আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. সাহাবুদ্দিন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে মো. সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়।
বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২৩ এপ্রিল। এরপর আগামী ২৪ এপ্রিল হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করার কথা রয়েছে নতুন রাষ্ট্রপতির।
দেশের সংবিধান ও দ্য প্রেসিডেন্টস (রেমুনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজ) (সংশোধন) অ্যাক্টে রাষ্ট্রপতি কী কী ক্ষমতা ও সুযোগ-সুবিধা পান, তা বলা আছে। সেই হিসেবে স্বাভাবিকভাবেই নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনও এসব সুযোগ–সুবিধা পাবেন।
দ্য প্রেসিডেন্টস (রেমুনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজ) (সংশোধন) অ্যাক্ট অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির মাসিক বেতন হবে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। এই টাকা আয়করমুক্ত। রাষ্ট্রপতি আপ্যায়নের (এন্টারটেইনমেন্ট) জন্য বছরে ভাতা পান। এই টাকার নিরীক্ষা হবে না। রাষ্ট্রপতির জন্য সরকারি বাসভবন (বঙ্গভবন) থাকবে, যার সাজসজ্জা ও রক্ষণাবেক্ষণের খরচ দেবে সরকার। স্বাভাবিকভাবে রাষ্ট্রপতি পরিবহন (গাড়ি) সুবিধা পাবেন। রাষ্ট্রপতি অফিশিয়াল কাজে দেশের বাইরে গেলে সরকার নির্ধারিত ভাতা পাবেন। এছাড়া রাষ্ট্রপতির স্বেচ্ছাধীন তহবিল বছরে দুই কোটি টাকা।
এছাড়া দেশের যেকোনো হাসপাতালে বিনা খরচে চিকিৎসার সুবিধা পাবেন রাষ্ট্রপতি ও তার পরিবারের সদস্যরা। চিকিৎসকদের পরামর্শে দেশের বাইরে চিকিৎসার প্রয়োজন হলে সেই খরচও দেবে সরকার। রাষ্ট্রপতি বিমানে ভ্রমণ করলে বছরে ২৭ লাখ টাকা বিমাসুবিধার ব্যবস্থা আছে।
সংবিধান অনুযায়ী, রাষ্ট্রের অন্য সব ব্যক্তির ঊর্ধ্বে রাষ্ট্রপতি। তিনি কেবল প্রধানমন্ত্রী ও ৯৫ অনুচ্ছেদের (১) দফা অনুসারে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্র ছাড়া অন্য সব দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী পালন করবেন। তবে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে আদৌ কোনো পরামর্শ দিয়েছেন কি না এবং দিলে কোনো আদালত সেই সম্পর্কে কোনো প্রশ্নের তদন্ত করতে পারবেন না। প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় ও পররাষ্ট্রনীতি–সংক্রান্ত বিষয় সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত রাখবেন এবং রাষ্ট্রপতি অনুরোধ করলে যেকোনো বিষয় মন্ত্রিসভায় বিবেচনার জন্য পেশ করবেন।
কোনো আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের দেওয়া দণ্ড মার্জনা, বিলম্ব ও বিরতি করতে পারেন রাষ্ট্রপতি। এ ছাড়া যেকোনো দণ্ড মওকুফ, স্থগিত বা কমানোর ক্ষমতা আছে রাষ্ট্রপতির।
রাষ্ট্রপতির মেয়াদ কার্যভার গ্রহণের তারিখ থেকে পাঁচ বছর। তবে রাষ্ট্রপতি পদের মেয়াদ শেষ হওয়া সত্ত্বেও তার উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত তিনি নিজ পদে বহাল থাকবেন। দুই মেয়াদের বেশি একই ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন না।
ছাত্ররাজনীতি, মুক্তিযুদ্ধ, আইন পেশা, বিচারকের দায়িত্ব, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালনের পর বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হলেন মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু।
১৯৪৯ সালে পাবনা শহরের জুবিলি ট্যাঙ্কপাড়ায় (শিবরামপুর) জন্মগ্রহণ করেন মো. সাহাবুদ্দিন। শহরের পূর্বতন গান্ধী বালিকা বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে রাধানগর মজুমদার অ্যাকাডেমিতে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯৬৬ সালে এসএসসি পাসের পর পাবনার এডওয়ার্ড কলেজে ভর্তি হন। এরপর শুরু করেন রাজনীতি।
এরপর এডওয়ার্ড কলেজ থেকে ১৯৬৮ সালে এইচএসসি ও ১৯৭১ সালে (অনুষ্ঠিত ১৯৭২ সালে) বিএসসি পাস করেন করেন মো. সাহাবুদ্দিন। পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৪ সালে মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর এবং পাবনা শহীদ অ্যাডভোকেট আমিনুদ্দিন আইন কলেজ থেকে ১৯৭৫ সালে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন।
কলেজ জীবনে প্রবেশের আগেই ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে পাবনায় তার সাক্ষাৎ করেন সাহাবুদ্দিন। ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর এডওয়ার্ড কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক, অবিভক্ত পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি থেকে ছয় বছর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
১৯৭১ সালে পাবনা জেলার স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়কের পদে দায়িত্ব পালন করেন সাহাবুদ্দিন। এ সময় মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন তিনি। ছাত্রলীগের সক্রিয় কাজের ধারাবাহিকতায় ১৯৭৪ সালে পাবনা জেলা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পান।
১৫ অগাস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর সাহাবুদ্দিনকেও গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। কারামুক্তির পর পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পান তিনি।
২০০৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী থাকার মধ্যে সরকার তাকে দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার হিসাবে দায়িত্ব দেয়। ২০১৬ সাল পর্যন্ত তিনি সেই দায়িত্ব পালন করেন।
সাহাবুদ্দিন ব্যক্তিগত জীবনে এক ছেলের বাবা। তার স্ত্রী রেবেকা সুলতানা যুগ্ম সচিব ছিলেন।