একটি দুর্নীতির মামলায় বাংলাদেশের সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের আট বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
মঙ্গলবার সকালে ঢাকার বিশেষ জজ আদালতের বিচারক এই রায় ঘোষণা করেন।
রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামি পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে গত ৪ঠা অক্টোবর রায় ঘোষণার জন্য তারিখ নির্ধারণ করেছিলেন আদালত।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সালের ২৮শে মে আটক হন লুৎফুজ্জামান বাবর। অবৈধ সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপনের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ১৩শে জানুয়ারি রমনা থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন।
সেই মামলায় অভিযোগ করা হয়, লুৎফুজ্জামান বাবর দুদকে ছয় কোটি ৭৭ লাখ ৩১ হাজার ৩১২ টাকার সম্পদের হিসাব দিয়েছেন। মামলায় আরও অভিযোগ করা হয়ে যে তিনি ৭ কোটি ৫ লাখ ৯১ হাজার ৮৯৬ টাকা মূল্যমানের সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন।
ওই বছরের ১২ই অগাস্ট তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।
বিএনপি’র একজন নেতা ও সাবেক এই প্রভাবশালী মন্ত্রী বেশ কিছু মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন। এর আগে ২১শে অগাস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় আরেকটি আদালতে লুৎফুজ্জামান বাবরকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল।
২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট বাংলাদেশে সরকার গঠন করার পর যে কয়েকজন ব্যক্তি প্রবলভাবে প্রভাবশালী হয়ে উঠেছিলেন, তাদের মধ্যে লুৎফুজ্জামান বাবর ছিলেন অন্যতম।
বিএনপি নেত্রী এবং ওই সরকারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানের সাথে ঘনিষ্ঠতাই ছিল মি. বাবরের ক্ষমতাবান হয়ে উঠার মূল ভিত্তি ছিল বলে ব্যাপকভাবে ধারনা করা হয়।
মি. বাবর শুরু থেকেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন, আর মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রী ছিলেন বিমান বাহিনীর সাবেক প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল আলতাফ হোসেন চৌধুরী।
তবে মন্ত্রণালয়ে মি. বাবরকেই সবচেয়ে ক্ষমতাবান বলে মনে করা হতো।
মন্ত্রিপরিষদে রদবদলের মাধ্যমে কিছুদিন পরে আলতাফ হোসেন চৌধুরীকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আর কোন পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী নিয়োগ দেয়নি সরকার, ফলে মি. বাবর এককভাবেই মন্ত্রণালয় চালাতেন।
১৯৫৮ সালের ১০শে অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন লুৎফুজ্জামান বাবর। তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা এইচএসসি পর্যন্ত – এই তথ্য দেয়া হয়েছে আমিনুর রশীদ এবং মোস্তফা ফিরোজ সম্পাদিত ‘প্রামান্য সংসদ’ বইয়ে।
১৯৯১ সালে প্রথমবারের মতো নেত্রকোনা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মি. বাবর। এরপর ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। সর্বশেষ ২০০১ সালে লুৎফুজ্জামান বাবর নেত্রকোনার একটি আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।