দফায় দফায় বাড়তে থাকা ব্রয়লার ও পাকিস্তানি কক বা সোনালি মুরগির দাম নতুন করে আরও বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে কেজিতে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ১০ টাকা পর্যন্ত। আর সোনালি মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা। এর সঙ্গে চড়াদামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের সবজি। পেঁয়াজের দামও ক্রেতাদের ভোগাচ্ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে পেঁয়াজের দাম।
শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি করছেন ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা। আর সেপ্টেম্বর মাসের শুরুর দিকে ছিল ১২০ থেকে ১৩০ টাকার মধ্যে। এ হিসাবে মাসের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ৬০ টাকা বেড়েছে।
ব্রয়লার মুরগির মতো পাকিস্তানি কক বা সোনালি মুরগির দামও দফায় দফায় বেড়েছে। সেপ্টেম্বর মাসের শুরুর দিকে ২১০ থেকে ২৩০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া সোনালি মুরগির দাম কয়েক দফা বেড়ে এখন ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে এই মুরগির কেজি বিক্রি হয় ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা। এ হিসাবে সপ্তাহের ব্যবধানে সোনালি মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা।
মুরগির দামের বিষয়ে কাপ্তান বাজারের ব্যবসায়ী মো. ইদ্রিস আলী বলেন, মাসখানেক আগেও ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম বেশ কম ছিল। এ কারণে ফার্ম মালিকরা মুরগির উৎপাদন কমিয়ে দেন। তাই এখন বাজারে মুরগি সরবরাহ কম। অন্যদিকে হোটেল-রেস্টুরেন্টসহ সবকিছু খুলে দেওয়া হয়েছে। আবার বিয়েসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান হচ্ছে। ফলে মুরগির চাহিদা বেড়েছে। সবমিলিয়ে মুরগির দাম বেড়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, সামনে বিয়েসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান বাড়বে। ফলে মুরগির চাহিদাও আরও বাড়বে। তাই আমাদের ধারণা সামনে মুরগির দাম আরও বাড়তে পারে। একমাসের মধ্যে ব্রয়লার মুরগির কেজি ২০০-২৫০ টাকা এবং সোনালি মুরগির কেজি ৪০০ টাকা হয়ে গেলেও অবাক হবো না।
খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম বলেন, আমরা যে মুরগি বিক্রি করি তার বড় অংশ নিয়ে যায় বিভিন্ন হোটেল ও রেস্টুরেন্ট। মাস দুয়েক আগে মুরগির যে চাহিদা ছিল, এখন তা বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। কিন্তু বাজারে মুরগির সরবরাহ বাড়েনি। এ কারণেই মুরগির দাম বেড়েছে।
রামপুরা বাজারে ব্রয়লার মুরগি কিনতে আসা রহিম মিয়া বলেন, আমরা গরিব মানুষ। আমাদের কপাল থেকে গরু, খাসির মাংস অনেক আগেই উঠে গেছে। মাসে এক-দুদিন পরিবার নিয়ে মাংস-ভাত খাবো এখন তার উপায়ও নেই। ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৮০ টাকা হয়ে গেছে। এতদাম দিয়ে মুরগি কিনে খাওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না।
এদিকে গত সপ্তাহে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া পেঁয়াজের দাম বেড়ে এখন ৭৫ থেকে ৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এ হিসাবে সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ৩০ টাকা।
হঠাৎ পেঁয়াজের এমন দাম বাড়ার কারণ হিসেবে কারওয়ানবাজারের ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান বলেন, পূজার কারণে কয়েকদিন ধরে ভারত থেকে পেঁয়াজ কম আসছে। আবার ভারতের বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। এছাড়া বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহও কিছুটা কমেছে। সবমিলে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে।
সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা এখন সব থেকে বেশি দামে বিক্রি করছেন গাজর। মানভেদে এক কেজি গাজর ১০০ থেকে ১৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে এই সবজি দুটির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
তবে শীতের আগাম সবজি শিমের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে কিছুটা কমেছে। এখন শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১০০ থেকে ১২০ টাকা। এর সঙ্গে কমেছে ঝিঙের দাম। এক সপ্তাহ আগে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া ঝিঙের দাম কমে এখন ৪০ থেকে ৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে আসা শীতের অন্য আগাম সবজির মধ্যে ছোট ফুলকপি ও বাঁধাকপির পিস বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকা। মুলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা। এ সবজিগুলোর দাম সপ্তাহের ব্যবধানে খুব একটা হেরফের হয়নি।
এছাড়া চিচিঙ্গা, বরবটি, ঢেঁড়শ, পটল, করলার দাম সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে। করলা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি, পটলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ঢেঁড়শের কেজি পাওয়া যাচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে, বরবটির কেজি পাওয়া যাচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা।
এছাড়া কাঁচকলার হালি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, লাল শাকের আঁটি ১০ থেকে ২০ টাকা, মুলা শাকের আঁটি ১৫ থেকে ২০ টাক, কলমি শাকের আঁটি ৫ থেকে ১০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এগুলোর দাম সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে।
সবজির দামের বিষয়ে কারওয়ানবাজারের ব্যবসায়ী সাইদুর বলেন, বন্যা ও বৃষ্টির কারণে মাঝে সবজির ক্ষেতের অনেক ক্ষতি হয়েছে। তবে এখন সবজির সরবরাহ বেড়েছে। পাশাপাশি শীতের আগাম সবজির সরবরাহ বাজারে বাড়ছে। তাই আশা করা যায় কয়েকদিনের মধ্যে সবজির দাম কিছুটা কমে আসবে।