দুই এমপিসহ ২২ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা ক্যাসিনোকাণ্ড, টেন্ডারবাজি, দুর্নীতিতে জড়িত আরো ২০-২৫ জনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আসছে দুদকের

ক্যাসিনোকাণ্ড ও দুর্নীতি অনিয়মে জড়িয়ে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ক্ষমতাসীন দলের হুইপ ও সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরী ও নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনসহ ২২ জনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল বুধবার ও গত মঙ্গলবার দুদকের পরিচালক ও অনুসন্ধানদলের প্রধান সৈয়দ ইকবাল হোসেনের সই করা নিষেধাজ্ঞার চিঠি দুই দফায় পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) বিশেষ পুলিশ সুপার (ইমিগ্রেশন) বরাবর পাঠানো হয়েছে। ২২ জনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি কালের কণ্ঠকে নিশ্চিত করেছে দুদকের নির্ভরযোগ্য সূত্র। আগামী সপ্তাহে আরো ২০ থেকে ২৫ জনের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে চিঠি পাঠাবে দুদক। পাশাপাশি অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে পর্যায়ক্রমে মামলাও করবে দুদক। গত তিন দিনে জি কে শামীম ও খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াসহ সাতজনের বিরুদ্ধে চারটি মামলা করেছে দুদক।

ভোলার এমপি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, চট্টগ্রামের এমপি ও জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী ছাড়াও যাঁদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তাঁরা হলেন গ্রেপ্তার হওয়া যুবলীগ নেতা এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম, মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (বহিষ্কৃত) খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, মোহামেডান ক্লাবের পরিচালক (ইনচার্জ) মো. লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, সম্রাটের সহযোগী এনামুল হক আরমান, কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সভাপতি মোহাম্মদ শফিকুল আলম (ফিরোজ), অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা সেলিম প্রধান এবং ঢাকা উত্তর সিটির ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান (মিজান)।

আরো নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এনামুল হক এনু ও তাঁর ভাই গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রুপন ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় যুবলীগের বহিষ্কৃত দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিছুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী সুমি রহমান, লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার স্ত্রী নাবিলা লোকমান, গণপূর্ত অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুল হাই, ওয়ার্ড কাউন্সিলর এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ এবং এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার।

এ ছাড়া এনামুল হকের সহযোগী ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের কর্মচারী আবুল কালাম আজাদ (আজাদ রহমান), রাজধানীর কাকরাইলের জাকির এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. জাকির হোসেন ও সেগুনবাগিচার শফিক এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. শফিকুল ইসলামের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশে মানি লন্ডারিংসহ বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগ আছে। এ বিষয়ে দুদকের অনুসন্ধানে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগে প্রতি সপ্তাহেই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে অভিযুক্তরা অনেকে কৌশলে দেশের বাইরে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তাঁরা যাতে পালিয়ে যেতে না পারেন সে জন্য এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

দুদকের অনুসন্ধানের সঙ্গে জড়িত একজন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আগামী সপ্তাহে বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে আরো ২০ থেকে ২৫ জনের ওপর। ইতিমধ্যে ৭০ জনের বেশি ব্যক্তির বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণাদি দুদকের কাছে এসেছে। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসছে নতুন নতুন চাঞ্চল্যকর তথ্য। শুধু দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞাই নয়, প্রতিদিনই এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করাও চলমান থাকবে।’

গত ৩০ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িতদের সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের অনুসন্ধানদল গঠন করা হয়। পরে আরো দুজনকে দলে যুক্ত করা হয়। অনুসন্ধানদলের সদস্যরা গণমাধ্যমে আসা বিভিন্ন ব্যক্তির নাম যাচাই-বাছাই করে একটি প্রাথমিক তালিকা তৈরি করেন। সংস্থার গোয়েন্দা শাখার পক্ষ থেকে এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হয়। পাশাপাশি র‌্যাব ও বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধানরা সম্প্রতি দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের সঙ্গে বৈঠক করে বিপুল পরিমাণ গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করেন। সেসব তথ্য ও কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে গত সোমবার জি কে শামীম ও খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে দুটি মামলা করে দুদক। গতকাল বুধবার গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এনামুল হক এনু ও তাঁর ভাই গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রুপন ভূইয়ার বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।

Others জাতীয় শীর্ষ সংবাদ