বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভিসা নীতি আরোপের আগে মিথ্যে তথ্য উপস্থাপন ও তা লিখিত দাখিল করার অভিযোগ এনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৬ রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যানের বিরুদ্ধে অবশেষে আদালতে মামলা করা হয়েছে।
অভিযুক্ত কংগ্রেসম্যানরা হলেন- পেন্সিলভোনিয়া অংগরাজ্যের রিপাবলিকান দলীয় ইউএস কংগ্রেস সদস্য পেরী স্কাট (তিনি ইউএস আর্মির একজন লেফটেন্যান্ট জেনারেল), এলাবমা অঙ্গরাজ্যের রিপাবলিকান দলীয় ইউএস কংগ্রেস সদস্য বেরী মোর, ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের রিপাবলিকান দলীয় ইউএস কংগ্রেস সদস্য বব গুড, টোনেসী অঙ্গরাজ্যের রিপাবলিকান দলীয় ইউএস কংগ্রেস সদস্য টীম বারসেট, ওহাইয়ো অঙ্গরাজ্যের রিপাবলিকান দলীয় ইউএস কংগ্রেস সদস্য ওয়ারেন ডেভিসন ও টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের রিপাবলিকান দলীয় ইউএস কংগ্রেস সদস্য কিথ সেল্ফ।
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আরোপিত ভিসানীতি দ্রুত প্রত্যহার চেয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও এন্টনী ব্লিনকেনকে বিবাদী করে সম্প্রতি দায়েরকৃত মামলার আলোচিত বাদী ড. রাব্বী আলম এবং তার অপর দুই ভাই রিজভী আলম ও শেরে আলম রাসু আবারো ইউনাইটেড স্টেইটস ফেডারেল কোর্ট অব ইষ্টার্ন ডিষ্ট্রি্ট অব মিশিগান ডেট্রয়েট ইউএসএ দ্বিতীয় এই মামলাটি করলেন।মামলার নামকরন করা হয়েছে আলম এট অল ভি. পেরী এট অল।
মামলার বাদী জনকন্ঠকে জানান, রিপাবলিকান দলীয় ইউএস ৬ কংগ্রেস সদস্যের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ওই মামলার নং-৪:২০২৩ সিভি১১৬৪০। ধারা: ফেডারেল ৩২০। আদালতে মামলাটি গৃহিত হয় গত ১০ জুলাই। আর ডকেটভূক্ত হলো ১২ জুলাই।
এদিকে, মামলার অন্যতম বাদী ড. রাব্বী জানান, মামলার নথিপত্র, জুডিশিয়াল নোট, রিট এবং কমপ্লেইন প্রোসিড করা হয়েছিল গত ২৩ জুন। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ প্রত্যাহার ও ক্ষমা চাওয়ার প্রার্থনা জানিয়ে যেহেতু ৬টি অঙ্গরাজ্যের ৬ কংগ্রেস সদস্যের বিরুদ্ধে আনিত ওই মামলা এবং সেই সাথে সংশ্লিষ্ট মামলার ১নং বিবাদী বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর একজন এক্টিভ লেফটেন্যান্ট জেনারেল, সেহেতু মামলাটি গৃহিত ও ডকেটভূক্ত হতে তিন সপ্তাহের মতো সময় লেগেছে। এ ছাড়া, মামলাটি ডকেটভূক্ত হওয়ার আগে মেরিট যাচাই বাছাই করা হয়েছে।
তিনি জানান, এই মামলায় জজ নির্ধারণ করা হয়েছে সেলিনা ডি কুমার এবং রিফারিং জাজ নির্ধারণ করা হয়েছে এনথোহনী পি প্যটি।
ড. রাব্বী আরও জানান, তার আশা ছিল আদালতে ওই মামলাটি গৃহিত হবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবসে গত ৪ জুলাই। এজাহার দায়েরের পর সাধারণত এক সপ্তাহের মধ্যে মামলা ডকেটভূক্তি লাভ করে।
তবে এই মামলা তিন সপ্তাহ সময় কেন লেগে গেল এমন প্রশ্নের জবাবে ড.রাব্বী বলেন, ‘এই মামলাটি নিয়ে আমি একটু চিন্তিত ছিলাম যে, কেনো মামলাটি গৃহীত হচ্ছিল না এবং ডকেটভূক্ত হচ্ছিল না। যা নিয়ে আমি বেশ বিচলিত ছিলাম।’
তিনি জনকন্ঠকে জানান, মামলাটি একটি ল্যন্ডমার্ক মামলা হবে। এটি একটি জটিল এবং গুরুত্বপূর্ণ ল’স্যুট। তার মতে, মামলার বিবাদী যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আইন প্রনয়ণ কক্ষ কংগ্রেসের ৬ সদস্য জড়িত, সেহেতু এই মামলা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্ভৌমত্ব সুরক্ষার ক্ষেত্রেও তা একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে।
তিনি এও জানান, এই মামলা পরিচালনাকারী হিসেবে উকিলের দায়িত্ব পালন করবেন তিনি নিজেই অর্থাৎ ড. রাব্বী। মামলার অপর দুই বাদী মো. রিজভী আলম রিজভী ও শেরে আলম রাসুর পক্ষে আদালতে প্রতিনিধিত্ব করবেন ড. রাব্বী নিজেই।
এদিকে, মামলার পরবর্তী ধাপে আগামী ২৫ জুলাই এর মধ্যে বিবাদীদের বিরুদ্ধে সমন জারি করার জন্য সংশ্লিষ্ট কোর্ট ফি এবং সার্ভিস ফি প্রদান করতে ইতোমধ্যে ড. রাব্বী আলমকে নির্দেশ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আদালত। এ ছাড়া, এই মামলায় বাদী পক্ষ জুরি চেয়েছেন। কোর্ট বাদী পক্ষের জুরি দাবি গ্রহণ করেছেন।
ড. রাব্বী জনকন্ঠকে জানান, তাদের দায়েরকৃত এই দ্বিতীয় মামলাটিতেও তারা হারবেন কি জিতবেন, এটা বড় কথা নয়। বরং মামলাটি চালাতে অনেক সময়, অনেক অর্থ, অনেক শ্রম, মেধা ও অনেক নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়েছে। সর্বোপুরি সিকিউরিটি বিষয়টি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, ‘মামলার ফলাফল যা-ই হোক, আমরা আইনের ভাষায় প্রতিবাদ করছি। প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ ও জয় বাংলার জন্য আমরা তিন ভাই মৃত্যুর মুখে বুক পেতে দিলাম।’