নিজস্ব প্রতিবেদক
গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি, মুগদা থেকে শুরু করে মিরপুর, বাড্ডা এলাকাসহ ঢাকার ৫৫টি ওয়ার্ডে বসবাসকারীরা ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হওয়ার উচ্চঝুঁকিতে রয়েছেন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ২৭টি ওয়ার্ড এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ২৮টি ওয়ার্ড রয়েছে উচ্চঝুঁকির তালিকায়।
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার জাতীয় ম্যালেরিয়া ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় পরিচালিত জরিপে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। গত ১৮-১৭ জুন ঢাকায় বর্ষা মৌসুম পূর্ববর্তী এ জরিপ করা হয়। এদিকে, এডিস মশার বিস্তার নিয়ন্ত্রণে তিন দিনের বিশেষ চিরুনি অভিযান শুরু করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। অভিযানে ১২টি মামলায় ১ লাখ ৫ হাজার ৫০০ টাকার জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
জরিপের তথ্যে জানা যায়, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার ৫৫টি ওয়ার্ড এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে বলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক জরিপে উঠে এসেছে। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার ২৮টি এবং উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার ২৭টি ওয়ার্ড রয়েছে। ডিএনসিসি এলাকায় ৫৪টি এবং ডিএসসিসি এলাকায় ৭৫টি ওয়ার্ড মিলিয়ে ঢাকায় মোট ওয়ার্ড ১১৯টি। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৯৮টি ওয়ার্ডে এ জরিপ করা হয়েছে। ডিএনসিসির ৪০টি এবং ডিএসসিসির ৫৮টি ওয়ার্ডে গেছেন জরিপকারীরা। এসব ওয়ার্ডের ৪১৪৯টি বাড়ি পরিদর্শন করে ৫৪৯টি বাড়িতে এডিস মশার লারভা পাওয়া গেছে। ডিএনসিসির ২৭২ এবং ডিএসসিসির ২৭৮টি বাড়িতে মিলেছে এইডিস মশার লারভা। কোনো এলাকায় এডিস মশার ঘনত্বের একক হলো ব্রুটো ইনডেক্স। ব্রুটো ইনডেক্স ২০-এর বেশি হলে মশার ঝুঁকিপূর্ণ উপস্থিতি বিবেচনা করা হয়। যেসব ওয়ার্ডে এডিস মশার ব্রুটো ইনডেক্স ২০-এর বেশি এর মধ্যে রয়েছে।
ডিএনসিসির ২, ৩, ৫, ৬, ১০, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮, ১৯, ২০, ২১, ২২, ২৩, ২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ২৯, ৩০, ৩১, ৩৩, ৩৫, ৩৭ এবং ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড এর দুটো ইনডেক্স ২০-এর বেশি। মিরপুর, পল্লবী, মাজার রোড, পীরের বাগ, মনিপুর, শ্যাওড়াপাড়া, কাফরুল, ইব্রাহিমপুর, খিলক্ষেত, কুড়িল, জোয়ার সাহারা, বনানী, গুলশান, বারিধারা, মহাখালী, রামপুরা, খিলগাঁও, মালিবাগ, কারওয়ানবাজার, তেজতুরী বাজার, আগারগাঁও, মোহাম্মদপুর, বায়তুল আমান, মগবাজার, ইস্কাটন, বাড্ডা পড়েছে এসব ওয়ার্ডের আওতায়।
আর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৯, ১১, ১২, ১৩, ১৫, ১৬, ১৮, ১৯, ২২, ২৩, ২৬, ৩৩, ৩৪, ৩৬, ৪১, ৪৪, ৪৬, ৪৮, ৫০, ৫১, ৫৪, ৫৫ এবং ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডে দ্রুত ব্রুটো ইনডেক্স ২০ এর বেশি পেয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। গোড়ান, মেরাদিয়া, বাসাবো, সবুজবাগ, মুগদা, মাদারটেক, ফকিরাপুল, আরামবাগ, শাহজাহানপুর, রাজারবাগ, পুরানা পল্টন, বায়তুল মোকাররম, ধানমন্ডি, রায়েরবাজার, নীলক্ষেত, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, এলিফেন্ট রোড, মিন্টো রোড, কাকরাইল, হাজারীবাগ, লালবাগ, আজিমপুর, পলাশী, বংশাল, সিদ্দিকবাজার, শাঁখারীবাজার, রায় সাহেববাজার, ওয়ারী, সূত্রাপুর, মিলব্যারাক, সায়েদাবাদ, উত্তর যাত্রাবাড়ী, মীরহাজিরবাগ, ধোলাইপাড়, গেন্ডারিয়া, জুরাইন এবং কামরাঙ্গীরচর এসব ওয়ার্ডের আওতায় পড়েছে। সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এই ফলাফলের মানে এসব এলাকায় ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার উপস্থিতি অনেক বেশি। উত্তর-দক্ষিণ যাই বলি না কেন আমরা সবাই ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছি। ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে গতকাল আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬৭৮ জন রোগী। এর মধ্যে ঢাকাতে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া মোট রোগীর সংখ্যা হলো ১ হাজার ৬৬৯ জন। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৪ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯ হাজার ৮৭১ জন। তাদের মধ্যে রাজধানীতে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৭ হাজার ৮৪ জন। আর ঢাকার বাইরের অন্য বিভাগে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ৭৮৭ জন। এ সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশে মারা গেছেন ৬১ জন। এডিস মশার বিস্তার নিয়ন্ত্রণে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ৫টি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে চিরুনি পরিচালনা করেছে। অভিযানে মোট ১২টি মামলায় ১ লাখ ৫ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা ও আদায় করা হয়েছে। গতকাল করপোরেশনের আওতাধীন বিভিন্ন অঞ্চলে এসব আদালত পরিচালনা করা হয়। অভিযানে ১৪৩টি বাসাবাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করা হয়েছে। এ সময় ১৩টি বাসাবাড়ি ও নির্মাণাধীন ভবনে মশার লার্ভা পাওয়ায় ১২টি মামলায় ১ লাখ ৫ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। গত সোমবার থেকে ২৫টি ওয়ার্ডে এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংসে তিন দিনের বিশেষ চিরুনি অভিযান শুরু করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।