ওয়াশিংটনে ন্যাশনাল গার্ডের দুই সেনাকে গুলি, হামলাকারী হাসপাতালে

ওয়াশিংটনে ন্যাশনাল গার্ডের দুই সেনাকে গুলি, হামলাকারী হাসপাতালে

 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে ন্যাশনাল গার্ডের দুই সদস্যকে লক্ষ্য করে গুলি চালানোর একটি ঘটনা ঘটেছে স্থানীয় সময় বুধবার, ২৬ নভেম্বর। হোয়াইট হাউজ থেকে মাত্র দুই ব্লক দূরে ঘটে যাওয়া এ হামলায় দুই সেনা গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

পুলিশ জানায়, একমাত্র হামলাকারী ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার ন্যাশনাল গার্ডের দুই সেনার ওপর অতর্কিতভাবে গুলি চালান। গুলির শব্দ শোনার পর কাছাকাছি অবস্থান করা অন্য সেনারা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে হামলাকারীকে লক্ষ্য করে পাল্টা গুলি চালিয়ে তাকে নিবৃত করেন। এতে হামলাকারীও আহত হন এবং পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হামলাকারীর অবস্থা গুরুতর নয়।

ঘটনার সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ফ্লোরিডায় ছিলেন। তিনি জানান, হামলাকারী একজন আফগান নাগরিক, যিনি ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন। তিনি আরও বলেন, এই ঘটনায় দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে তিনি ইঙ্গিত দেন, গত প্রশাসনের সময় যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা আফগান নাগরিকদের পুনঃপর্যালোচনার প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে।

ওয়াশিংটন মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী প্রধান জানান, হামলাকারী হঠাৎ রাস্তার এক কোণা থেকে এসে ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। তার হামলার ধরন ছিল অতর্কিত, যা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য নতুন উদ্বেগ তৈরি করেছে। ঘটনা ঘটার সময় এলাকায় উল্লেখযোগ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকলেও এত কাছাকাছি স্থানে সেনাদের ওপর এই হামলা নিরাপত্তা ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়, হামলাকারীর বয়স ২৯ বছর এবং তিনি আফগানিস্তানের নাগরিক। হামলার উদ্দেশ্য, ব্যক্তিগত পটভূমি ও সম্ভাব্য কোনো সংগঠনের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা আছে কিনা—এসব বিষয় তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতি এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর এ ঘটনা নতুন করে আলোচনা তৈরি করেছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা নাগরিকদের যাচাই–বাছাই প্রক্রিয়া নিয়ে যে বিতর্ক ছিল, এ ঘটনাটি সেই আলোচনাকে আরও তীব্র করতে পারে।

ন্যাশনাল গার্ডের আহত দুই সেনাকে প্রথমে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে দ্রুত নিকটবর্তী হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক হলেও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে এবং তাদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। সেনাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

হামলার পর ঘটনাস্থল ঘিরে ফেলে পুলিশ এবং তদন্তকারী দল। আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হোয়াইট হাউজের আশপাশে একাধিক নিরাপত্তা–সংকটজনিত ঘটনা ঘটলেও ন্যাশনাল গার্ড সদস্যদের লক্ষ্য করে সশস্ত্র হামলার ঘটনা অত্যন্ত বিরল।

তদন্তকারীদের ধারণা, হামলাকারী একাই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তবে সম্ভাব্য সব দিক—ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য, আদর্শিক প্রভাব, আন্তর্জাতিক যোগাযোগ—পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো বলেছে, জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ তারা গ্রহণ করছে।

ঘটনার পর ওয়াশিংটন এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। হোয়াইট হাউজের আশপাশ এবং পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে অতিরিক্ত টহল নজরদারি চলছে। জনসাধারণকে সতর্ক থাকতে অনুরোধ জানানো হয়েছে এবং কোনো সন্দেহজনক ঘটনা দেখলে কর্তৃপক্ষকে জানানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে বিচ্ছিন্ন ধরনের সশস্ত্র হামলার ঘটনা বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে স্থানীয় ও ফেডারেল সংস্থার মধ্যে সমন্বয় ও গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণ আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন। ওয়াশিংটনে ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় ভবিষ্যতে নিরাপত্তা নীতিতে পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

এ ঘটনায় আহত সেনাদের চিকিৎসা, হামলার কারণ উদঘাটন এবং জননিরাপত্তা বিশ্লেষণ—সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও অভিবাসন নীতির ওপর নজর আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক শীর্ষ সংবাদ