দেশে ভরা বর্ষায় স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। খরার কারণে কোনো কোনো এলাকায় ফসলের ক্ষতি হয়েছে। প্রচণ্ড গরমে জনজীবন হয়ে উঠেছিল বিপর্যস্ত। কিন্তু শরতের প্রথম মাস ভাদ্রের শেষে এসে শুরু হয়েছে প্রবল বৃষ্টি।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, বৃষ্টির পরিমাণ ধীরে ধীরে কমে আসছে। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয় ঢাকায় ৮২ মিলিমিটার। আগের ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছিল চুয়াডাঙ্গায় ১২১ মিলিমিটার।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবেই এই বৃষ্টি হচ্ছে বলে আবহাওয়াবিদেরা বলছেন। তিন দিন ধরে টানা বৃষ্টিপাত ও ঝোড়ো হাওয়ার প্রভাবে সৃষ্ট জোয়ারে উপকূলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। কোথাও কোথাও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বাঁধ ধসে গেছে। ক্ষতি হয়েছে চিংড়িঘেরের।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, আজ বৃহস্পতিবারও দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি হবে। তবে আগের তিন দিনের তুলনায় মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ভারতের মধ্যপ্রদেশের মধ্যাঞ্চল ও এর কাছাকাছি এলাকায় থাকা সুস্পষ্ট লঘুচাপটি উত্তর-পশ্চিম মধ্যপ্রদেশ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এটি ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যেতে পারে।
গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় দেওয়া আবহাওয়া অধিদপ্তরের আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ এলাকা এবং রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের অনেক এলাকায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে কম হলেও কালও (আজ বৃহস্পতিবার) বৃষ্টি হবে। শুক্রবার বৃষ্টি অনেকটাই কমে যাবে।
বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ার কারণে গতকালও চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে থাকা মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।ভারী বর্ষণে উপকূলের কিছু এলাকা প্লাবিত হলেও বন্যার আশঙ্কা নেই বলে জানান বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া। তিনি বলেন, এই বৃষ্টিপাত দেশের ভেতরেই হয়েছে, উজানে হয়নি। তাই দেশের প্রধান প্রধান নদ-নদীতে পানি বাড়েনি। ভারী বর্ষণে ছোট ছোট নদীর পানি বেড়েছে। আবার নগর অঞ্চলে কোথাও কোথাও জলজটের সৃষ্টি হয়েছে।
টানা বর্ষণের কারণে দেশের উপকূলীয় বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বিষখালী নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়িবাঁধ ধসে বরগুনার বেতাগী উপজেলার সরিষামুড়ি ইউনিয়নের দুটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ২২টি পরিবার। কৃষকেরা ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন। গত মঙ্গলবার রাতে পাউবোর পুরোনো এ বেড়িবাঁধের দুটি পয়েন্টে ভেঙে গ্রামে পানি ঢুকে গেছে।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার খোলপেটুয়া নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে মঙ্গলবার রাতে আটুলিয়া ইউনিয়নের বিড়ালক্ষ্মী এলাকায় পাউবোর বাঁধে ধস নেমেছে। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়।
অস্বাভাবিক জোয়ারের পানি ও টানা বৃষ্টিপাতে বাগেরহাটে মাছের প্রচুর ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে চাষিদের তিন কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া ঘেরের পাড়ে ও খেতে থাকা মৌসুমি সবজিরও ক্ষতি হয়েছে। বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম রাসেল বলেন, বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।