আসছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র তিন মাস বাকি। এর মধ্যেই দেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। থমকে গেছে ভোটের প্রচারণা রাজনীতি। যেখানে দেশে রাজনৈতিক দলগুলো এত দিনে নির্বাচন নিয়ে প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত থাকার কথা থাকলেও তারা আছে স্নায়ুচাপে। এর পাশাপাশি নির্বাচনে সহায়তাকারী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও আছেন চাপা আতঙ্কে। সামনে কী হবে! নির্বাচনের পরিবেশ কেমন হবে! আবার কার নাম ভিসা নিষেধাজ্ঞার তালিকায় আছে তা নিয়ে খোদ প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে চলছে নানান গুঞ্জন। বিশেষ করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব-অতিরিক্ত সচিবদের সন্তান যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার জন্য গেছেন তারাও আছেন বিশেষ শঙ্কার মধ্যে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার আওতায় বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য, ক্ষমতাসীন ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা আছেন বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়াও ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরাও এর অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার ক্ষেত্রে আরও যারা দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত হবে, ভবিষ্যতে তাদের বিরুদ্ধেও ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ হতে পারে। এই তালিকায় বাংলাদেশের বর্তমান ও সাবেক সরকারি কর্মকর্তা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য, ক্ষমতাসীন ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা থাকবেন।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার সাথে এ প্রতিবেদকের কথা হলে তিনি জানান, ভাই আমরা আদার ব্যাপারী, চুনোপুটি আমাদের আর কী হবে। যাদের সন্তানরা বাইরে পড়াশোনা করছে তাদের টেনশন থাকতে পারে। আমি যদি নির্বাচনে দায়িত্ব পাই সঠিক দায়িত্বটাই পালন করব। তিনি বলেন, আপনাদের মতো আমরাও বিষয়টি নিয়ে ভাবছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কোনো সংশয় নেই। আমরা তো ক্রিয়ার মধ্যেই আছি। নির্দেশ আসবে কাজ করে যাব। এ কর্মকর্তা মজা করে বলেন, আপনারাও (মিডিয়া) তো ভিসানীতির আওতায় আছেন। আরো কয়েক জনের সঙ্গে ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কথা হলে তাদের ভেতরে চাপা আতঙ্কের বিষয় উল্লেখ করেন।
এক অতিরিক্ত সচিব বলেন, সবাই তো নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবেন না। তবে বিশেষ নির্দেশনা দেবেন এমন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা থাকবে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে। প্রত্যেকের মধ্যেই কিন্তু একটা স্নায়ুচাপ কাজ করছে বলে জানান এ কর্মকর্তা। তিনি আরো বলেন, একটি উন্নত রাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ আমাদের দেশের কোনো পক্ষের জন্য সুখকর হবে না।
ভিসা নিষেধাজ্ঞার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গবেষক ও সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার বলেন, ‘এটি আমাদের ব্যর্থতা। আমরা সব কিছু ঠিকমতো চালাতে পারতাম বা চলতে পারতাম তাহলে তো আমেরিকার আমাদের ওপর মোড়লগিরি করার কথা না। যেকোনো মোড়লগিরি কোনো দেশের জন্য, জাতির জন্য অসম্মানজনক। এ থেকে উত্তরণে সাবেক এ সচিব বলেন, আমাদের ঐক্য, আলোচনা এবং আমাদের বসা দরকার। জাতীয় নির্বাচনটা আমাদের স্বার্থে সুষ্ঠু হওয়া দরকার এবং রাজনৈতিক সমঝোতা হওয়া এখন বেশি জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
আবদুল আউয়াল আরো বলেন, আমেরিকা কি করল না করল এটি আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ না। আমার কাছে গুরুত্ব হচ্ছে আমরা ভালো থাকা। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যদি সম্প্রীতি না থাকে, শ্রদ্ধা না থাকে তবে আমরা ভালো থাকব না। প্রশাসনে কর্মরত অনেকের সন্তান আমেরিকায় পড়াশোনা করছে তাদের বিষয়ে সাবেক সচিব বলেন, এখানে বড় করে কিছু দেখি না। যাদের সন্তান লেখাপড়া করে কোনো সমস্যা হলে তারা অন্য দেশে চলে যাবে বা দেশে চলে আসবে। আমেরিকাতে তো আইনের শাসন আছে, এখানে তেমন কিছু হবে না।
সর্বশেষে তিনি বলেন, একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে আমরা ছোট হলাম। অপমাণিত হলাম। এটি থেকে মুক্তির পথ হলো বড় রাজনৈতিক দলগুলোর আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় আসা। নির্বাচনটা সুষ্ঠুভাবে হওয়া— এটি হলো সমাধান।