সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তি, বিশ্বজুড়ে ২১ কোটি মানুষের মনস্তাত্ত্বিক সংকট

সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তি, বিশ্বজুড়ে ২১ কোটি মানুষের মনস্তাত্ত্বিক সংকট

 

আইটি ডেস্ক

 

ডিজিটাল যুগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আমাদের জীবনযাত্রা, যোগাযোগের ধরন ও বিনোদনের পন্থা আমূল বদলে দিয়েছে। ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক, টিকটক, ইউটিউব বা লিংকডইনের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো কেবল যোগাযোগের মাধ্যম নয়, বরং অনেকের জন্য দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে। কিন্তু এই ডিজিটাল কানেক্টিভিটির আড়ালেই লুকিয়ে রয়েছে এক বিপজ্জনক নেশা-সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাডিকশন বা আসক্তি।

সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫২২ কোটি, যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৬৩.৮ শতাংশ। এর মধ্যে অন্তত ২১ কোটি মানুষ সামাজিক মাধ্যমে আসক্ত, বলে জানিয়েছে ডাটা বিশ্লেষণ সংস্থা ডিমান্ডসেইজ। এই আসক্তি শুধুই ভার্চুয়াল জগতের সীমাবদ্ধতা নয়, বরং এটি মানসিক স্বাস্থ্য, সামাজিক সম্পর্ক ও দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করছে।

বিশেষজ্ঞরা সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তিকে একটি আধুনিক মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা হিসাবে দেখছেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্ক্রিনে স্ক্রল করা, ঘন ঘন নোটিফিকেশন চেক করা এবং অনলাইনে না থাকার ভয়-এসবই আসক্তির উপসর্গ। এই ‘ফোমো’ বা ফিয়ার অব মিসিং আউট-এর কারণে মানুষ প্রায়ই বাস্তব জীবনের গুরুত্ব ভুলে গিয়ে ভার্চুয়াল স্বীকৃতির পেছনে ছুটছে।

গবেষণা বলছে, একজন সাধারণ সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী প্রতি মাসে গড়ে সাতটি ভিন্ন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করেন এবং প্রতিদিন বড় একটা সময় কাটান এসব প্ল্যাটফর্মে। কিশোর-কিশোরীরা প্রতিদিন গড়ে ৭ ঘণ্টা ২২ মিনিট আর ৮ থেকে ১২ বছর বয়সিরা গড়ে ৪ ঘণ্টা ৪৪ মিনিট সোশ্যাল মিডিয়ায় মগ্ন থাকে। এমন দীর্ঘ স্ক্রিন টাইম শিশু-কিশোরদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ঘুমের সমস্যা, একাকিত্ব, মনোযোগের ঘাটতি, আত্মবিশ্বাসের অভাব ও বিষণ্নতা-এসবই এখন আর শুধু বড়দের সমস্যা নয়, বরং কিশোররাও আক্রান্ত হচ্ছে। ইউটিউব ও ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে ব্যবহার করা হয়, তবে ইনস্টাগ্রাম, টিকটক, টুইটার ও লিংকডইনের জনপ্রিয়তাও কম নয়। কেউ কেউ কাজের প্রয়োজনে ব্যবহার করলেও অধিকাংশই বিনোদনের খোঁজে প্ল্যাটফর্মগুলোতে ঢোকেন এবং ধীরে ধীরে আসক্ত হয়ে পড়েন।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ, নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ, পরিবারে একসঙ্গে স্ক্রিনমুক্ত সময় কাটানো এবং প্রয়োজনে থেরাপির সাহায্য নেওয়া জরুরি। প্রযুক্তির সুবিধা যেমন অস্বীকার করা যায় না, তেমনি এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকেও চোখ বন্ধ রাখা উচিত নয়। এখন সময়, প্রযুক্তিকে ব্যবহার করার-নইলে প্রযুক্তি-নেশা আমাদের ব্যবহার করবেই। ভার্চুয়াল দুনিয়া যদি বাস্তব জীবনের আনন্দ ও মানসিক প্রশান্তির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে সে প্রযুক্তি থেকে নিজেকে রক্ষা করাটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। সোশ্যাল মিডিয়া হোক সংযোগের মাধ্যম, বিচ্ছিন্নতার নয়।

তথ্য প্রুযুক্তি শীর্ষ সংবাদ