যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অর্থ যারা পাচার করেছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করেছে দেশটি। বাংলাদেশের পাঁচ শীর্ষ ব্যবসায়ীসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের অংশ হিসেবে তাদের সম্পদ ও ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে। এর মধ্যে এক জনের ব্যাংক হিসাব ও তিনটি বাড়ি জব্দ করা হয়েছে। আয়ের বৈধ উৎস জানাতে না পারায় যুক্তরাষ্ট্রের দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের আওতায় এসব সম্পদ জব্দ করা হয়। পর্যায়ক্রমে এই তালিকা লম্বা হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কিছুদিন আগে তদন্তে নেমেছিল যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা (এফবিআই)। ১৫ জন বাংলাদেশিকে সন্দেহের তালিকায় রেখে তাদের অর্থ পাচারসহ দুর্নীতি নিয়ে সাঁড়াশি অভিযানে নেমেছিল এফবিআই। অবশেষে তারা প্রমাণও পেয়েছে।
গত ৭ সেপ্টেম্বর দৈনিক ইত্তেফাকে ‘যুক্তরাষ্ট্রে ২৫২ বাড়ি আমলা-পুলিশের’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে ১৫ জনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু হয়েছে বলে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে। তারা যদিও সরকার থেকে দলীয় লোক সেজে সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বিশাল সম্পদের মালিক হয়েছেন। সেই অর্থ যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করেছেন। তবে গত ছয়-সাত মাস ধরে তারা সুর পালটে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। গোয়েন্দারা অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, তারা সুবিধাবাদী। তাদের পরিবারের কেউ কেউ রাজাকার কিংবা বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। অর্থাৎ, তারা সরকারের ভেতরে দলীয় লোক সেজে ঘাপটি মেরে ছিল। দলের অনেক শীর্ষ নেতাও তাদের মাধ্যমে সুবিধাও পেয়েছেন। এখন তাদের আসল চেহারা ফুটে উঠছে। তারা এখন সরকারের বিরুদ্ধে নানান তথ্য ছড়াচ্ছেন।
বিএনপিসহ চারদলীয় সরকারের আমলে ব্যাংকপাড়ায় ছিল মিস্টার টেন পারসেন্ট। অর্থাৎ, ১০ ভাগ টাকা আগে পরিশোধ ছাড়া কেউ সাধারণত ব্যাংক থেকে ঋণ পেতেন না। দলীয় লেবাস পরে তখনো সুবিধাভোগীরা বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হয়েছিলেন। এখনো সেই অবস্থা বিদ্যমান। একাধিক মন্ত্রীর ছেলে এখনো একচেটিয়া ব্যবসা করে বিদেশে টাকা পাঠাচ্ছেন। অতীতেও মন্ত্রীদের স্ত্রী-সন্তান ও স্বজনেরা একই কাজ করেছিলেন। বর্তমানে বাবা মন্ত্রী, ছেলে ঐ মন্ত্রণালয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন।
তাকেই বেশি কাজ দেওয়া হয়। ঐ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ অধিদপ্তর, পরিদপ্তর ও বিভাগীয় কর্মকর্তারা এতে অসন্তুষ্ট। একাধিক কর্মকর্তা বলেন, এখানে প্রতিটি প্রকল্পে ও কেনাকাটায় দুর্নীতি ও অনিয়ম হয়েছে। একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা, অনেক আমলা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে দেশের উন্নয়নে যে কাজ হয়েছে, তা অতীতে কখনো হয়নি। শুধু দুর্নীতিবাজদের কারণে যত সমস্যা। সরকারপ্রধান তো বলেননি দুর্নীতি করতে। শীর্ষ পাঁচ জন ব্যবসায়ী বিপুল পরিমাণ টাকা বিদেশে পাচার করেছেন বলে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
যে ১৫ ব্যক্তির বিরুদ্ধে এফবিআই তদন্ত করেছে, তাদের মধ্যে এক জন সাবেক আমলা রয়েছেন। তিনি স্ত্রীর নামে একাধিক বাড়ি কিনেছেন নিউ ইয়র্কে। যুক্তরাষ্ট্রে তার একাধিক বাড়িসহ বিভিন্ন সম্পদ রয়েছে। তার এই সমস্ত অর্জিত সম্পদ নিয়ে এফবিআই তদন্ত করছে। বর্তমানে চুক্তিতে থাকা এক জন পদস্থ কর্মকর্তারও একাধিক বাড়ির বিষয়টি এফবিআই তদন্ত করছে বলে জানা গেছে। যদিও এই কর্মকর্তা দাবি করেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তার কোনো সম্পদ নেই, যা আছে সেগুলো তার পুত্র ও স্ত্রীর। সেখানে বড় ধরনের চাকরি করেন এবং তাদের সম্পদ থাকতেই পারে। কিন্তু এফবিআই এ বিষয়ে ব্যাপক অনুসন্ধান চালাচ্ছে বলেও নিশ্চিত তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বর্তমান ও সাবেক দুই কর্মকর্তা রয়েছেন এই ১৫ জনের তালিকায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এফবিআই তদন্তের তিনটি ধাপ রয়েছে। প্রথম ধাপে তারা দেখবে, যেসব সম্পদ তারা যুক্তরাষ্ট্রে কিনেছেন, সেই সম্পদগুলো বৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ থেকে কি না; বা কী উপায়ে তারা এই সম্পদের মালিক হয়েছেন। এমনকি তাদের আত্মীয়স্বজনও যখন এই সম্পদের মালিক হয়েছেন, তখন তাদের আর্থিক অবস্থা কী ছিল। দ্বিতীয়ত, যদি তারা দেখেন যে এটি বৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদ থেকে করেছেন, সেক্ষেত্রে এই তদন্ত সেখানেই শেষ হবে। কিন্তু যদি দেখা যায় যে, অবৈধ পন্থায় বা বিদেশ থেকে অর্থ এনে এটা করা হয়েছে, তাহলে সেক্ষেত্রে এই সম্পদগুলো জব্দ করা হবে। সূত্রগুলো বলছে, এর আগেও মেক্সিকো, নাইজেরিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক ব্যক্তির অবৈধ সম্পদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জব্দ করেছিল।