ঢাকায় বায়ুদূষণ চরমে, দ্রুত পানি ছিটানোর দাবি পরিবেশবাদীদের

ঢাকায় বায়ুদূষণ চরমে, দ্রুত পানি ছিটানোর দাবি পরিবেশবাদীদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকার বায়ুদূষণ বিপজ্জনকমাত্রা ছাড়িয়ে দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় পৌঁছেছে জানিয়ে জরুরি ভিত্তিতে পানি ছিটিয়ে বা ওয়াটার থেরাপির মাধ্যমে তা রোধ করার আহ্বান জানিয়েছে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো।

আজ বুধবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ডব্লিউবিবি ট্রাস্ট, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), জনউদ্যোগ, আইইডি, নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম (নাসফ), গ্রিন ফোর্স, পরিবেশ সংসদ (ঢা. বি.), বাংলাদেশ নিরাপদ পানি আন্দোলন (বানিপা) ‘ঢাকার বিপজ্জনক বায়ুদূষণ রোধে আশু করণীয়’ শীর্ষক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এই আহ্বান জানিয়েছে।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) সভাপতি আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে ও জনউদ্যোগ জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব তারিক হোসেনের সঞ্চালনায় মূল বক্তব্য পাঠ করেন পবার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. লেলিন চৌধুরী।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, দ্রুত বায়ুদূষণ রোধ করতে হলে হাইকোর্টের নির্দেশ আশু বাস্তবায়ন করা জরুরি। ২০২১ সালে বায়ুদূষণ রোধে হাইকোর্ট প্রথম ধাপে ৯ দফা, দ্বিতীয় ধাপে ৩ দফাসহ মোট ১২ দফা নির্দেশ দেন। হাইকোর্ট রাজধানীর প্রবেশমুখ গাবতলী, যাত্রাবাড়ী, পূর্বাচল, কেরানীগঞ্জ, টঙ্গীসহ বিভিন্ন পয়েন্টে পানি ছিটানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেন।

একই সঙ্গে ঢাকার রাস্তায় ওপর থেকে পানি ছিটাতে ঢাকা সিটি করপোরেশনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যেন রাস্তার পাশের ছোটখাটো গাছে জমে থাকা ধুলাময়লা পরিষ্কার হয়। পানির ঘাটতি তৈরি হলে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে পানি সরবরাহ করতে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালককে নির্দেশ দেন আদালত।

হাইকোর্টের নির্দেশনা রয়েছে, রাস্তায় পানি ছিটাতে হবে, কিন্তু ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন স্বল্প পরিসরে এটি করলেও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কোনো কার্যক্রম নেই। জরুরি ভিত্তিতে পানি ছিটানোর মাধ্যমে এই বিপজ্জনক ও দুর্যোগপূর্ণ অবস্থার উন্নতি ঘটানো সম্ভব। জুন-জুলাইয়ে বর্ষা মৌসুম আসার আগে নিয়মিতভাবে যাতে এই কার্যক্রম চালানোর জন্য জোর দাবি জানানো হচ্ছে।

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, রাজধানী ঢাকা এখন বায়ুদূষণের নগর। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের বায়ুদূষণ একটি দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় উপনীত হয়েছে। ইতিমধ্যে নগরবাসীর একটি অংশ নানা মাত্রার বিভিন্ন অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। বাকিদের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক স্বাস্থ্য প্রবল হুমকির মুখে পড়েছে। আমরা সবাই জানি এবং হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি যে, বায়ুমানের সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা পৃথিবীর চারটি দূষিততম নগরীর একটি হিসেবে দুর্নাম কুড়িয়েছে। গত জানুয়ারি মাসের বেশ কয়েক দিন ঢাকা বায়ু দূষিত নগরীর ১ নম্বরে অবস্থান করেছে। এয়ারভিস্যুয়ালের তথ্য অনুযায়ী জানুয়ারির প্রথম ২৪ দিনের মধ্যে ২৩ দিন ঢাকার বায়ুমান বিপজ্জনক পর্যায়ে ছিল।

বায়ুমান পরিমাপের একটি বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি রয়েছে। এটি একিউআই দ্বারা প্রকাশিত হয়। বায়ুমানের সূচক বা একিউআই ০-৫০ হচ্ছে ভালো বা স্বাস্থ্যকর, ৫১-১০০ হলো মধ্যম মানের, ১০১-১৫০ হচ্ছে সংবেদনশীল ব্যক্তিদের জন্য অস্বাস্থ্যকর, ১৫১-২০০ হচ্ছে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর, ২০১-৩০০ হলো অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর, ৩০১+ হচ্ছে বিপজ্জনক। গত ১২ জানুয়ারি ঢাকার বাতাসের সর্বোচ্চ মান ছিল একিউআই ৬৩৫।

বায়ুমান বিপজ্জনক পর্যায়ে উপনীত হলে সবাইকে ঘরের ভেতর থাকতে বলা হয়। বাইরে হতে এবং বাইরে কাজকর্ম করতে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়। ঘরের জানালা এবং দরজা বন্ধ রাখতে বলা হয়। কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তর বা সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো সতর্কতা জারি করা হয়নি। এ ধরনের উদাসীনতা বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

বক্তারা আরও বলেন, বায়ুদূষণ কমাতে হবে এখনই। তাই আর্থিক বিষয়সহ সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনে কৃত্রিম বৃষ্টির ব্যবস্থা করতে হবে। উন্নয়নের নামে অপরিকল্পিতভাবে গাছ কাটা বন্ধ, ফলদ ও বনজ বৃক্ষ রোপণ, ছাদবাগানসহ নগর সবুজায়নসহ নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। পাশাপাশি স্কুল থেকেই পরিবেশ রক্ষার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে ও মানুষকে সচেতন করতে হবে। এ ছাড়া মেগা প্রকল্পের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্বেই পরিবেশের বিপর্যয়ের বিষয়টি সবার আগে বিবেচনায় নিতে হবে। পাশাপাশি সামগ্রিকভাবে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়ন করতে হবে। স্বাস্থ্যকর গণপরিবহন ব্যবস্থাকে শক্তিশালীকরতে হবে। জনস্বার্থকে, জনস্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিয়ে অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে।

এর মধ্যে আরেক ধরনের বাস্তবতার উদ্ভব হয়েছে। বায়ুদূষণের প্রসঙ্গ তোলা হলে একদল সরকার-সমর্থক মনে করে, সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিরোধিতার পথ তৈরি করা হচ্ছে। অন্যদিকে সরকারবিরোধী আরেক দল এটাকে সরকারের ব্যর্থতার উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে রাজনৈতিক সুবিধা নিতে চায়। এই দুই পক্ষের কারও সঙ্গেই আমরা একমত নই। উন্নয়নকাজ চলাকালে দূষণ বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। তবে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি অনুসরণ করেই সব ধরনের দূষণকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন জনউদ্যোগের পরামর্শক আজিজুর রহমান খান আসাদ, স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার, নাসফের সভাপতি হাফিজুর রহমান ময়না, ডব্লিউবিবির পরিচালক গাউস পিয়ারী, আইপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. আদিল মোহাম্মদ খান, বাংলাদেশ নিরাপদ পানি আন্দোলনের (বানিপ) সভাপতি আনোয়ার হোসেন, এসএম সিদ্দিকীসহ অন্যরা।

পরিবেশ