ঢাকার ২৬% জলাধার বেদখল

ঢাকার ২৬% জলাধার বেদখল

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাসযোগ্য একটি শহরে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ জলাধার প্রয়োজন। সেখানে আশঙ্কাজনকভাবে কমছে রাজধানীর জলাধার। নির্বিচারে এই জলাধারগুলো দখল করা হচ্ছে। এরই মধ্যে রাজধানীর ২৬ শতাংশ জলাধার অবৈধ দখলে চলে গেছে।

ড্যাপ, নগর উন্নয়ন আইন, জলাধার সংরক্ষণ আইন ও পরিবেশসংক্রান্ত আইনের তোয়াক্কা না করে পুরান ঢাকার গেণ্ডারিয়ার ডিআইটি পুকুর দখলসহ রাজধানীর আরো অনেক পুকুর ও জলাধার দখল করে ভরাট করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ প্রকৃতি সংরক্ষণ জোট (বিএনসিএ) ও গেণ্ডারিয়ার ডিআইটি পুকুর রক্ষা আন্দোলন আয়োজিত সেমিনারে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। ‘ঢাকায় পুকুর ও জলাধারের প্রয়োজনীয়তা এবং সংরক্ষণে করণীয়’ শীর্ষক ওই সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বিএনসিএর আহ্বায়ক ও স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের (আরডিআরসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, রাজধানীর অবশিষ্ট ৩২৭টি পুকুর ও জলাশয়ের মধ্যে ৮৬টি (প্রায় ২৬ শতাংশ) বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও প্রভাবশালী ব্যক্তির দখলে। এই জলাধারগুলোর মধ্যে ছয়টির দখল নিয়েছে সরকারি সংস্থা, ৭৯টির দখল নিয়েছে বেসরকারি সংস্থা, বাকি একটি দখল হচ্ছে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে।

গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমানে রাজধানীতে ৬৩টি খাল, ১৩টি লেক ও একটি আদি চ্যানেলের অস্তিত্ব রয়েছে। আইন অনুযায়ী, যেকোনো ধরনের জলাধার ভরাট নিষিদ্ধ।

ব্যক্তিমালিকানাধীন হলেও জলাধার ভরাট করা যাবে না। পরিবেশের প্রয়োজনেই এসব পুকুর ও জলাধার রক্ষা করতে হবে। দখল হয়ে যাওয়া জলাধার উদ্ধারে উদ্যোগ নিতে পারে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।
আলোচনায় অংশ নিয়ে ঢাকা-৪ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, ‘পুরান ঢাকার ডিআইটি পুকুর দখলমুক্ত রাখতে আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এই পুকুর যারা দখল করতে চাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রাজউক উচ্ছেদ করার পরও ডিআইটি পুকুরে এখনো যে অবশিষ্ট স্থাপনা রয়েছে, তা সরিয়ে নেওয়ার কাজ অব্যাহত থাকবে। ঢাকাসহ সারা দেশের পুকুর ও জলাশয় ভরাট করার বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাই। আগামী সংসদ অধিবেশনে পরিবেশ ও জলাশয় ইস্যুতে আলোচনার আশা রাখি।’
জলাধার দখলের তথ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘পানির শহর ঢাকাকে আমরা কারবালায় পরিণত করেছি। এই নগরী এখন বসবাসের অযোগ্য নগরীতে পরিণত হয়েছে। এ জন্য অন্য অনেকের সঙ্গে রাজউকেরও দায় রয়েছে। তারা জলাশয় ভরাট করে হাউজিং করছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘মেয়রের উন্নয়ন ধারণা জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। আমাদের উন্নয়নের দর্শন পাল্টাতে হবে। প্রাণ, প্রকৃতি, পরিবেশ ও জলাশয়কে গুরুত্ব দিয়ে উন্নয়নের চিন্তা করতে হবে।’

সভাপতির বক্তব্যে আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘পুরান ঢাকার মতো ঘনবসতিপূর্ণ ও সরু রাস্তার এলাকায় অগ্নিদুর্ঘটনা প্রতিরোধে ডিআইটি পুকুরসহ নতুন করে আরো কিছু পুকুর খনন করতে হবে। পরিবেশ বিধ্বংসী এবং নদী ও জলাশয় যারা দখল করছে, তারা যেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারে, সে ব্যাপারে পরিবেশবাদীদের ভূমিকা রাখতে হবে।’

সেমিনারে আরো অংশ নেন ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক বজলুর রশীদ, নোঙর ট্রাস্টের প্রধান নির্বাহী সুমন শামস, সেভ আওয়ার সির সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ আনোয়ারুল হক, নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইবনুল সাঈদ রানা, ইনিশিয়েটিভ ফর পিসের (আইএফপি) চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শফিকুর রহমান, যাত্রী অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক কেফায়েত উল্লাহ চৌধুরী শাকিল, ডিআইটি পুকুর রক্ষা আন্দোলনের ইব্রাহীম আহমদ রিপন, ন্যাচার লাভিং পিপলের (এনএলপি) সভাপতি এহসানুল হক জসীম, সেভ ফিউচার বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়ক নয়ন সরকার প্রমুখ।

জাতীয়