মন্ত্রীদের সাংগঠনিক কার্যক্রম খতিয়ে দেখছে আওয়ামী লীগ

মন্ত্রীদের সাংগঠনিক কার্যক্রম খতিয়ে দেখছে আওয়ামী লীগ

দলীয় এমপিদের পর এবার বিতর্কিত মন্ত্রীদের সাংগঠনিক কার্যক্রমের ময়নাতদন্ত করছে আওয়ামী লীগ। যে সকল মন্ত্রী তাদের নির্বাচনী এলাকায় সাংগঠনিক বলয়ের বাইরে নিজস্ব বলয় তৈরি করেছেন তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন আওয়ামী লীগের কয়েকজন প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাংগঠনিক সম্পাদক। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে এই তদন্ত চলছে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য দলীয় মনোনয়ন এবার আগেভাগেই চূড়ান্ত করতে চায় দলটি। এরই অংশ হিসেবে বিতর্কিত মন্ত্রী ও এমপিদের তালিকা করা হচ্ছে। সাংগঠনিক আমলনামা বিচার-বিশ্লেষণ করে আগামী নির্বাচনে তাদেরকে মনোনয়ন দেয়া হবে কি হবে না সে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আওয়ামী লীগের কয়েকজন সিনিয়র নেতাবলেন, মূলত তৃণমূল নেতাকর্মীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অনেক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক কার্যক্রম না মানার অভিযোগ করা হয়েছে। তৃৃণমূলের অনেক নেতাকর্মী দলীয় সভাপতির বরাবর বেশ কয়েক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। বর্তমানে সরকারে রয়েছেন ২৫ জন মন্ত্রী, ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী ও ৩ জন উপ-মন্ত্রী। ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে বেনামে খামবন্দি আকারে সম্প্রতি বেশ কয়েকজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে বলে জানান কার্যালয় সংশ্লিষ্টরা।

 

তারা বলেন, প্রতিদিন অসংখ্য চিঠি আসে দলীয় সভাপতির কার্যালয়ে। আমরা প্রায় সব চিঠিই গুরুত্বসহকারে দেখি। সম্প্রতি কয়েকটি চিঠি এসেছে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে। সেখানে মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে নিজস্ব বলয় তৈরির অভিযোগ করা হয়েছে। পাশাপাশি সাংগঠনিক কার্যক্রম ইচ্ছামতো চালানো হচ্ছে বলে দাবি করা হয়েছে। কোনো কোনো চিঠিতে দলের একনিষ্ঠ, ত্যাগী ও পোড় খাওয়া নেতাকর্মীদের সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে দূরে রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। আমরা এসব চিঠি দলের সাংগঠনিক সম্পাদকদের কাছে দিয়েছি। তারা বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছেন বলে শুনেছি। এরকমই একটি চিঠি দলীয় সভাপতির কাছে দিয়েছেন দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ছোট এক জেলার নেতারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পদে থাকা ওই জেলার এক আওয়ামী লীগ নেতা মানবজমিনকে বলেন, গুরুতপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। ৭৩ সদস্যর কমিটিতে পরিবারের প্রায় সবাইকে বিভিন্ন পদ দিয়েছেন। বাইরের কাউকে ওই মন্ত্রী জেলা আওয়ামী লীগের পদে দিতে চাননি।
মাত্র ২০ জন নেতা রয়েছেন মন্ত্রীর আত্মীয়ের বাইরে। তারা সবাই এক। ওই মন্ত্রী তাদের আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে দলীয় কর্মসূচি পালন করে থাকেন। আমরা যে ২০ জন আছি তারা আলাদাভাবে কর্মসূচি পালন করতে বাধ্য হই। তিনি জানান, ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগের এক নেতাকে জেলা আওয়ামী লীগ পদে বসাতে চাইলে মন্ত্রী তিনবার তার নাম কেটে দেন। শেষপর্যন্ত কেন্দ্রের হস্তক্ষেপে তিনি জেলা আওয়ামী লীগে পদ পান। এভাবে বলয় তৈরি করে জেলার রাজনীতিকে কোনঠাসা করে ফেলা হয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে দলীয় সভাপতির হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়েছে। এসব প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী মানবজমিনকে বলেন, যারা সাংগঠনিকভাবে দলে বিভেদ তৈরি করতে চায় তাদের বিষয়ে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন। শেষ কয়েকটি মিটিংয়ে তিনি তাদের বিষয়ে কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হবে তাও জানিয়েছেন।

 

আমরা নেত্রীর নির্দেশনা মেনে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাচ্ছি। নিয়ম ও বিধি অনুযায়ী এ ধরনের নেতাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। দলটির নেতারা জানান, দেশের বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকা থেকে তৃণমূল নেতাকর্মীদের দেয়া অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিতর্কিত মন্ত্রীদের তালিকা তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এক্ষেত্রে সাংগঠনিক নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিতর্কিত মন্ত্রী হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতা মানবজমিনকে বলেন, আগামী নির্বাচনকে আওয়ামী লীগ চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। যার জনপ্রিয়তা রয়েছে কেবল তাকেই দলীয় মনোনয়ন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এজন্য বিতর্কিত নেতাদের বাদ দেয়ার ঘোষণা দলীয় সভাপতি আগেই দিয়েছেন। এমনকি তাদেরকে দল থেকে বহিষ্কারেরও ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে দশম জাতীয় সংসদের ৫৬ জন সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী দলের মনোনয়ন পাননি। এর আগে ২০১৪ সালের নির্বাচনে ৪৯ জন সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি।

রাজনীতি শীর্ষ সংবাদ