থানায় ছাত্রলীগ নেতাদের পিটিয়ে বরখাস্ত হয়েছেন নানা ঘটনায় সমালোচিত রমনার সাবেক এডিসি হারুন। বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের ৩৩ ব্যাচের এক নারী কর্মকর্তার সঙ্গে ৩১ ব্যাচের কর্মকর্তা হারুনের ‘সম্পর্কে’র জের ধরে ঘটনার সূত্রপাত।
ওই নারী পুলিশ সদস্যের স্বামীর (বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তা) উপস্থিতিতেই শনিবার রাতে শাহবাগ থানায় ছাত্রলীগের দুই নেতাকে বেদম পিটিয়ে আহত করেন হারুনসহ ১০-১৫ জন পুলিশ সদস্য।
ঘটনার কয়েকদিন পর সেই রাতে কী ঘটেছিল এসব বিষয়ে মুখ খুলেছেন এডিসি হারুনের সঙ্গে থানা ডিএমপির ক্রাইম বিভাগে অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) সানজিদা আফরিন। মঙ্গলবার একটি বেসরকারি টেলিভিশনে সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দেন তিনি।
সানজিদা বলেন, আমার কয়েক মাস ধরে কার্ডিয়াক সমস্যা হচ্ছিল, এই সমস্যা আমার ২০১৯ সাল থেকে ছিলো, কিন্তু ডাক্তার দেখানোর সময় পাচ্ছিলাম না। সেদিন অবসর সময় থাকায় এডিসি হারুন স্যারকে ফোন করে ইবরাহিম কার্ডিয়াকে ডাক্তারের সিরিয়াল ব্যবস্থা করে দিতে বলি। পরে তিনি ওসিকে দিয়ে একজন চিকিৎসকের সিরিয়াল ব্যবস্থা করে দেন। সেই অনুযায়ী সন্ধ্যা ৬টার পর হাসপাতালে যাই। গিয়ে দেখি যে চিকিৎসকের ম্যানেজ করা হয়েছে তিনি কনফারেন্সে আছেন। এ বিষয় হারুন স্যারকে জানালে তিনি কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে আসেন এবং একজন ডাক্তার ম্যানেজ করে দেন।
তিনি বলেন, ডাক্তার দেখানোর পর আমকে বেশ কিছু টেস্ট করতে বলেন। ইকো, ইসিজি টেস্ট করে আমি ইটিটি রুমে যাই। সেখানে পরীক্ষা করাতে আমার ২০ থেকে ২৫ মিনিট সময় লাগে। হঠাৎ করে ইটিটি রুমের বাইরে হট্টগোল শুনতে পাই। এসময় আমার হাজব্যান্ডের কথা শুনতে পাই। পরে কয়েকজন মিলে এডিসি হারুন স্যারকে মারতে মারতে ইটিটি রুমে নিয়ে আসে। সেখানে বেশ কয়েকজন ছেলে ছিল। আমি তাদের কাউকে চিনি না।
ঘটনার সময় সানজিদা ইটিটি রুমে ছিলেন বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, যখন স্যারকে তারা মারছিলেন তখন আমি ইটিটি রুমে টেস্ট করার পোশাকে ছিলাম। স্বাভাবিক অস্থায় পোশাকটা খুব শালীন অবস্থায় ছিল না। এর মধ্যে আমার হাজব্যান্ড ওই ছেলেগুলোকে বলে ওদের ভিডিও কর। একটা ছেলে যখন ভিডিও করছিল তখন আমি বুঝতে পারি তাদের কোন অসৎ উদ্দেশ্য আছে। তাই আমি ওই ছেলের মোবাইল ফোন নিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করি। এ সময় আমার হাজব্যান্ড আমার গায়ে বেশ কয়েকবার হাত তোলে। এরপর আমি যারা ভিডিও করছে তাদের মোবাইল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে তাদের হাতের সঙ্গে লেগে আমার হাতেও আমি সামান্য ব্যথা পাই। কারণ আমি চাচ্ছিলাম না সেই অবস্থায় কেউ আমার ভিডিও করুক। আর আমার হাজব্যান্ডের সঙ্গে যেসব ছেলে ছিল আমি তাদের কাউকে চিনতামও না।
এডিসি সানজিদা বলেন, হারুন স্যারকে যখন মারছিল। স্যার তাদের হাত থেকে বাঁচতে ভিতরে অবস্থান করে। স্যারকে বার বার বলছিল বাইরে বের হতে। স্যার তখন বলে আমি বের হলে তো আপনারা আমাকে মেরে ফেলবেন। পরে স্যার থানায় কল দেওয়ার ১০-১৫ মিনিট পর ফোর্স আসে। পরে তারা নিচে চলে যায়।
এদিকে হারুন অর রশিদের ওপর প্রথমে হামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ও ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। এ হামলার নেতৃত্বে ছিলেন রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আজিজুল হক।
মঙ্গলবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের করা এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, এ ঘটনার সূত্রপাত যে কারণে হয়েছে, যিনি সূত্রপাত করেছেন, তিনিও (রাষ্ট্রপতির এপিএস আজিজুল হক) একজন সরকারি কর্মকর্তা। উনি আমাদের পুলিশের ওপর হামলাটি করেছেন। তিনি তো ইচ্ছে করলে আমাদের (পুলিশ) ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারতেন, অবহিত করতে পারতেন। অথবা তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারতেন। সেটি না করে হাসপাতালের ভেতরে অসংখ্য মানুষের সামনে একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে ধাওয়া করা, তার চশমা ভেঙে ফেলা, তার ওপর আঘাত করা—এটা সঠিক করেছেন কি না, আমি জানি না। তবে এটা তদন্ত হওয়া উচিত।
ডিবি প্রধান মনে করেন, ঘটনার নেপথ্যের কারণ খুঁজে বের করা দরকার। ঘটনার সূত্রপাত বারডেম হাসপাতালে। সেখানে ঠিক কী ঘটেছিল তার তদন্ত হওয়া দরকার।