প্রার্থীদের এলাকায় থাকার নির্দেশ

প্রার্থীদের এলাকায় থাকার নির্দেশ

জুলাই ২০২৩ নিয়ে নানা খবর চাউর হচ্ছে। বিরোধী দলগুলো সরকার পতনের এক দফায় যাচ্ছে। বাতাসে খবর ছড়ানো হয়েছে— ‘জুলাই মাস শেষ না হতেই সরকারের পতন হয়ে যাবে’। সরকারের হাতে বেশি সময় নেই। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক নেতা তো বলেই দিয়েছেন— সরকার ১০ নম্বর সতর্ক সংকেতের মধ্যে আছে। তা ছাড়া বিরোধী দলগুলো আন্দোলন ও সম্ভাব্য জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা কথা ছড়িয়ে আছে। বিদেশিরাও এ দেশের অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার পালাবদল নিয়ে নানা তৎপরতা চালাচ্ছে। কেউ প্রকাশ্যে, কেউ গোপনে। এরা সরকার ও বিরোধী দলকে নানা পরামর্শও দিচ্ছে। কিন্তু এসবে পাত্তাই দিচ্ছে না সরকার। বাতাসে ভেসে বেড়ানো নানা খবরেও কান দিচ্ছে না দলটি। এখন জনগণের হূদয় জয় করতে ব্যস্ত আওয়ামী লীগ।

খবর নিয়ে জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী ফোরাম নির্বাচনি তরী পার হতে তৎপর। দলটি মনে করছে, অতীতের দুটি নির্বাচনের (২০১৪ ও সালের ৫ জানুয়ারি ও ২০১৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর) মতো আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য সহজ হবে না। আগামী নির্বাচন স্বচ্ছ, অবাধ, সুষ্ঠু ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে বলে আওয়ামী লীগ নিশ্চিত। এ কারণে, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ী করতে কৌশলী ভূমিকায় রয়েছে টানা তনবার ক্ষমতায় থাকা দলটি। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক নেতার সঙ্গে আমার সংবাদের এ প্রতিবেদকের কথা হয়। তারা জানিয়েছেন, তাদের দল এখন আগামী নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। কারণ, আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের সর্বশেষ কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় জানিয়েছেন, আগামী নির্বাচন হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। আবাধ ও সুষ্ঠু এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য। ফলে এই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে জয়ী হতে হলে জনগণের কাছে যেতে হবে। জনগণের মন জয় করেই ভোট আদায় করতে হবে। ফলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, বর্তমান সংসদ সদস্য ও সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থীদের নির্বাচনি এলাকার জনগণের সাথে সম্পর্ক বাড়াতে হবে। দলের সভাপতি শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ ও তৃণমূল আওয়ামী লীগকে এমন নির্দেশনা দিয়েছেন।

অ্যাডভোকেট আমিরুল আলম মিলন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য। তিনি উপনির্বাচনে বাগেরহাট-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, কেন্দ্রীয় কমিটির সভা, সরকারি কাজ এবং সংসদ অধিবেশন ছাড়া বাকি সময় তিনি তার নির্বাচনি এলাকায়ই থাকেন। তিনি আরও জানান, দলের প্রধান শেখ হাসিনা মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নির্বাচনি এলাকায় থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন। জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের নির্দেশনা দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কার্যনির্বাহী কমিটির সভার বরাত দিয়ে আমিরুল আলম মিলন আরও বলেন, আওয়ামী লীগ মনে করে— এবার অবাধ, সুষ্ঠু ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীর জোরালো ভূমিকায় থাকতে হবে।

দলটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির আরেক সদস্য প্রফেসর মেরিনা জাহান। তিনিও উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২ সেপ্টেম্বর ২০২১ সালে সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের সংসদ সদস্য হাসিবুর রহমান স্বপন মৃত্যুবরণ করলে শূন্য আসনের উপনির্বাচনে ২ নভেম্বর ২০২১ সালে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আমার সংবাদের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, সংসদ সদস্য ও দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নির্বাচনি এলাকায় অবস্থানের নির্দেশ দিয়েছেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জনগণের সামনে আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৪ বছরের উন্নয়ন ফিরিস্ত তুলে ধরতে বলেছেন। জনগণের সমস্যাগুলো জেনে তা সমাধানের নির্দেশনা দিয়েছেন। সর্বোপরি ভোটারদের মন জয় করতে যা যা করা দরকার সবই করতে নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, দলের প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার আলোকেই তিনি নির্বাচনি এলাকায় পর্যাপ্ত সময় দিচ্ছেন।

এদিকে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঈদ-পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময়কালে বলেন, তার সরকার কারো প্রেসক্রিপশনে চলবে না। তিনি বলেন, বিদেশি কারও প্রেসক্রিপশনে নয়, দেশের সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কথা শুনব, কথা বিনিময় হবে কিন্তু নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী। ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিদেশিরা যার যার চিন্তা-ভাবনা জানাচ্ছে। সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে অনেকে কথা বলছে। আমরা কথা শুনছি, কথা আমরা শুনব ও পরামর্শও নেবো। কিন্তু, আমরা কারও নির্দেশ বা নিয়ন্ত্রণে থাকব সেটি ভাবার কারণ নেই।

জাতীয় রাজনীতি