নজরদারিতে ৪০ টিকটকার গ্রুপ প্রতারণার শিকার কিশোরী-তরুণী ও মধ্যবয়সী নারী

নজরদারিতে ৪০ টিকটকার গ্রুপ প্রতারণার শিকার কিশোরী-তরুণী ও মধ্যবয়সী নারী

সাখাওয়াত হোসেন  অশ্লীল ভিডিও তৈরি করে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেয়া, বিদেশে পাচার ও অবৈধ সম্পর্ক তৈরির সাথে জড়িত লাইকি-টিকটকারদের তালিকা নিয়ে মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরই মধ্যে ৪০টি গ্রুপকে শনাক্ত করা হয়েছে, যারা অশ্লীল ভিডিও তৈরি করে। এসব ভিডিও দেখে তরুণ-তরুণীসহ শিশুরাও বিপথে যাচ্ছে।
গত সোমবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় টিকটক রাজকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে টিকটক অ্যাপ ব্যবহার করে প্রতারণা, শতাধিক নারীদের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন, ব্ল্যাকমেইল এবং অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। টিকটকে রাজের বিজিবি ও র‌্যাবের পোশাক পরা অবস্থায় একাধিক ভিডিও দেখা যায়। গত ১১ মাসে দেড়শ’ জনের বেশি কথিত টিকটক অপরাধীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ও র‌্যাব।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অশ্লীল ভিডিও তৈরিতে জড়িত লাইকি ও টিকটকারদের তালিকা করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরই মধ্যে ৪০টি গ্রুপের সন্ধান মিলেছে, যারা অশ্লীল ভিডিও তৈরি করে। এসব ভিডিও দেখে তরুণ-তরুণীসহ শিশুরাও বিপথে যাচ্ছে। এ অবস্থায় ওই সব টিকটক ও লাইকি নির্মাণকারী এবং এসব প্ল্যাটফর্মে অভিনয়কারীদের শনাক্ত করে গ্রেফতারের জন্য পুলিশ ও র‌্যাবকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। লাইকি, টিকটক, ইমো, মাইস্পেস, ফেসবুক, ইউটিউব, স্ট্রিমকার, হাইফাইভ, বাদু 
ইত্যাদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কী ধরনের অপরাধ হচ্ছে তা নজরদারি করা হচ্ছে। পৃথিবীর কোন কোন দেশে টিকটক-লাইকির মতো অ্যাপ বন্ধ করেছে এবং করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে, সেগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ মাসে দেড়শ’ জনের বেশি কথিত টিকটক অপরাধীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যারা বিতর্কিত এই সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে অল্পবয়সী কিশোরী থেকে তরুণী ও মধ্যবয়সী নারীদের ফাঁদে ফেলে অনৈতিক সম্পর্ক করে আসছিল। এসব নারীর অনেককে পাচারও করা হয়েছে উন্নত জীবন যাপনের প্রলোভন দেখিয়ে। মূলত মজা করার উদ্দেশে বানানো হয়েছে চার বর্ণের ‘টিকটক’ অ্যাপটি। সেই মজার অ্যাপটি এখন সবচেয়ে বেশি মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মাধ্যমে সমাজে পৌঁছে যাচ্ছে ভুল বার্তা। এতে বাড়ছে ধর্ষণ, নারী পাচার ও কিশোর অপরাধ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে র‌্যাবের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, দেশে ‘জনপ্রিয়’ টিকটকারদের বেশির ভাগই অশিক্ষিত বা অল্প শিক্ষিত। কেউ সেলুনে কাজ করে, কেউ দিনমজুরের কাজ করে। কেউবা কোনো দোকানের বিক্রয়কর্মী। এর বাইরে স্কুল, কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের কেউ কেউও টিকটকে নিজেদের বিলিয়ে দিচ্ছে। কম গতির ইন্টারনেটেও টিকটক-লাইকি অ্যাপ চালানো ও ভিডিও আপলোড করার সুযোগ থাকায় ঢাকার বাইরে এমনকি গ্রাম পর্যন্ত এদের ব্যবহারকারী বেড়ে চলেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকটক সমাজের ক্যানসার হয়ে দেখা দিয়েছে। এই মাধ্যমটি শুরু থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা উচিত ছিল। তা না হওয়ায় এটি এখন বিকৃত একটি মাধ্যমে পরিণত হয়েছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) হাফিজ আক্তার বলেন, দেশের উঠতি তরুণ-তরুণীদের একটি অংশ এখন টিকটকসহ বিভিন্ন মিউজিক অ্যাপসমুখী। আর এই অ্যাপসকে ঘিরেই তৈরি হয়েছে বিভিন্ন গ্রুপ। এসব গ্রুপের নারী সদস্যদের দেশের বাইরে বিভিন্ন মার্কেট, সুপার শপ, বিউটি পার্লারে ভালো বেতনে চাকরির অফার দিয়ে প্রলোভনে ফেলে বহুল পরিচিত টিকটকাররা। এরপর নানা কৌশলে পাচার করা হচ্ছে। এ বিষয়ে সকল অভিভাবকদের সতর্ক হতে হবে। এছাড়া এ ধরনের অপরাধের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে কাজ করছে পুলিশ।
র‌্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, টিকটক ভিডিওর মাধ্যমে যে অনৈতিক কার্যক্রম যেমন নারীপাচার, প্রতারণা হচ্ছে তা বন্ধে র‌্যাব প্রতিনিয়ত অভিযান চালাচ্ছে। ইন্টারনেট ব্যবহারকারী হিসেবে আমরা পৃথিবীর সব মানুষ এক জায়গার বাসিন্দা হয়ে যাই। তাই প্রযুক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে পৃথিবীর সব মানুষের যে কেউ অপরাধী কিংবা ভিকটিম হতে পারি। এজন্য প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার খুব গুরুত্বপূর্ণ।
তথ্য প্রুযুক্তি