কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
আওয়ামীলীগের এমপি হলেও দলের নেতা-কর্মীদের সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। সব সময় জামাত-বিএনপিকে ঘাড়ে নিয়ে চলেন তিনি। নিজ দলের নেতাদের সাইজ করতেও তিনি কুন্ঠাবোধ করেন না। এসব অভিযোগ কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনের আওয়ামীলীগ দলীয় এমপি আব্দুর রউফের বিরুদ্ধে। শনিবার দুপুরে খোকসা উপজেলা আওয়ামীলীগের কার্যালয়ে নিজ দলের নেতা-কর্মীরা এমপি আব্দুর রউফের বিরদ্ধে এসব অভিযোগ তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলন করেন। নিজ দলের নেতা এক ইউপি চেয়ারম্যানকে প্রকাশ্যে প্রাণনাশের হুমকি দেয়ার ঘটনায় এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন উপজেলা আওয়ামীলীগ। সম্মেলনে নেতারা দলীয় এমপি আব্দুর রউফ’র বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ তুলে ধরে বলেন, দলীয় নেতা-কর্মীদের সাথে এমপির কোন সম্পর্ক নেই। এলাকার বিএনপি-জামায়াত কর্মী সমর্থকদের সাথে নিয়ে এমপি সব সময় চলাফেরা করেন। বিএনপি-জামায়াতের লোকদের নিয়ে স্থানীয় সাংসদ আওয়ামীলীগ নেতাদের হত্যার ষড়যন্ত্র করছেন বলেও অভিযোগ করেন নেতারা। এসময় উপস্থিত ছিলেন খোকসা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বাবুল আখতার, সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র প্রভাষক তারিকুল ইসলাম তারিকসহ আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের কয়েকশ নেতাকর্মী।
সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা কৃষক লীগের যুগ্ম সম্পাদক আলতাফ হোসেন বলেন, আমাদের এমপি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে জয়লাভ করলেও দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। এলাকার বিএনপি-জামায়াতের কর্মী সমর্থকরা এখন এমপি’র লোক বনে গেছেন। এমপি’র ক্ষমতার দাপটে এলাকার জামায়াত সমর্থকরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীদের নিয়ে এমপি আমাদের লোকদের গণপিটুনী দিয়ে মেরে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন। হমকীর পর থেকে তিনি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। যে কোন সময় প্রাণহানীর আশংকা করছেন তিনি। নিজ দলের এমপি হওয়ায় তিনি এমপি’র বিরুদ্ধে কার কাছে অভিযোগ দেবেন তা বুঝে উঠতে পারছেন না বলেও জানান। ওসমানপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর হক বলেন, জামায়াত অধ্যুষিত কলতলা গ্রামে আওয়ামীলীগ নেতা ইউপি চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান বাবলুকে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র করা হয়। সেই এলাকায় গিয়ে শুক্রবার দুপুরে তিনি শত শত লোকের সামনে তিনি বলেছেন গণপিটুনী দিয়ে কেন চেয়ারম্যানকে মেরে ফেললে না কেন? তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এমপি সাহেব আমাদের দলের লোক। তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে এমপি হয়েছেন। তার জন্য আমরা সাধারণ কর্মীরা জীবন দিতে পারি। আর এমপি সাহেব তারই এক সহকর্মী আওয়ামীলীগ নেতা জনপ্রিয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বাবলুকে গণপিটুনী দিয়ে মেরে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন। তাহলে এমপি সাহেব থাকবেন কাদের নিয়ে ? তিনি বলেন, এমপি সাহেব এখানে এমন এক পরিবেশ সৃষ্টি করছেন যাতে তিনিই যে কোন দিন না জানি গণপিটুনীর শিকার না হয়ে যান !
সুত্রে জানা যায়, খোকসার ওসমানপুরে গ্রামের ভেতর দিয়ে দ্রুত মোটরসাইকেল চালানোর ঘটনা কেন্দ্র করে পরাজিত ইউপি কাউন্সিলর প্রার্থী ও বর্তমান কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকরদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার নিষ্পত্তির জন্য ২৬ এপ্রিল উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি ও ওসমানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান বাবলু দু’পক্ষকে নিয়ে সালিশি বৈঠকে বসেন। বৈঠক চলাকালে মসজিদ থেকে মাইকিং করে দু’পক্ষের লোকাজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে কমপক্ষে ২৩ নারী পুরুষ ও শিশু আহত হয় এবং ব্যাপক লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গত ২৮ এপ্রিল ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান স্থানীয় সাংসদ আব্দুর রউফ। এসময় বিএনপি-জামায়াত অধ্যুষিত এলাকা বলে পরিচিত কলতলা গ্রামে সাংসদ আব্দুর রউফ প্রকাশ্যে আওয়ামীলীগ নেতা ও ওসমানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান বাবলুকে গণপিটুনী দিয়ে মেরে ফেলতে তার কর্মী-সমর্থকদের নির্দেশ দেন। এ ঘটনায় পরের দিন দুপক্ষই থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের করেন। জামাত সমর্থক এক গ্রুপের নেতা জহুরুলের সমর্থক আসলাম আলী বাদী হয়ে ৩৪ জনকে আসামী করে একটি মামলা দিয়েছেন। অপরদিকে আওয়ামীলীগ নেতা ফারুক হোসেনের দায়েরকৃত মামলায় প্রতিপক্ষের ১৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। দুটি মামলায় খোকসা থানায় দায়ের হয়েছে। এদিকে মামলা পাল্টা মামলার ঘটনায় পুরুষ শুন্য হয়ে পড়েছে ওসমান ইউনিয়নের কলাতলা গ্রাম। আতংকের ছাপ লেগে রয়েছে মানুষের চোখে মুখে। এদিকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে এমপি আব্দুর রউফ প্রাণ নাশের হুমকীর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, যারা এসব বলছে তারা সবাই আমার প্রতিপক্ষ। শুক্রবার আমি সরেজমিনে ওই এলাকায় গিয়েছিলাম। সেখানে শত শত লোকের সামনে আমি বলেছি তোমাদের ওপর এভাবে হামলা করলো, বাড়ি-ঘর ভাংচুর করলো তোমরা প্রতিরোধ করলে না কেন? কাউকে উদ্দেশ্য করে তিনি কোন কথা বা কাউকে হত্যা করার কথা তিনি বলেন নি বলে দাবি করেন।