নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের একটি রূপরেখা তৈরির ব্যাপারে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে বিএনপি। দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মধ্যে এই রূপরেখা দেওয়া নিয়ে একাধিকবার আলোচনাও হয়েছে। তবে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তৈরি হওয়ার আগ পর্যন্ত এই রূপরেখা না দেওয়ার পক্ষে বেশির ভাগ নেতার মত। রূপরেখা তৈরির দায়িত্বে থাকা নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
রূপরেখা তৈরির কাজে যুক্ত নেতারা বলছেন, নির্বাচনকালীন সরকারের নাম তত্ত্বাবধায়ক সরকার হতে হবে তা নয়। অন্য নাম হলেও তাতে আপত্তি থাকবে না বিএনপির। তবে যে নামই হোক, দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন চান তাঁরা। এ দাবি থেকে সরে আসার কোনো সম্ভাবনা এখনো দেখছেন না বিএনপির নীতিনির্ধারকরা।
দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা মনে করেন, সংবিধান সংশোধন না করেও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হতে হবে। আদালত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায়ের আলোকেও দলনিরপেক্ষ ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে পারেন। এ ক্ষেত্রে বিএনপি নেতারা দুটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করছেন।
এক. ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে বিচারপতি খায়রুল হক যে রায় দিয়েছিলেন তা বাতিল করতে হবে। দুই. আরো দুই মেয়াদ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে পারে বলে খায়রুল হক যে সংক্ষিপ্ত রায় দিয়েছেন তার আলোকে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন হতে পারে। তা না হলে রাজনৈতিক সমঝোতা হওয়ার পর সংবিধানের সংশোধনী আনতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘যে নামেই হোক, নির্বাচনের সময় নির্দলীয় সরকার থাকতে হবে। অর্থাৎ যারা কোনো দলের না, দলবাজি করেন না।
’ তিনি বলেন, ‘আগে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। সরকার পদত্যাগ করলে সমস্যার সমাধান বের হয়ে আসবে।’
বাংলাদেশের মার্কিন নতুন ভিসানীতির পর রাজনৈতিক পরিস্থিতির যে পরিবর্তন হয়েছে তাতে সংলাপের কথা যেমন আসছে, তেমনি কূটনীতিক পর্যায়ে দৌড়ঝাঁপও বেড়েছে। কূটনীতিক পর্যায়ে বিএনপির সঙ্গে যেসব বৈঠক হয়েছে তাতে ঘুরেফিরে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়েই বেশি আলোচনা হচ্ছে। এসব বৈঠকে বিএনপি তাদের আগের দাবির পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে ‘যে নামেই হোক’ নির্দলীয় সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না বলে তাদের অবস্থান জানিয়েছে।
সম্প্রতি আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমুর বক্তব্যের সূত্র ধরে সংলাপের আলোচনা ওঠার পরদিনই সরকারের পক্ষ থেকে তা নাকচ করে দেওয়া হয়েছে। এই প্রসঙ্গে বিএনপির বক্তব্য, নির্দলীয় সরকার পুনর্বহালের অ্যাজেন্ডা ছাড়া তারা সংলাপে যাবেন না।
সংলাপের বক্তব্যে দুরভিসন্ধি দেখছে বিএনপি
বিএনপি নেতারা মনে করেন, মার্কিন নতুন নীতির পর আগামী সংসদ নির্বাচন দেওয়া নিয়ে সরকারের পরিকল্পনায় কিছুটা হলেও ভাটা পড়েছে। যেনতেন নির্বাচন করা যেমন তাদের পক্ষে সম্ভব নয়, আবার বিএনপি নির্বাচনে না গেলে সে নির্বাচনও প্রশ্নবিদ্ধ হবে। ফলে রাজনৈতিক মাঠে একেকবার একেক ধরনের কথা ছড়াচ্ছেন সরকারি দলের নেতারা।
বিএনপি নেতারা মনে করেন, এটা প্রকৃতপক্ষে বিভ্রান্তি তৈরি করার একটা কৌশল। দলীয় সরকারের অধীনে বিএনপিকে নির্বাচনে নিতে বিভিন্ন ধরনের ফাঁদ তৈরি করতে চাইছে সরকার। এ জন্য নানা ধরনের প্রস্তাবও তাঁদের দেওয়া হতে পারে বলে তাঁরা আভাস পাচ্ছেন।
দলের একজন নীতিনির্ধারক বলেন, ২০১৮ সালের মতো ভুল এবার বিএনপি করবে না। ওই ধরনের সংলাপে যাবে না বিএনপি। ২০১৪ সালে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় এবং ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপে আওয়ামী লীগ অনেক প্রতিশ্রুতি দিলেও তা রক্ষা করেনি। সুতরাং তাদের সব আয়োজন যে লোক-দেখানো তা স্পষ্ট।
জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, সংলাপের বক্তব্যের মাধ্যমে আগামী নির্বাচন ও দেশের গণতন্ত্র নিয়ে আওয়ামী লীগের ভেতরে অসন্তুষ্টি ও বিভক্তি বিরাজ করছে বলে মনে হচ্ছে। তার পরও যে কারণেই সংলাপের কথা বলা হোক, সরকারের পদত্যাগ ছাড়া তা সম্ভব নয়। সরকারের পদত্যাগ ছাড়া সংলাপ হলে তাতে লাভ হবে না। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের দিকে তাকালে সেই প্রমাণ দেখা যায়।