জিয়া ছিলেন দক্ষিণ এশিয়ার গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ এবং বাংলাদেশের জনগণের কাছে একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা। তিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং সার্ক প্রক্রিয়া জোরদারে যে ভূমিকা রেখেছেন, তা নেপালের জনগণ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে।
অন্যদিকে, ভুটানের পররাষ্ট্র ও বৈদেশিক বাণিজ্য মন্ত্রী লিয়নপো ডি. এন. ধুংগেল বলেন, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ভুটান ও বাংলাদেশের বাণিজ্য, পর্যটন এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক নতুন গতি পেয়েছিল। তাঁর মৃত্যু ভুটানের জনগণের জন্যও বেদনাদায়ক, কারণ তিনি দুই দেশের সম্পর্ককে পারস্পরিক বিশ্বাস ও সম্মানের ভিত্তিতে এগিয়ে নিতে কাজ করেছেন।
এই সফর দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান এবং আঞ্চলিক কূটনীতির গুরুত্বকে নতুনভাবে আলোচনায় এনেছে। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, খালেদা জিয়ার মৃত্যু উপলক্ষে নেপাল ও ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ঢাকা সফর এবং তারেক রহমানের সঙ্গে তাঁদের সাক্ষাৎ প্রমাণ করে যে, আঞ্চলিক কূটনীতিতে ব্যক্তিগত রাজনৈতিক নেতৃত্বও রাষ্ট্রীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব তৈরি করতে সক্ষম।
বিএনপির নেতৃত্বাধীন সরকারগুলো অতীতে নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে জলবিদ্যুৎ সহযোগিতা, ট্রানজিট সুবিধা, স্থলবাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং সার্ক কাঠামোয় বহুপাক্ষিক কূটনৈতিক উদ্যোগে সক্রিয় ছিল। বিশেষত ২০০১–২০০৬ মেয়াদে নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের স্থলবাণিজ্য বৃদ্ধি, অভিন্ন আঞ্চলিক বাণিজ্য-রুট ব্যবহারের সম্ভাবনা, এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা ইস্যুতে সহযোগিতামূলক আলোচনা অগ্রাধিকার পায়।
খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বিভিন্ন দেশ থেকে শোকবার্তা আসা অব্যাহত রয়েছে। তবে নেপাল ও ভুটানের শীর্ষ কূটনীতিকদের সশরীরে ঢাকায় এসে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের হাতে শোকবার্তা তুলে দেওয়া একটি ব্যতিক্রমী কূটনৈতিক দৃষ্টান্ত, যা দুই দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এবং আঞ্চলিক ঐক্যের বার্তাকেও জোরালো করেছে।
সাক্ষাৎ শেষে উভয় দেশের মন্ত্রীরা সংসদ ভবনের পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন এবং খালেদা জিয়ার আত্মার শান্তি কামনা করে নীরবতা পালন করেন। পরে তাঁরা বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত বৈঠক করেন, যেখানে দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, বাণিজ্য সহযোগিতা এবং আঞ্চলিক সংযোগের প্রসঙ্গ উঠে আসে।
এই কূটনৈতিক সফর ও সাক্ষাৎ বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক অঙ্গনে বিশেষ তাৎপর্য বহন করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।


