আয় যেমনই হোক, প্রত্যেকেরই উচিত ভবিষ্যতের জন্য কিছুটা অর্থ সঞ্চয়ও করা- এ কথা কমবশি সবাই প্রায় শুনেছি। এ কথা যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গতও। কিন্তু আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সমতা রক্ষা ও বাজারে সব খরচ সামলে আয়ের একটা বড় অংশ তুলে রাখা সবার পক্ষে সম্ভব হয় না। কম রোজগার হলে তো ভবিষ্যতের জন্য টাকা জমানো ভীষণই গুরুত্বপূর্ণ। আবার যার রোজগার অনেকটা বেশি, তার ক্ষেত্রে জীবনযাত্রার মানও এতটাই উন্নত হয় যে, সঞ্চয় নিয়ে তাকেও আলাদা করে পরিকল্পনা করতে হয়।
তাই খরচের সঙ্গে সঞ্চয়ের দিকটা ভুললে ভবিষ্যতে বড় সমস্যার মুখে পড়তে পারেন। তাই এত দিন এলোপাতাড়ি খরচ করলেও এবার একটু রাশ টানুন তাতে। তাহলে কি প্রয়োজনীয় খরচে কাটছাঁট করার কথা ভাবছেন? তা নয়। একটু ভাবলেই বুঝবেন, প্রয়োজনীয় নানা খরচের মধ্যেই অহেতুক কিছু খরচও মিশে থাকে। প্রতিদিনের তেমন কিছু অভ্যাস বদলাতে পারলে প্রতিদিন সামান্য কিছু টাকা বেঁচেই যায়। আর মাসের শেষে সে অঙ্কটা মোটেও খুব একটা কম হয় না।
টাকা জমানোর কিছু সহজ উপায়ও অবলম্বন করতে পারেন। দেখে নিন সে সব।
চা-কফির নেশা অনেকেরই থাকে। তা বন্ধ করাও কঠিন। তাই শরীরের সমস্যা না হলে তা বন্ধ করার কথা না ভাবাই ভালো। তবে প্রতিদিন কি খুব দামি ব্র্যান্ডেড চেইন থোকেই চা-কফি খান? সে অভ্যাসে রাশ টানুন। নামি চেইনগুলোর চা-কফির দাম এমনিই অনেকটা বেশি হয়। তাই চেষ্টা করুন সপ্তাহের দু’-তিনদিন একটু কম দামি কিন্তু ভাল জায়গা থেকে চা-কফি খেতে। পারলে বাড়িতেও বানিয়ে খেতে পারেন ব্র্যান্ডেড চা-কফি।
বাড়িতে বিদ্যুতের বিলে রাশ টেনেও কিন্তু কিছুটা টাকা সঞ্চয় করতেই পারেন। আমাদের রোজের অভ্যাস খতিয়ে দেখলেই বুঝতে পারবেন, আমরা প্রায়শই বাড়ির আলো-পাখা ও অন্যান্য বৈদ্যুতিক জিনিস ব্যবহারের পর তা বন্ধ করতে ভুলে যাই। অনেক সময় হাতের কাজ সেরে এসে বন্ধ করি। এই অভ্যাস বদলান। ব্যবহার শেষ হলেই বন্ধ করুন সুইচ। বাড়িতে রাখুন উন্নতমানের ওয়্যারিংও। এতে বিদ্যুতের বিলের খরচে রাশ টানা সম্ভব হবে।
অনলাইন শপিংয়ের ব্যবহার ও অপব্যবহার নিয়ে সচেতন থাকুন। আজকাল প্রায় সারা বছরই অনলাইনে নানা সংস্থা জিনিসপত্রের ওপর ছাড় দিয়ে থাকে। ঘর-গৃহস্থালি, বাজার বা নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার সময় সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন।
আবার অনলাইন শপিংয়ের নেশায় পড়ে অনেক জিনিস একসঙ্গে কিনে ফেলা বা অপ্রয়োজনেও ঘন ঘন এই শপিং করার অভ্যাস বদলান।
প্রতিদিনের খরচের ওপর নির্ভর করে একটা বাজেট কষে নিন। সাধারণত, সেই বাজেটের মধ্যেই থাকার চেষ্টা করুন। যেদিন খরচের হার বাড়বে, চেষ্টা করুন পরে কোনো একদিন তা কমিয়ে সমতা রাখতে। প্রতিদিন বাড়ি ফিরে বেঁচে যাওয়া টাকা একটা জায়গায় জমান। দিনের নিরিখে অল্প হলেও, মাসের শেষে ওই কয়েকশ’ টাকা কাজে আসতে পারে।
ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করুন ভেবেচিন্তে। পোস্ট অফিস, ব্যাংক, নানা সরকারি বীমা সংস্থা- এগুলো টাকা জমানোর গুরুত্বপূর্ণ সরকারি জায়গা। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে বেছে নিতে পরেন কোনো স্কিম। অল্প কিছুটা করে টাকা সেখানে জমাতে পারলে তা ভবিষ্যতে কাজে আসবে।
সম্ভব হলে চিকিৎসার জন্য আলাদা করে স্বাস্থ্যবীমা করিয়ে রাখুন। আজকাল ক্যান্সারের মতো বিশেষ কিছু অসুখের জন্য আলাদা করেও বীমা করিয়ে নিন। অসুস্থতাজনিত খরচ এতে অনেকটাই সামলে নেয়া যাবে। আনন্দবাজার।