অত্যধিক চাপ বাংলাদেশকে চীনের দিকে ঠেলে দিতে পারে, যুক্তরাষ্ট্রকে ভারতের সতর্কতা

অত্যধিক চাপ বাংলাদেশকে চীনের দিকে ঠেলে দিতে পারে, যুক্তরাষ্ট্রকে ভারতের সতর্কতা

আসন্ন সাধারণ নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে চাপ প্রয়োগ চরমপন্থী শক্তির হাতকে শক্তিশালী করতে পারে। একই সঙ্গে প্রভাবিত করতে পারে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকেও। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এ কথা জানিয়ে দিয়েছে প্রতিবেশি দেশ ভারত। বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এই তথ্য জানিয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট ওই ব্যক্তিরা আরও জানান, সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি মিথস্ক্রিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে নিজেদের উদ্বেগের বিষয়টিও ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়। নয়াদিল্লি মনে করে, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন ইস্যুতে মার্কিন চাপ বাংলাদেশকে চীনের দিকে ঠেলে দিতে পারে, যা এই অঞ্চলের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।

যদিও ভারতের পক্ষ থেকে আমেরিকাকে পক্ষ স্পষ্ট করে বলা হয় যে, তারাও বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। কিন্তু এই বিষয়ে অত্যধিক চাপ প্রয়োগ চরমপন্থী ও মৌলবাদী শক্তিকে উৎসাহিত করবে, যা শেখ হাসিনা সরকার সফলভাবে নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।
২০২১ সালের ডিসেম্বরে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আমেরিকা। এছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চলতি বছরের মে মাসে হুমকি দিয়ে বলে, আসন্ন নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এমন কর্মকাণ্ডে জড়িত বাংলাদেশি নাগরিকদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যমকে তাদের মতামত প্রচার করা থেকে বিরত রাখার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়গুলোকে নিয়ামক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

গত ২৩ আগস্ট দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে ব্রিকস সম্মেলনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী হাসিনার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। এরপর তার মন্তব্যের পর ভারতের উদ্বেগ বেড়েছে। তারা মনে করে, মার্কিন চাপের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতির সুযোগ নেবে চীন। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ওই বৈঠকের পর চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তার মন্তব্যে বলেন- বহিরাগত হস্তক্ষেপের বিরোধিতায় বাংলাদেশকে সমর্থন করে চীন। একই সঙ্গে বেইজিং তাদের মৌলিক স্বার্থে একে অপরকে সমর্থন করার জন্য ঢাকার সাথে কাজ করবে।

বিবৃতিতে শেখ হাসিনাকে আরও উদ্ধৃত করে বলা হয়, “বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক ‘পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং একে অপরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার’ উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।”

শেখ হাসিনা ২০০৯ সাল থেকে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় আছেন। তিনি চতুর্থ মেয়াদেও অভূতপূর্ব বিজয়ে আশাবাদী। তাকে প্রতিবেশী ভারতের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্রদের একজন হিসেবে দেখা হয়। ভারতবিরোধী বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে দমন করার পাশাপাশি, তার সরকার উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে পণ্য পরিবহনের জন্য প্রধান বন্দরগুলো ব্যবহারের অনুমতিসহ বিদ্যুৎ এবং বাণিজ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে ভারতের সাথে সম্পর্ক আরও গভীর করেছে।

বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। এই নির্বাচন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে হাসিনার সরকারের উপর চাপ সৃষ্টির ফলে বিরোধী দল বিএনপি প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। তারা ইতোমধ্যে বেশ কিছু বড় সমাবেশ আয়োজন করেছে। এসব বিষয় উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তি বলেছেন, বিএনপি আসন্ন নির্বাচনে কয়েক ডজন আসন জিতবে বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও দলটি ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করেছিল এবং ২০১৯ সালের নির্বাচনে মাত্র সাতটি আসন জিতেছিল।

বিএনপির ঘনিষ্ঠ মিত্র জামায়াতে ইসলামির পুনরুত্থানও নয়াদিল্লির উদ্বেগের কারণ। গত ১০ জুন ঢাকায় ১০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো বিশাল সমাবেশ আয়োজন করে জামায়াত। এই দলটি সর্বদা ভারতবিরোধী এবং পাকিস্তানের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখে।

ভারত মনে করে, জামায়াতের উত্থান চরমপন্থী শক্তিকে উত্সাহিত করতে পারে এবং বাংলাদেশের সীমান্ত লাগোয়া ভারতের পূর্ব এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারে।

ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) আমন্ত্রণে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল চলতি মাসের শুরুর দিকে নয়াদিল্লি সফর করে। তারা বিজেপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এবং ভারতের বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। এসব বৈঠকে তারা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে বাংলাদেশের আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের গুরুত্ব তুলে ধরেন। সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ