ইসরায়েল গাজার প্রশাসনকে ৩০ জন ফিলিস্তিনির মরদেহ ফেরত দিয়েছে, যা গত ২৯ সেপ্টেম্বর গাজায় যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত চুক্তির অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত হয়। গাজার প্রশাসন, যা হামাসের নেতৃত্বাধীন, বুধবার এক বিবৃতিতে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
২০২৩ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত একটি ২০ পয়েন্টের প্রস্তাবনা প্রকাশ করেন। এতে বলা হয়েছিল যে, গাজায় আটক সব জীবিত ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস এবং মরদেহ ফেরত দেবে মৃত জিম্মিদের। এর বিনিময়ে ইসরায়েলও বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেবে।
চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, প্রতি মৃত ইসরায়েলি জিম্মির মরদেহের বিনিময়ে ১৫ জন ফিলিস্তিনির মরদেহ হস্তান্তর করার কথা ছিল।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জন ইসরায়েলিকে হত্যা করে এবং ২৫০ জনকে জিম্মি হিসেবে গাজায় নিয়ে আসে হামাস। এরপর ৮ অক্টোবর থেকে গাজার ওপর সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। এই দুই বছর ধরে চলা সংঘাতে ৬৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন, এবং প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন।
যুদ্ধের সময়, হামাস বেশ কয়েকজন জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে, এবং তাদের তথ্যমতে, যুদ্ধবিরতির সময় পর্যন্ত ৪৮ জন ইসরায়েলি জিম্মি তাদের কাছে ছিলেন। এর মধ্যে ২০ জন জীবিত এবং ২৮ জন মারা গেছেন। যুদ্ধবিরতির পর, ১৩ অক্টোবর হামাস জীবিত সব ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেয় এবং মৃত জিম্মিদের মরদেহ ফেরত দিতে শুরু করে।
এ পর্যন্ত, ইসরায়েল ১৫ জন মৃত ইসরায়েলি জিম্মির মরদেহ ফেরত দিয়েছে। বাকি ১৩ জনের মরদেহও ফেরত দেওয়া হবে বলে গাজার প্রশাসনিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। সর্বশেষ, মঙ্গলবার ২ জন ইসরায়েলি জিম্মির মরদেহ ফেরত দেওয়ার পর, চুক্তির শর্ত অনুযায়ী বুধবার ৩০ জন ফিলিস্তিনির মরদেহ ফেরত দিয়েছে ইসরায়েল।
এ পর্যন্ত, ১০ অক্টোবর থেকে যুদ্ধবিরতির পর, মোট ১৯৫ জন ফিলিস্তিনির মরদেহ ইসরায়েল গাজার প্রশাসনকে ফেরত দিয়েছে।
যুদ্ধবিরতি চুক্তি ও মরদেহ হস্তান্তর প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বেশ গুরুত্ব পেয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই চুক্তি কেবল মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এটি গাজা ও ইসরায়েলি সরকারের মধ্যে সম্পর্কের সামান্য উন্নতিরও ইঙ্গিত বহন করে। তবে যুদ্ধের পরবর্তী পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যতে কিভাবে এই ধরনের চুক্তি আরও কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে।
এটি একটি সংকটময় অঞ্চলের শান্তি ও মানবাধিকার প্রসঙ্গে আলোচনার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।