রাজস্ব আদায় বাড়াতে কর ছাড়ের পরিমাণ কমছে

রাজস্ব আদায় বাড়াতে কর ছাড়ের পরিমাণ কমছে

আগামী ১ জুন জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য প্রায় ৭ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। প্রতিবারের মতো এবারের বাজেটেও রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির চাপ থাকছে। তবে এবার নতুন করে যুক্ত হয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত। আইএমএফ বলেছে, স্বাভাবিক রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির চেয়ে আগামী অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় দশমিক ৫ শতাংশ হারে রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে, সেই কৌশল থাকছে বাজেটে।

 

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, নতুন অর্থবছরে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় করতে চাইছে সরকার। আইএমএফের শর্ত ছাড়াও কর-জিডিপি অনুপাত বাড়াতে কর ছাড়ের পরিমাণ কমে আসবে। বিশেষ করে দেশীয় শিল্পে এতদিন যে ছাড় দেওয়া হয়েছে সেগুলো ধীরে ধীরে কমিয়ে আনতে চাইছে এনবিআর। তবে এবার করপোরেট কর পরিবর্তন হচ্ছে না। প্রস্তাবিত বাজেটে করযোগ্য আয় না থাকলেও ন্যূনতম ২ হাজার টাকা আয়কর দেওয়ার প্রস্তাব আসতে পারে। এতদিন করযোগ্য আয় নেই এমন ব্যক্তি রিটার্ন দাখিল করতে কোনো কর দিতে হতো না। এবার রিটার্ন দাখিলেও কর আরোপ হতে পারে। তবে ব্যক্তি শ্রেণির করের পরিমাণ আগের মতোই থাকছে।

স্বস্তির খবর হচ্ছেÍব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৩ লাখ টাকা করা হচ্ছে। ন্যূনতম কর আগের নিয়মেই ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় অবস্থিত করদাতার ৫ হাজার টাকা, অন্যান্য সিটি করপোরেশন এলাকার করদাতাদের ৪ হাজার টাকা এবং সিটি করপোরেশন ছাড়া অন্যান্য এলাকার করদাতাদের ৩ হাজার টাকা দিতে হবে।

ব্যাংক ডিপিএসে (ডিপোজিট পেনশন স্কিম) কর রেয়াতের সীমা বাড়ানো হতে পারে। অর্থাৎ ব্যাংকে বেশি টাকা জমালে বেশি কর ছাড় পাওয়া যাবে। বর্তমানে ৬০ হাজার টাকা (মাসিক ৫ হাজার) ডিপিএসে কর রেয়াত পাওয়া যায়, এটি বাড়িয়ে ১ লাখ ২০ হাজার (মাসিক ১০ হাজার) টাকা করা হচ্ছে। তবে শেয়ারবাজারের সেকেন্ডারি মার্কেটের বিনিয়োগকারীদের কর রেয়াত সুবিধা কমতে পারে।

ধনীদের ছাড় : আগামী বাজেটে ধনীদের ওপর করের বোঝা কমানোর প্রস্তাব করবেন অর্থমন্ত্রী। এখন বিত্তশালীদের ৩ কোটি টাকা বেশি সম্পদ বা একাধিক গাড়ি বা ৮ হাজার বর্গফুটের বেশি আয়তনের গৃহসম্পত্তি থাকলে সারচার্জ বা সম্পদ কর দিতে হয়। এটি বাড়িয়ে ৪ কোটি টাকা করা হচ্ছে।

অবশ্য বাজেটে নিজ নামে একাধিক গাড়ি রেজিস্ট্রেশন বা ফিটনেস নবায়নে ‘কার্বন সারচার্জ’ আরোপ করা হচ্ছে। বর্তমানে একাধিক গাড়ি রেজিস্ট্রেশন বা ফিটনেস নবায়নে দ্বিতীয় গাড়ির ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ বাড়তি অগ্রিম আয়কর দিতে হয়। এর সঙ্গে কার্বন সারচার্জ যুক্ত হতে যাচ্ছে।

অর্থমন্ত্রণালয় ও এনবিআর সূত্রে জানা যায়, রাজস্ব আদায় বাড়াতে সহজ পদ্ধতি হিসেবে সিগারেট ও তামাক পণ্যে কর বাড়ানো হচ্ছে। বাজেটে বিমান টিকিটের ওপর ভ্রমণ কর বাড়ানো হচ্ছে। আকাশপথে দেশের এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যেতে ২০০ টাকা ভ্রমণ কর দিতে হবে, এতদিন দেশের অভ্যন্তরে ভ্রমণ কর দিতে হতো না। বর্তমানে স্থলপথে বিদেশ গমনে ৫০০ টাকা ও নৌপথে ৮০০ টাকা কর বহাল রয়েছে, এটি বাড়িয়ে ১ হাজার টাকা করা হচ্ছে। আকাশপথে সার্কভুক্ত দেশ ভ্রমণে ১ হাজার ২০০ টাকা কর আছে, এটি বাড়িয়ে ২ হাজার টাকা করা হচ্ছে। অন্যান্য দেশে বিমানে ভ্রমণের ক্ষেত্রেও কর বাড়ানো হচ্ছে।

এনবিআর সূত্রে জানা যায়, রাজস্ব আদায় বাড়াতে দেশীয় বিভিন্ন শিল্পে কর ও ভ্যাট ছাড় কমিয়ে আনার পরিকল্পনা হচ্ছে। প্লাস্টিকের তৈরি সব ধরনের টেবিলওয়্যার, কিচেনওয়্যার, গৃহস্থালিসামগ্রী উৎপাদনে ৫ শতাংশ ভ্যাট আছে, এটি বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ হতে পারে। একই ভাবে অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি গৃহস্থালিসামগ্রী ও তৈজষপত্রের ভ্যাট হার বাড়ানো হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের টিস্যু উৎপাদন পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট আছে, এটি বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হচ্ছে।

করজাল বৃদ্ধি করতে আরো বেশি মানুষকে আয়কর রিটার্নের আওতায় আনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স, গাড়ির ফিটনেস নবায়ন, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ, বাড়ির নকশা অনুমোদনসহ সব মিলিয়ে সরকারি-বেসরকারি ৪৪ ধরনের সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক হচ্ছে।

 

অর্থ বাণিজ্য জাতীয়