প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শান্তি, ন্যায়বিচার ও উন্নয়ন নিশ্চিত করার পাশাপাশি সুষ্ঠুভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য রাষ্ট্রের তিনটি বিভাগ- নির্বাহী, আইন ও বিচার বিভাগের মধ্যে অবশ্যই যথাযথ সমন্বয় ও সুসম্পর্ক থাকতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমি সব সময়ে বিশ্বাস করি রাষ্ট্রের তিনটি বিভাগ নির্বাহী, আইন ও বিচার বিভাগ একটি রাষ্ট্রের জন্য অনিবার্য। এই বিভাগগুলো তাদের নিজেদের আইন অনুযায়ী পরিচালিত হবে। ন্যায়বিচার, শান্তি এবং সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে এই বিভাগগুলোর মধ্যে যথাযথ সমন্বয় জরুরি।
শেখ হাসিনা আজ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) সুপ্রীম কোর্ট আয়োজিত ‘শান্তি ও উন্নয়নের জন্য ন্যায়বিচার’ শীর্ষক দিনব্যাপী জাতীয় বিচার বিভাগীয় সম্মেলন ২০১৯ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমরা এমন একটি অবস্থান আশা করি যেখানে রাষ্ট্রের এই তিনটি বিভাগ একে অপরের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করবে না। এতে ন্যায়বিচার ও উন্নয়ন নিশ্চিত করার পাশাপাশি শান্তি বজায় রাখা ও সুষ্ঠুভাবে রাষ্ট্র পরিচালনায় বিঘ্ন ঘটবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহামান্য রাষ্ট্রপতি ‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ তৈরি করেছেন এবং এটি পরিবর্তনের কর্তৃত্ব কেবল তাঁরই। তিনি (রাষ্ট্রপতি) ‘রুলস অব বিজনেস’ও তৈরি করেছেন।
তিনি বলেন, ‘সংবিধানের ৫১(১) এবং ৫৫(৫) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির কার্যক্রম নিয়ে আদালতে কোন প্রশ্ন উঠতে পারবে না। তবে কখনো কখনো রাষ্ট্রপতির জুরিডিকশনের অধীন ইস্যুতে অর্ডার দিতে দেখছি।’
প্রধানমন্ত্রী আশা করেন যে, বিচারকরা তাদের মেধা ও সৃষ্টিশীলতা কাজে লাগানোর পাশপাশি ন্যায় বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাবেন।
শেখ হাসিনা প্রধান বিচারপতির প্রস্তাব অনুযায়ী অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো আইন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ জোরদারে আইনমন্ত্রীকে নির্দেশ দেন।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারোয়ার, সুপ্রীম কোর্টের রেজিস্ট্রার মো. আলী আকবর এবং মুন্সীগঞ্জের সিনিয়র দায়রা জজ হোসনে আরা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এবং সারা দেশের নিম্ন আদালতের বিচারকগণ সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন।
জাতীয় বিচার বিভাগীয় সম্মেলন উপলক্ষে অনুষ্ঠানে একটি ভিডিও তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয় ।
শেখ হাসিনা বিদেশী ভাষায় বেশিরভাগ মামলার বাদি-বিবাদির স্বল্প জ্ঞানের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ইংরেজির পাশাপাশি বাংলায় মামলার রায় দেওয়ার জন্য বিচারপতিদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘ইংরেজিতে স্বল্প জ্ঞানের কারণে আধিকাংশ বাদি-বিবাদিকে মামলার রায় বুঝার জন্য তাদের আইনজীবীদের ওপর নির্ভর করতে হয়। মামলা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কোন রায়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ সম্পর্কে জানার কোন সুযোগ নেই এবং বহু ক্ষেত্রে এজন্য তাদেরকে হয়রানির শিকার হতে হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অতএব ইংরেজির পাশাপাশি বাংলায় বিচারের রায় প্রকাশ করা প্রয়োজন।’
তিনি আরো বলেন, বিচারপতিগণ ইংরেজিতে রায় লিখতে পারবেন, তবে বাংলায় প্রকাশেরও ব্যবস্থা থাকা দরকার।
শেখ হাসিনা বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত ইভ-টিজিং, পাবলিক পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন, চাঁদাবাজি, যানবাহন ও পরিবেশ সংশ্লিষ্ট অপরাধ, পণ্যমূল্য বৃদ্ধি ও ভেজাল ইত্যাদি বিভিন্ন অপরাধ দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এ জন্য তিনি এই আদালতের আরো কার্যকর ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি বলেন, ‘আরো কার্যকর উপায়ে ভ্রম্যমান আদালত ব্যবহার করা গেলে আইন-শৃংখলা বজায় রাখা, অপরাধ দমন ও জনস্বার্থ সংরক্ষণ সম্ভব হতো।’
তিনি বলেন, ক্ষুদে অপরাধের বিচারে ভ্রাম্যমান আদাতের কার্যক্রম বিচার বিভাগের উপর চাপ কমাতে পারে এবং ঘটনাস্থলে শাস্তি দেয়ার ফলে জনগণের আস্থা বৃদ্ধি পায়।
তিনি আরো বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত গত ১০ বছরে চার লাখ ১১ হাজার ৮শ’ অভিযান পরিচালনা করেছে। এ পর্যন্ত মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে ১০ লাখ ১০হাজার ৩৩৪টি এবং এতে জরিমানা হিসাবে আদায় হয়েছে ২৯২ কোটি টাকা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু কেবল সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন এবং সেই সময়ের মধ্যে তিনি সংবিধান প্রনয়ণসহ দেশের সকল মৌলিক উন্নয়নের ভিত্তিস্থাপন করেছিলেন।
তিনি বলেন, ওই সংবিধানে দেশের জনগণের ন্যায় বিচার এবং আইনের শাসন নিশ্চিত করা হয়।
তিনি আরো বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর দেশের সব ধরনের উন্নয়ন প্রক্রিয়া থেমে যায়।
ইনডেমনিটি আইন বাতিলের রায় দিয়ে জাতির পিতার হত্যার বিচারের পথ সুগম করার জন্য প্রধানমন্ত্রী বিচার বিভাগকে ধন্যবাদ জানান।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাকে এই হত্যাকান্ডের বিচার চেয়ে মামলা করতে না দেওয়ায় তারা দীর্ঘদিন এর বিচার পাননি।
তিনি আরো বলেন, ১৯৯৬ সালে দেশের দায়িত্ব গ্রহণের পর ‘আমরা ইনডেমনিটি আইন বাতিল এবং বিচার কার্য শুরু করি।
শেখ হাসিনা বলেন, ইতোমধ্যে এই বিচার সম্পন্ন হয়েছে এবং কয়েকজন অপরাধীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। কয়েকজন পলাতক রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে সামরিক স্বৈরশাসকদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলকে অবৈধ বলে অভিহিত করার কারণে বিচার বিভাগের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আদালতের রায় দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে এবং দেশের উন্নয়নের বজায় রাখতে সহায়তা করবে।’
ফেনী মাদরাসার ছাত্রী নুসরাত হত্যার মতো কয়েকটি চাঞ্চল্যকর মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই রায়ের মাধ্যমে বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস বৃদ্ধি পেয়েছে।
দেশে আইন-শৃঙ্খলা এবং সুবিচার নিশ্চিতে বিচার বিভাগের উন্নয়নে তাঁর সরকার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের বর্ণনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ লক্ষ্যে সরকার পর্যাপ্ত সংখ্যক বিচারক নিয়োগ দিয়েছে এবং দেশব্যাপী আদালত ভবনের সংকট নিরসন এবং বিচারকদের আবাসন নিশ্চিতে পর্যাপ্ত অবকাঠামো স্থাপন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী কুখ্যাত অপরাধীদের ঝুঁকি মোকাবেলায় বিচারকদের যথাযথ নিরাপত্তা দেওয়ার আশ্বাস দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বিচারকদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে আবাসিক কমপ্লেক্সটি নির্মিত হয়েছিল।
তিনি উল্লেখ করেন, তাঁর সরকার অসহায়, দরিদ্র এবং সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য ন্যায়বিচার পাওয়ার পথ প্রশস্ত করার জন্য আইনী সহায়তা পরিসেবা আইন-২০০০ কার্যকর করেছে।
বাংলাদেশ একটি ডিজিটাল দেশে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের বিচার ব্যবস্থায় মামলা জট ও দীর্ঘসূত্রিতা দূর করার জন্য ই-জুডিসিয়ারি ব্যবস্থার প্রবর্তন জরুরি।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, অপরাধীদের পরিবহণের ঝুঁকি কমাতে ভার্চুয়াল আদালতের মাধ্যমে কুখ্যাত অপরাধীদের বিচার হতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, ই-জুডিসিয়ারি পদ্ধতি মামলাকারীদের কোনও প্রকার ঝামেলা ছাড়াই রায়ের নকল অনুলিপি পেতে সহায়তা করবে। আমরা ইতোমধ্যে সুপ্রিম কোর্ট এবং ১৩টি জেলায় ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ডের মাধ্যমে মামলার তালিকা প্রদর্শন চালু করেছি এবং পর্যায়ক্রমে অন্যান্য জেলায় এটি চালু করা হবে বলে তিনি বলেন।
বিচার বিভাগে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মহিলা বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার সর্বপ্রথম সর্বোচ্চ আদালতে একজন মহিলা বিচারপতি নিয়োগ দিয়েছিল। বিচার বিভাগের সক্ষমতা বাড়াতে এবং প্রয়োজনীয় আদালত কক্ষের সংকট কমাতে তাঁর সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা ১২৮ জেলায় জেলা জজ আদালত ভবন সম্প্রসারণ করেছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধাসহ সুপ্রিম কোর্টের ভবন নির্মাণ ও সম্প্রসারণের জন্য ইতোমধ্যে একটি প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। সরকার ইতোমধ্যে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজদের জন্য ১ শ’ ২৮টি গাড়ি কেনার অনুমোদন দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্র (এসডিজি) অর্জনের জন্য তাঁর সরকার সবার জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শান্তি, ন্যায়বিচার ও উন্নয়ন নিশ্চিত করার পাশাপাশি সুষ্ঠুভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য রাষ্ট্রের তিনটি বিভাগ- নির্বাহী, আইন ও বিচার বিভাগের মধ্যে অবশ্যই যথাযথ সমন্বয় ও সুসম্পর্ক থাকতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমি সব সময়ে বিশ্বাস করি রাষ্ট্রের তিনটি বিভাগ নির্বাহী, আইন ও বিচার বিভাগ একটি রাষ্ট্রের জন্য অনিবার্য। এই বিভাগগুলো তাদের নিজেদের আইন অনুযায়ী পরিচালিত হবে। ন্যায়বিচার, শান্তি এবং সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে এই বিভাগগুলোর মধ্যে যথাযথ সমন্বয় জরুরি।
শেখ হাসিনা আজ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) সুপ্রীম কোর্ট আয়োজিত ‘শান্তি ও উন্নয়নের জন্য ন্যায়বিচার’ শীর্ষক দিনব্যাপী জাতীয় বিচার বিভাগীয় সম্মেলন ২০১৯ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমরা এমন একটি অবস্থান আশা করি যেখানে রাষ্ট্রের এই তিনটি বিভাগ একে অপরের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করবে না। এতে ন্যায়বিচার ও উন্নয়ন নিশ্চিত করার পাশাপাশি শান্তি বজায় রাখা ও সুষ্ঠুভাবে রাষ্ট্র পরিচালনায় বিঘ্ন ঘটবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহামান্য রাষ্ট্রপতি ‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ তৈরি করেছেন এবং এটি পরিবর্তনের কর্তৃত্ব কেবল তাঁরই। তিনি (রাষ্ট্রপতি) ‘রুলস অব বিজনেস’ও তৈরি করেছেন।
তিনি বলেন, ‘সংবিধানের ৫১(১) এবং ৫৫(৫) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির কার্যক্রম নিয়ে আদালতে কোন প্রশ্ন উঠতে পারবে না। তবে কখনো কখনো রাষ্ট্রপতির জুরিডিকশনের অধীন ইস্যুতে অর্ডার দিতে দেখছি।’
প্রধানমন্ত্রী আশা করেন যে, বিচারকরা তাদের মেধা ও সৃষ্টিশীলতা কাজে লাগানোর পাশপাশি ন্যায় বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাবেন।
শেখ হাসিনা প্রধান বিচারপতির প্রস্তাব অনুযায়ী অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো আইন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ জোরদারে আইনমন্ত্রীকে নির্দেশ দেন।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারোয়ার, সুপ্রীম কোর্টের রেজিস্ট্রার মো. আলী আকবর এবং মুন্সীগঞ্জের সিনিয়র দায়রা জজ হোসনে আরা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এবং সারা দেশের নিম্ন আদালতের বিচারকগণ সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন।
জাতীয় বিচার বিভাগীয় সম্মেলন উপলক্ষে অনুষ্ঠানে একটি ভিডিও তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয় ।
শেখ হাসিনা বিদেশী ভাষায় বেশিরভাগ মামলার বাদি-বিবাদির স্বল্প জ্ঞানের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ইংরেজির পাশাপাশি বাংলায় মামলার রায় দেওয়ার জন্য বিচারপতিদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘ইংরেজিতে স্বল্প জ্ঞানের কারণে আধিকাংশ বাদি-বিবাদিকে মামলার রায় বুঝার জন্য তাদের আইনজীবীদের ওপর নির্ভর করতে হয়। মামলা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কোন রায়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ সম্পর্কে জানার কোন সুযোগ নেই এবং বহু ক্ষেত্রে এজন্য তাদেরকে হয়রানির শিকার হতে হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অতএব ইংরেজির পাশাপাশি বাংলায় বিচারের রায় প্রকাশ করা প্রয়োজন।’
তিনি আরো বলেন, বিচারপতিগণ ইংরেজিতে রায় লিখতে পারবেন, তবে বাংলায় প্রকাশেরও ব্যবস্থা থাকা দরকার।
শেখ হাসিনা বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত ইভ-টিজিং, পাবলিক পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন, চাঁদাবাজি, যানবাহন ও পরিবেশ সংশ্লিষ্ট অপরাধ, পণ্যমূল্য বৃদ্ধি ও ভেজাল ইত্যাদি বিভিন্ন অপরাধ দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এ জন্য তিনি এই আদালতের আরো কার্যকর ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি বলেন, ‘আরো কার্যকর উপায়ে ভ্রম্যমান আদালত ব্যবহার করা গেলে আইন-শৃংখলা বজায় রাখা, অপরাধ দমন ও জনস্বার্থ সংরক্ষণ সম্ভব হতো।’
তিনি বলেন, ক্ষুদে অপরাধের বিচারে ভ্রাম্যমান আদাতের কার্যক্রম বিচার বিভাগের উপর চাপ কমাতে পারে এবং ঘটনাস্থলে শাস্তি দেয়ার ফলে জনগণের আস্থা বৃদ্ধি পায়।
তিনি আরো বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত গত ১০ বছরে চার লাখ ১১ হাজার ৮শ’ অভিযান পরিচালনা করেছে। এ পর্যন্ত মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে ১০ লাখ ১০হাজার ৩৩৪টি এবং এতে জরিমানা হিসাবে আদায় হয়েছে ২৯২ কোটি টাকা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু কেবল সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন এবং সেই সময়ের মধ্যে তিনি সংবিধান প্রনয়ণসহ দেশের সকল মৌলিক উন্নয়নের ভিত্তিস্থাপন করেছিলেন।
তিনি বলেন, ওই সংবিধানে দেশের জনগণের ন্যায় বিচার এবং আইনের শাসন নিশ্চিত করা হয়।
তিনি আরো বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর দেশের সব ধরনের উন্নয়ন প্রক্রিয়া থেমে যায়।
ইনডেমনিটি আইন বাতিলের রায় দিয়ে জাতির পিতার হত্যার বিচারের পথ সুগম করার জন্য প্রধানমন্ত্রী বিচার বিভাগকে ধন্যবাদ জানান।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাকে এই হত্যাকান্ডের বিচার চেয়ে মামলা করতে না দেওয়ায় তারা দীর্ঘদিন এর বিচার পাননি।
তিনি আরো বলেন, ১৯৯৬ সালে দেশের দায়িত্ব গ্রহণের পর ‘আমরা ইনডেমনিটি আইন বাতিল এবং বিচার কার্য শুরু করি।
শেখ হাসিনা বলেন, ইতোমধ্যে এই বিচার সম্পন্ন হয়েছে এবং কয়েকজন অপরাধীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। কয়েকজন পলাতক রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে সামরিক স্বৈরশাসকদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলকে অবৈধ বলে অভিহিত করার কারণে বিচার বিভাগের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আদালতের রায় দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে এবং দেশের উন্নয়নের বজায় রাখতে সহায়তা করবে।’
ফেনী মাদরাসার ছাত্রী নুসরাত হত্যার মতো কয়েকটি চাঞ্চল্যকর মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই রায়ের মাধ্যমে বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস বৃদ্ধি পেয়েছে।
দেশে আইন-শৃঙ্খলা এবং সুবিচার নিশ্চিতে বিচার বিভাগের উন্নয়নে তাঁর সরকার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের বর্ণনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ লক্ষ্যে সরকার পর্যাপ্ত সংখ্যক বিচারক নিয়োগ দিয়েছে এবং দেশব্যাপী আদালত ভবনের সংকট নিরসন এবং বিচারকদের আবাসন নিশ্চিতে পর্যাপ্ত অবকাঠামো স্থাপন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী কুখ্যাত অপরাধীদের ঝুঁকি মোকাবেলায় বিচারকদের যথাযথ নিরাপত্তা দেওয়ার আশ্বাস দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বিচারকদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে আবাসিক কমপ্লেক্সটি নির্মিত হয়েছিল।
তিনি উল্লেখ করেন, তাঁর সরকার অসহায়, দরিদ্র এবং সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য ন্যায়বিচার পাওয়ার পথ প্রশস্ত করার জন্য আইনী সহায়তা পরিসেবা আইন-২০০০ কার্যকর করেছে।
বাংলাদেশ একটি ডিজিটাল দেশে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের বিচার ব্যবস্থায় মামলা জট ও দীর্ঘসূত্রিতা দূর করার জন্য ই-জুডিসিয়ারি ব্যবস্থার প্রবর্তন জরুরি।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, অপরাধীদের পরিবহণের ঝুঁকি কমাতে ভার্চুয়াল আদালতের মাধ্যমে কুখ্যাত অপরাধীদের বিচার হতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, ই-জুডিসিয়ারি পদ্ধতি মামলাকারীদের কোনও প্রকার ঝামেলা ছাড়াই রায়ের নকল অনুলিপি পেতে সহায়তা করবে। আমরা ইতোমধ্যে সুপ্রিম কোর্ট এবং ১৩টি জেলায় ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ডের মাধ্যমে মামলার তালিকা প্রদর্শন চালু করেছি এবং পর্যায়ক্রমে অন্যান্য জেলায় এটি চালু করা হবে বলে তিনি বলেন।
বিচার বিভাগে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মহিলা বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার সর্বপ্রথম সর্বোচ্চ আদালতে একজন মহিলা বিচারপতি নিয়োগ দিয়েছিল। বিচার বিভাগের সক্ষমতা বাড়াতে এবং প্রয়োজনীয় আদালত কক্ষের সংকট কমাতে তাঁর সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা ১২৮ জেলায় জেলা জজ আদালত ভবন সম্প্রসারণ করেছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধাসহ সুপ্রিম কোর্টের ভবন নির্মাণ ও সম্প্রসারণের জন্য ইতোমধ্যে একটি প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। সরকার ইতোমধ্যে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজদের জন্য ১ শ’ ২৮টি গাড়ি কেনার অনুমোদন দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্র (এসডিজি) অর্জনের জন্য তাঁর সরকার সবার জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর।