ডেস্ক:
জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় কুষ্টিয়ায় ছয়জনকে হত্যাসহ সুনির্দিষ্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের পৃথক দুই মামলায় সাবেক তথ্যমন্ত্রী ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফসহ চার নেতা আজ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) গঠনের আদেশের মুখোমুখি হচ্ছেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল আজ এই আদেশ দেবেন। অন্য দুই সদস্য হলেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ এবং জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।
গত ২৮ অক্টোবর ইনুর আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী আটটি অভিযোগ পড়ে শোনান এবং আদালতের কাছে অভিযোগগুলো সঠিক নয় দাবি করে তার অব্যাহারের আবেদন করেন। একই সঙ্গে তিনি অভিযোগগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করার জন্য অনুরোধ করেন। প্রসিকিউশন আইনজীবীরা বলেছেন, ইনু ১৪ দলীয় জোটের শরিক নেতা হিসেবে দায় এড়াতে পারবেন না এবং জুলাই-আগস্ট আন্দোলন দমনের সময় শেখ হাসিনার সঙ্গে তার কথোপকথন দ্বারা কমান্ড রেসপনসিবিলিটি প্রমাণিত হয়। ২৩ অক্টোবর প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম আটটি অভিযোগ পড়ে শোনান এবং বিচার শুরুর প্রার্থনা করেন।
আদালতে অভিযোগপত্রের দৈর্ঘ্য এবং প্রিভিলেজ কমিউনিকেশন প্রক্রিয়ার কারণে ইনুর পক্ষে ১৪ অক্টোবর সময়ের আবেদন করা হয়। পরে ট্রাইব্যুনাল তিনদিন, প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে আলোচনার অনুমতি দেন। ২৫ সেপ্টেম্বর ইনুর বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জ দাখিল করা হয়, যেখানে জুলাই-আগস্টে গণহত্যায় সহযোগিতাসহ আটটি অভিযোগ অন্তর্ভুক্ত ছিল। ২৬ আগস্ট রাজধানীর উত্তরা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং বর্তমানে তিনি বিভিন্ন মামলায় কারাগারে রয়েছেন।
একই দিনে হানিফসহ চারজন পলাতক আসামির পক্ষ থেকে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন অভিযোগ পড়েন এবং তিনটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগে অব্যাহারের আবেদন করেন। এই চার আসামির মধ্যে হানিফ ছাড়াও কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সদর উদ্দিন খান, জেলা সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী এবং শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আতা রয়েছেন। ৬ অক্টোবর তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
মামলায় আনা অভিযোগের মধ্যে রয়েছে উসকানিমূলক বক্তব্য, ষড়যন্ত্র এবং কুষ্টিয়ায় ছয়জনের হত্যাকাণ্ড। এই হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি আন্দোলনের সময় বেশ কয়েকজন আহত হন। এই ঘটনার পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয় এবং তদন্ত সংস্থা প্রতিবেদন দাখিল করে।
প্রসিকিউশনের পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম, আবদুস সোবহান তরফদার ও আবদুস সাত্তার পালোয়ানসহ অন্যান্যরা আদালতে অভিযোগ উপস্থাপন করেন। ট্রাইব্যুনাল-২ এর শুনানির মাধ্যমে ফরমাল চার্জ গ্রহণ এবং পরবর্তী অভিযোগ গঠনের তারিখ আজ ধার্য করা হয়েছে, যা মামলার পরবর্তী কার্যক্রমের গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এই মামলার মাধ্যমে জুলাই-আগস্ট আন্দোলন সংক্রান্ত হত্যাকাণ্ড ও মানবতাবিরোধী কার্যকলাপের দায়প্রাপ্তদের বিচারিক প্রক্রিয়ার আওতায় আনা হচ্ছে, যা দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
শব্দ সংখ্যা: ৬৮১


