নিজস্ব প্রতিবেদক;
আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিসেস লিমিটেডের (আইএলএফএসএল) আর্থিক পরিস্থিতি জানতে প্রতিষ্ঠানটির স্বাধীন চেয়ারম্যান ইব্রাহিম খালেদকে ডেকেছেন আপিল বিভাগ। আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি তাকে স্বশরীরে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে নির্বাহী পরিচালকের নীচে নন বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন একজন কর্মকর্তাকেও ওইদিন হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ আজ রবিবার এ আদেশ দিয়েছেন। আইএলএফএসএল-এর করা এক আবেদনে এ আদেশ দেন আদালত।
আবেদনকারীপক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম, ব্যারিস্টার খায়রুল আলম চৌধুরী। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান।
এই শুনানিকালে আদালত উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ব্যাংকসহ দেশের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা দেখে আদালত চোখ বন্ধ করে থাকতে পারে না। আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনারা আর্থিক খাতকে বাঁচান। শুনানিকালে আদালত দুদকের আইনজীবীর কাছে বহুল আলোচিত প্রশান্ত কুমার (পিকে) হালদারের সম্পর্কে জানতে চান। পিকে হালদারের বিষয়ে দুদক কি পদক্ষেপ নিয়েছে তা জানতে চান। আদালত দুদকের আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনারা কি শুধুই চুনোপুটি ধরছেন?
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে জনগণের আমানত রাখা হয়। কিন্তু সেই আমানত যেভাবে লুটপাট হচ্ছে তাতে ব্যাংক সংশ্লিষ্ট আর্থিক খাত ভয়ংকর পরিণতির দিকে যাচ্ছে। যারা এই টাকা লুটপাটে জড়িত তাদের ব্যাপারে আদালত কঠোর ভূমিকা রাখতে পারেন।
দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, দুদক পিকে হালদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। মামলা হয়েছে। নিম্ন আদালতে আবেদন দিয়েছে। সংশ্লিষ্টদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করার আদেশ দিয়েছেন। সকল বন্দরে তার বিরুদ্ধে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, দুদক যখন যার বিরুদ্ধে অভিযোগ পাচ্ছে তা অনুসন্ধান করে সত্যতা পেলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে।
আদালতের আদেশের পর অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের বাস্তবিক পক্ষে অর্থনৈতিক অবস্থা কি রকম আছে, অবসান হওয়ার মতো অবস্থায় আছে কি না, আর্থিক অনিয়ম হলে কোন পর্যায়ে আছে তা ব্যাখ্যা করতে ওই দুজনকে হাজির হতে বলা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটি দেউলিয়া ঘোষণা ও তাদের পাওনা ফেরত চেয়ে কয়েকজন আমানতকারীর করা আবেদনে হাইকোর্ট গত ১৯ জানুয়ারি এক আদেশে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্ণর ইব্রাহিম খালেদকে আইএলএফএসএল-এর স্বাধীন চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেন। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান চেয়ারম্যান, এমডি, বহুল আলোচিত প্রশান্ত কুমার হালদারসহ ১৩ পরিচালকের ব্যাংক হিসাব ও পাসপোর্ট জব্দ, সকল সম্পদ ক্রোক করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
একইসঙ্গে প্রশান্ত কুমার (পিকে) হালদারের মা, স্ত্রী, ভাইসহ ২০ জনের ব্যাংক হিসাব ও পাসপোর্ট জব্দ, সকল সম্পদ ক্রোক করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া এই ২০ জনের দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয় এবং তাদের গত ৫ বছরের আয়কর রিটার্ন হাইকোর্টে দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এই আদেশ স্থগিত চেয়ে আইএলএফএসএল আপিল বিভাগে আবেদন করে। এই আবেদনের ওপর শুনানি শেষে ইব্রাহিম খালেদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাকে তলব করেছেন আপিল বিভাগ।